নিজস্ব প্রতিবেদক : ১৬০ কিলোমিটার কপোতাক্ষ নদ খননে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন আন্দোলনকারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সোমবার যশোর শহরের অস্থায়ী কার্যলয়ে সংবাদ সম্মেলনে কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন কমিটি এ অভিযোগ করে। তিন দফা দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কপোতাক্ষ খননে সরকারের টাকার অপচয় করা হচ্ছে। আর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জনগণকে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, কপোতাক্ষ নদ খনন এখন ২য় পর্যায়ের প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রথম পর্যায়ে সাতক্ষীরার পাখিমারা বিলে টিআরএম ও খনন কর্মসূচি আশাানুরূপভাবে নদের প্রবাহ ও তালার নিম্নাংশের গভীরতা বৃদ্ধি পায়। নদীতে ট্রলার চলাচল শুরু হয়। যশোর অংশ জলাবদ্ধ মুক্ত হয়। জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে। কিন্তু সরকার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বহীনতার কারণে পাখিমারা বিলে টিআরএম প্রকল্প অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। তালা থেকে মোহনা পর্যন্ত নদী ভরাট হয়ে পূর্বাবস্থায় ফিরে যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন শুরু থেকে দাবি করে আসছে উজানে নদী সংযোগ ও মোহনায় পলিমুক্ত রাখার সাথে নদীর প্রবাহ নির্ভর করে, সে কারণে উজানের নদী সংযোগ দিতে হবে এবং ভাটিতে টিআরএম চালু রেখে নদের নাব্যতা রক্ষা করতে হবে। ডেল্টা প্লান ২১০০ পরিকল্পনায় তালার নিম্নাংশে পর্যায়ক্রমে টিআরএম করার প্রস্তাব করা হলেও দীর্ঘস্থায়ী লুটপাট অব্যাহত রাখতে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় যোগসাজশে প্রকল্পের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এক্ষেত্রে সরকার নীরব। সরকারের গৃহীত নীতির বিরুদ্ধেই সরকারি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাচ্ছে। সরকারের এই দ্বিচারিতায় দুর্ভোগের শিকার আমরা এবং রাষ্ট্রীয় ৫শ কোটি টাকা লোপাট নিশ্চিত করা হচ্ছে। এই দ্বিচারিতার আমরা প্রতিবাদ করে আসলেও সরকার কর্ণপাত করছে না। সংকট আরও গভীর হচ্ছে।
বাঁচাও আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ে এই কাজের অসঙ্গতি, প্রকল্প সাইন বোর্ড প্রদানে তালবাহানা, খননের পরিমাণ স্থানীয় জনগণকে অবহিত না করা, কাজের তদারকি ও সহযোগিতায় জনগণকে সংশ্লিষ্ট না করা এমনকি স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে উপেক্ষা করা সংক্রান্ত অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড তা কর্ণপাত করছে না।
খননের দৈর্ঘ্য প্রস্থের মাপের বিষয় জনগণ ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির অগোচরে রাখা হচ্ছে। নদের কাটা মাটি নদীর পাড়ে ফেলা হচ্ছে না, ফেলা হচ্ছে নদী গর্ভেই। যা বর্ষায় নদীকে আবার ভরাট করে ফেলবে। ফলে নদী খালে রূপান্তরিত হচ্ছে। সরকার গৃহিত নদী তট আইন লঙ্ঘন করে সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করা হচ্ছে। অবৈধ দখলদারদ উচ্ছেদের বিপরীতে তাদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা হচ্ছে। খনন মাপ অনুযায়ী হচ্ছে না- তা জনগণ সাদা চোখে অনুভব করতে পারছে। উজানে মাথাভাঙ্গা ভৈরব নদী সংযোগের গৃহিত প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, প্রস্তাবিত উজানে নদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পাখিমারা বিলে টিআরএম চালু করতে হবে। নদী তট আইন কার্যকর করে নদী তটের বাইরে খননের মাটি ফেলতে হবে, সে মাটি চাষের জমিতে ব্যবহারের সুযোগ দিতে হবে। এবং প্রকল্প এলাকায় কাজের তদারকির জন্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, আন্দোলনকারী সংস্থা ও স্থানীয় জনগণকে সংশ্লিষ্ট করে কমিটি করতে হবে।
যদি তা না করা হয় তাহলে সরকারের বরাদ্দকৃত টাকা অপচয় লুটপাট শুধু নয়- নদীকে প্রকারান্তরে হত্যা করা হবে। একই সাথে এসব লটপাট বন্ধের দাবিতে আগামী ২০ নভেম্বর আমরা সরকারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করব।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন, কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন ঝিকরগাছা কমিটির আহ্বায়ক আবদুর রহিম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা ইকবাল কবীর জাহিদ, অ্যাড. আবু বকর সিদ্দীকী, জিল্লুর রহমান ভিটু, তসলিমুর রহমান, সুভাশ চন্দ্র প্রমুখ।