লাইনে দাঁড়িয়েও ফিরে যেতে হচ্ছে
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঈদের বন্ধের পর গতকাল রোববার শুরু হয়েছে ওএমএসের (খোলাবাজার) কার্যক্রম। যশোর পৌর এলাকায় চাল বরাদ্দ আবারও কমেছে। আগে ডিলাররা পেত ৯ টন, এখন পাবে ৬ টন। তবে আটার বরাদ্দ ঠিক রাখা হয়েছে। এতে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে ডিলারদের মধ্যে। তারা বলছেন, একেতো লাইনে মানুষের ভিড় বাড়ছে, অন্যদিকে বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। এতে আমাদের সাথে মানুষের মধ্যে বিবাদ দেখা দিচ্ছে। গতকাল বহু মানুষ চাল না পেয়ে ফিরে গেছেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৬ জুন থেকে ৮ জুলাই ঈদের বন্ধ ছিল ওএমএসের কার্যক্রম। গতকাল রোববার থেকে শুরু করা হয়েছে চাল ও আটা বিক্রি কার্যক্রম। যশোর পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে ১৪ জন ডিলারের মাধ্যমে সপ্তাহে ৫ দিন (সরকারি ছুটির দিন বাদে) ওএমএসের চাল ও আটা বিতরণ করা হয়। প্রতিজন ৩ কেজি চাল ও ৪ কেজি আটা সপ্তাহে একবার ক্রয়ের সুযোগ পাচ্ছেন। আগে ডিলারদের মধ্যে ৯ টন চাল বরাদ্দ দিলেও এবার বরাদ্দ পাবে ৬ টন চাল। একজন ডিলার পাবে ৪২৫ কেজি করে চাল ও আটা ৮৫৫ কেজি।
শহরের বেজপাড়ার রহিদ উদ্দিন বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে তার পরিবার এখন দিশেহারা। কিছু টাকা সাশ্রয় করতে ভর্তুকি মূল্যে চাল কিনতে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু সকাল ৮টার মধ্যে বলা হচ্ছে চাল শেষ। এখন দোকান থেকে চাল কিনে বাড়িতে যেতে হবে। এতে করে আমার উপর বেশ চাপ পড়বে।
সকাল ৮টা শহরের চারখাম্বার মোড়। সারিতে আছেন জানান দিতে কমপক্ষে শতাধিক নারী ইট পেতেছেন ফুটপাতে। আরও একশ জনের মতো পুরুষ সারিতে ঠাঁই দাঁড়িয়ে। তাদের অনেকেরই কাটেনি ঘুমের ঘোর। ঘুম তাড়াতে কেউ মেতেছেন গল্পে, কেউ হাঁটছেন এদিক-সেদিক। বাজারে নিত্য পণ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে সরকারের ওএমএস’র ডিলারদের কাছে নিম্ন আয়ের মানুষের ভিড় বাড়ছে। কিন্তু বরাদ্দ কমে যাওয়ার কারণে তারা চাল পাচ্ছেনা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ।
খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা সরকার স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য ওএমএসের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে চাল ও আটা বিক্রি করছে। যশোর পৌর এলাকায় ১৪ জন ডিলারের মাধ্যমে এসব চাল-আটা বিতরণ করা হচ্ছে। প্রতিজন সপ্তাহে একবার করে চাল-আটা ক্রয়ের সযোগ পাচ্ছে। শুক্রবার ও শনিবার (সরকারি ছুটির দিন বন্ধ) বাদে সপ্তাহে ৫দিন ডিলাররা চাল-আটা বিক্রি করে থাকেন। চাল ৩০ টাকা ও আটা ২৪ টাকা কেজি দ্বরে ক্রেতারা কেনার সুযোগ পান।
ওএমএস’র পণ্য কেনার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধা খোদেজা বেগম বলেন, স্বামী মারা গেছেন অনেক আগেই। ছেলে সংসারে থাকি। তার আয় স্বল্প, একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মচারি হিসেবে কর্মরত। যে আয় করে তা দিয়ে সংসার চলেনা। একারণে অল্প দামে চাল কেনার জন্য লাইনে রয়েছি। কিন্তু বলছে আগামীকাল (আজ সোমবার) আসেন। চাল ফুরিয়ে গেছে।
পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ওএমএস ডিলার গোলাম মোস্তফা জানান, আগের সপ্তাহে ৫ দিন আমরা চাল-আটা বিতরণ করতাম ১৭১ জনের মধ্যে। কিন্তু লাইনে দাঁড়ান প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩শ মানুষ। এবার চালের বরাদ্দ কমেছে। প্রতি ডিলার ৪২৫ কেজি করে চাল ও আটা ৮৫৫ কেজি বরাদ্দ পাচ্ছে। যে চালের বরাদ্দ তাতে ৮০ জনের মতো দেয়া সম্ভব হয়। পরে আর থাকে না। এতে করে মানুষের সাথে আমাদের কথাকাটাকাটি হচ্ছে।
যাদেরকে দেয়া সম্ভব হয় না তাদেরকে পরের দিন অগ্রাধিকার দেয়া হয়। এজন্য আমরা সরকারের কাছে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য বারবার বলছি। কমপক্ষে প্রতিদিন ৩শ মানুষের জন্য বরাদ্দ বাড়ালে আমাদের ঝামেলা পোহাতে হয় না।
ঝুমঝুমপুরের ওএমএস’র ডিলার নতাই চন্দ্র সাহা বলেন, প্রতিদিন আমাদের লাইনে সাড়ে ৩শ থেকে ৪শ মানুষ দাঁড়ায়। এরমধ্যে আমরা ১৭১ জনকে দিতে পারি। এখন চালের বরাদ্দ কমে যাবার কারণে লাইনে থাকা মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
বাজারে প্রতি কেজি মোটা চালের দাম ৫০ থেকে ৫২ টাকা এবং আটা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। সেই হিসাবে একজন ক্রেতার ওএমএসের চাল-আটায় সাশ্রয় হয় গড়ে ৩০০ টাকা। এই সাশ্রয়ের জন্য তাদের লাইনে দাঁড়াতে হয় সেই কাকডাকা ভোরে। অপেক্ষায় থাকতে হয় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা।
শহরের বকচর এলাকার রিনা বেগম ওএমএসের পণ্য কিনতে এসে বলেন, বাসাবাড়িতে কাজ করি। দুই মেয়ে পড়াশোনা করে। ভাড়া থাকি, স্বামী গাড়ি চালিয়ে ১০-১২ হাজার টাকা পান। এটা দিয়ে লেখাপড়া আর সংসারের পুরা মাসের খরচ হয় না। আসতে অস্বস্তি লাগে, তাও আসি।
এব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যা নন্দ কুন্ডু জানান, ওএমএস’র চাল-আটার ১৪ জন ডিলারকে আমরা বরাদ্দ দিয়ে থাকি। আগে একজন ডিলার ৯ টন চাল পেলেও এবার দেয়া হচ্ছে ৬ টন। সরকার কমালে আমরা কি করব। তবে আটার বরাদ্দ ঠিক রাখা হয়েছে।