জাহিদ হাসান
কপোতাক্ষ নদ পাড়েই ছোট্ট-বড় হরেক রকমের গাছ। এসব গাছের মধ্যে শতবর্ষী একটি রেইনট্রি গাছে ডালে ডালে; পাতার ফাঁকে ঝুলে আছে শত শত বাদুড়। দেখলে মনে হবে এ যেন বাদুড়ের সাম্রাজ্য। অসংখ্য বাদুড় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চিঁ-চিঁ শব্দে মুখরিত করে রাখে। যশোরের ঝিকরগাছা পারবাজার গরুর হাট প্রাঙ্গনে কপোতাক্ষ নদ তীরে এ দৃশ্য প্রতিদিনের। বাদুড়ের বসবাসের কারণে এই এলাকার নামকরণ হয়েছে বাদুড়তলা। বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীটি দেখতে দূর-দুরন্ত থেকে সব বয়সের মানুষ ছুটে আসেন। স্থানীয়দের দাবি, বিলুপ্ত প্রায় এ প্রাণী এখনই সংরক্ষণ করা না গেলে হয়ত হারিয়ে যাবে। তবে বাদুড়ের নিরাপদ আবাসস্থলগুলো ধরে রাখতে উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে।
উঁচু গাছের মগডালে বাদুড়ের ঝুলে থাকা একসময় ছিল গ্রামগঞ্জের স্বাভাবিক দৃশ্য। তবে এখন গ্রাম-গঞ্জে ঘুরলেও দেখা মেলে না উড়তে জানা একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণিটির। বসবাসের জন্য উপযুক্ত গাছপালা না থাকায় এবং খাবারের সংকটের কারণে বাদুড় আজ বিলুপ্তপ্রায়। পাখির মতো উড়লেও আকৃতির কারণে বাদুড়ের কদর নেই। নানা কল্প-কাহিনীর আতঙ্ক সৃষ্টিকারী প্রাণী হিসেবে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও ঝিকরগাছা পৌর শহরের গরুর হাট প্রাঙ্গনে একটি গাছে নির্ভয়ে আবাস গড়ে তুলেছে এসব বাদুড়। নদ তীরবর্তী শতবর্ষী গাছে বাসা বেঁধেছে প্রায় শত শত বাদুর। রেইনট্রি গাছের শাখা-প্রশাখায় হুকের মতো পা দু’টো আটকিয়ে নিস্তব্ধতায় ঝুলছে অসংখ্য বাদুড়। রাতের অক্লান্ত শ্রমে যেন তারা শুধু একটু প্রশান্তির ঘুম খুঁজছে। দিনের বেলা স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলো চোখে দেখতে না পারায় গাছের ডালে ঝুলে থাকে। আর এ ডাল থেকে সে ডালে ছুটে বেড়ায়। সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে বাদুড়গুলো খাবারের জন্য ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে যায় দূর-দুরন্তে। খাবার খেয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই ফিরে আসে নীড়ে।
ঝিকরগাছা মহিলা কলেজের উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ ইলিয়াস উদ্দিন জানান, এখন যে রেইনট্টি গাছে বাদুড়গুলোর আবাসস্থল হয়েছে; এর আগে একই জায়গায় বিশাল বড় তেঁতুল গাছ ছিল। সেখানে এসব প্রাণীগুলোর আবাসস্থল ছিল। মূলত গাছপালা আগের মতো না থাকাতে; এই বাদুড়গুলো বিলুপ্ত হচ্ছে। এখন অল্প সংখ্যক বাদুড় রয়েছে। তবে যা রয়েছে গাছের পাতার চেয়ে বাদুড় বেশি! স্থানীয় সেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সেবা’র সভাপতি আশরাফুজ্জামান বাবু বলেন, বাদুড় বিলুপ্ত প্রায়। তবে এটা গর্বের বিষয়; সেই বাদুড় ঝিকরগাছাতে প্রচুর পরিমাণ রয়েছে। আমরা আনন্দিত এই বাদুড় তলাতে প্রচার বাদুড়ের ডাক শোনা যায়। পূর্ব পুরুষদের মুখ থেকে শুনে আসছি বাদুড়তলার গল্প। আমরা আশা করবো, বন্যপ্রাণী অধিদপ্তর এই বাদুড়গুলোকে সংরক্ষণে ভূমিকা রাখবে। স্থানীয় বয়োজ্যেষ্ঠ নজরুর মুন্সী বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাদুড়গুলো চিঁ চিঁ শব্দে মুখরিত করে রাখে গাছতলাতে। এ প্রাণীটি দেখতে দূর-দুরন্ত থেকে সব বয়সের মানুষ আসেন। আব্দুল খালেক নামে এক দর্শক জানান, ‘গরু হাটে গরু কিনতে এসেছি। এই হাটে আসলেই বাদুড় দেখি। আমার জীবনে এতোগুলো বাদুড় একসাথে কখনো দেখনি। হুকের মতো একসাথে ঝুলে থাকা বাদুড় দেখতে অনেক সুন্দর লাগে।
ঝিকরগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম বলেন, শতবর্ষী গাছে শতশত বাদুড় ঝুলে রয়েছে। যেন মনে হচ্ছে; পাতার চেয়ে বাদুড় বেশি। আগে অনেকেই বাদুড় ধরতো প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাতে এখন আর কেউ বাদুড় ধরে না। বাদুড়ের নিরাপদ আবাসস্থলগুলো ধরে রাখতে উপজেলা প্রশাসন কাজ করছে বলে জানান তিনি। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনার বিভাগীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছে, ডানা বিশিষ্ট উড়তে সক্ষম একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণী বাদুড়। খুলনা ও যশোর অঞ্চলে ১২ প্রজাতির বাদুড় রয়েছে।