নির্বাচন করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি
বলয়মুক্ত সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাত বছর ধরে ঝুলে আছে যশোর চেম্বারের নির্বাচন। ব্যবসায়ীদের সবচেয়ে বড় এই সংগঠনটি চালাচ্ছে প্রশাসন। ব্যবসায়ীদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা বলার মত যশোরে তেমন বড় কোন ফোরাম নেই। যে কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্থবিরতা বিরাজ করছে। এতে ব্যবসায়িকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে যশোর চেম্বার অব কমার্সকে কার্যকর করার বারবার দাবি করে আসছেন তারা।
যশোর চেম্বার অব কমার্স সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ হলে যশোরের একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (সাবিক) চেম্বারের প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই বছর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত তিনটি প্যানেল ঘোষণা করে ব্যবসায়ীরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নেন। এ সময় বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের চারজনকে পুলিশ নাশকতা পরিকল্পনার একটি মামলায় গ্রেপ্তার করে। তারপরও বিএনপি সমর্থিত প্যানেল নির্বাচনের মাঠে ছিলো। কিন্তু একজন ব্যবসায়ী ভোটার তালিকা থেকে নিজের নাম বাদ পড়েছে মর্মে অভিযোগ তুলে নির্বাচন স্থগিত চেয়ে আদালতে মামলা করেন। ওই মামলায় আদালত নির্বাচন স্থগিত করার ঘোষণা দেন। পরে ওই ব্যবসায়ীর নাম সংযুক্ত হলে মামলা নিষ্পত্তি হয়। এরপর ২০১৫ সালে আবার তফসিল ঘোষণা করা হয়। এ সময় নতুন অন্তর্র্ভূক্ত ভোটারের কয়েকজনের টিন নম্বর ভুয়া-এমন অভিযোগ তুলে যশোর চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি অভিযোগ পত্র পাঠান। ওই অভিযোগ পত্রের ভিত্তিতে নির্বাচন স্থগিত করে মন্ত্রণালয়। সেই থেকে ৭ বছর নির্বাচনবিহীন অবস্থায় রয়েছে যশোর চেম্বার। একই সাথে রয়েছে ক্ষমতাসীনদের গ্রপিং রাজনীতি। এক পক্ষ নির্বাচন করতে ইচ্ছুক হলে অন্য পক্ষ বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
এ ব্যাপারে যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক জৈষ্ঠ্য সহসভাপতি সৈয়দ সাজ্জাদুল করীম বলেন, ‘যশোরের আটটি উপজেলার এক হাজার ৬৫৯ জন ব্যবসায়ী এ চেম্বারের সদস্য। কিন্তু চেম্বার কার্যকর নেই। ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি চালাচ্ছেন জেলা প্রশাসন। এটা আমাদের জন্যে চরম দুর্ভাগ্যের বিষয়। প্রতিনিয়ত ব্যবসায়ীদের নানা ধরণের সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। কিন্তু কথা বলার মত কোন বড় ফোরাম নেই। ফলে যশোরে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে না বরং স্থবিরতা বিরাজ করছে।’
ব্যবসায়ীরা বলেন, গত কয়েক বছর ধরে ঈদকে সামনে রেখে যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র (নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু) সড়কে মাসব্যাপী আনন্দ মেলার নামে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের জায়গায় ঈদের আগে রমজান মাসেও মেলা চলায় ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। এক মাস মেলার অনুমতি নিয়ে করা হয়েছে প্রায় সারা বছর। ব্যবসায়ীদের আপত্তি সত্ত্বেও মেলা করা হয়। মেলা বন্ধ করার দাবিতে একাধিক স্মারকলিপি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করা হয়। সর্বশেষ গত একমাস আগে মেলা শেষ হয়েছে। আসছে ঈদে আবারও মেলার আয়োজন করা হলে ব্যবসায়ীরা পথে বসার উপক্রম হবে।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক নির্বাহী সদস্য হুমায়ন কবীর কবু জানান, দীর্ঘদিন চেম্বার কার্যকর না থাকায় সাধারণ ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। শিগগিরই চেম্বারের নির্বাচন হতে হবে বলায়মুক্ত সুষ্ঠু পরিবেশের মধ্যে। যাতে ভোটাররা তাদের ভোট নির্ভয়ে দিতে পারেন। আশা করছি সব জটিলতা কেটে গেছে। শিগগিরই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, ব্যবসায়ীদের প্রাণের সংগঠন যশোর চেম্বার অব কমার্স। দীর্ঘ ৭ বছর নির্বাচন না হওয়ায় প্রকৃত ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। আশা করছি জেলা প্রশাসন খুব শিগগরিই সুষ্ঠু পরিবেশের মধ্যে নির্বাচনের আয়োজন করবেন। যেখানে সব সদস্য ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
ব্যবসায়ীরা এখন আর চেম্বার ভবনের দিকে যান না। ইতিমধ্যে প্রশাসক হিসাবে চারজন এডিসি (সার্বিক) দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে এডিসি (সার্বিক) রফিকুল হাসান চেম্বারের প্রশাসকের দায়িত্বে আছেন। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, এ চেম্বারের প্রশাসকের আন্তরিকতার অভাবে এতোদিন নির্বাচন হয়নি।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও যশোর চেম্বার অব কমার্সের প্রশাসক রফিকুল হাসান বলেন, ‘যশোর চেম্বারের নির্বাচন করার জন্যে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে।