দুর্ঘটনার শঙ্কা অভিভাবক মহলে
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ট্রাফিক চৌকি বসানোর দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক: উঠে গেছে বিধিনিষেধ। করোনা ভীতিও আগের মতো নেই। খুলে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতিতে শিক্ষাঙ্গনে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। বিশেষ করে স্কুলে ফিরতে পেরে উচ্ছ্বসিত কোমলমতি শিশুরা। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যেও। তবে যশোরে এ সবে সমস্যা সৃষ্টি করছে ভয়াবহ যানজট। যা অভিভাবক মহলকে ফেলেছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠায়। দুর্ঘটনার শঙ্কায় শঙ্কিত অনেকের দাবি স্কুলসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন সড়কগুলোতে বসানো হোক ট্রাফিক চৌকি।
রোববার তখন বেলা সোয়া ৯টা। যশোর সরকারি ইন্সটিটিউট স্কুলের প্রবেশমুখ এমএম আলী সড়কে দেখা যায় টানা যানজট। সময় মতো স্কুলে হাজিরার তাড়া থাকে। যে কারণে শিশুর হাত ধরে ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হতে দেখা যায় অভিভাবকদের।
সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, এমএসটিপি, জিলা স্কুল ও পুলিশ লাইন স্কুল সংলগ্ন সড়কগুলোতেও দেখা যায় একই চিত্র। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে দুর্ঘটনা এড়াতে নেই কোনো ট্রাফিক ব্যবস্থা।
দুপুর তখন সোয়া ১২টা। ইন্সটিটিউট স্কুল সংলগ্ন এমএম আলী সড়কে দেখা যায় সেই সকালের মতোই চিত্র। সারি সারি রিকশা, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, প্রাইভেট ও মাইক্রোসহ ছোট-বড় যানবাহনের দীর্ঘ লাইন। এ সময় মর্নিং শিফটের শিশুদের হাত ধরে রাস্তা পার হওয়ার অপেক্ষা করছিলেন অনেক অভিভাবক। অন্যেিদক ডে শিফটের শিশুদের সময় মতো স্কুলে পৌঁছে দিতে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে দেখা যায় অভিভাবকদের।
এ সময় মুক্তি নন্দী নামের এক অভিভাবক জানান, সকালেও ঝুঁকি নিয়ে মেয়েকে স্কুলে পৌঁছেছি। এখন ছুটির পরও দেখছি সড়কে পা ফেলার জো নেই। তিনি বলেন, করোনা ভীতি কাটিয়ে উঠলেও এখন ভুগছি সড়ক দুর্ঘটনার শঙ্কায়। তিনি বলেন, স্কুল শুরুর আগে ও ছুটির পরে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ভাড়ার আশায় ইজিবাইক ও রিকশা চালকরা স্কুলের প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে থেকে যানজট বাড়িয়ে তুলছে।
অনুরূপ আশঙ্কা প্রকাশ করে দ্রুত ট্রাফিক চৌকি বসানোর দাবি করেন শিশু শিক্ষার্থী জান্নাতুলের পিতা নাজমুল হাসান পিকুল। তিনি বলেন, এতো যানজট যশোরে আগে কখনো দেখিনি। ছুটির পর টানা ৩৭ মিনিট বাচ্চার হাত ধরে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। একই দাবি করেন নুসরাত জাহান, খবির উদ্দিন, রাহেলা বেগম, নমিতা মন্ডল প্রমুখ।
সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুরূপ চিত্র দেখা যায় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে। স্কুলটির দুপাশের সড়কই ছিল যানবাহনে ভর্তি। পায়ে হেঁটে রাস্তা পার হতে অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয়েছে অভিভাবকদের।
রীতা নামে এক শিশু শিক্ষার্থীর মা বলেন, মেয়েকে পায়ে হেঁটে আনা-নেয়া করি। কিন্তু সড়কে এত যানজট হচ্ছে তাতে টাইম কভার করা যাচ্ছে না। যানজটের কারণে বাচ্চাকে সময় মতো স্কুলে পৌঁছানো ও ছুটির পর বাড়ি আনতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় রাস্তায় কেটে যাচ্ছে। এর ফলে তার বেসরকারি সংস্থার চাকরিতে সমস্যা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ কোন অজুহাত শুনতে চান না। তারা চান সঠিক সময়ে হাজিরা এবং পুরো সময়ের কাজ কিন্তু বাচ্চাকে দুর্ঘটনার ঝুঁকিতে ফেলে তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে ঠিকঠাক কাজ করতে পারছেন না। একই অভিযোগ করেন আরও অনেকে। সীমিত আয়ের এসব মানুষ পায়ে হেঁটেই বাচ্চাদের স্কুলে আনা-নেয়ার পাশাপাশি ছোটখাটো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে সংসার নির্বাহ করেন।
আনজুয়ারা নামে তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জানায়, এবার নতুন বইয়ের ঘ্রাণ ঠিকমতো নিতে পারিনি। করোনা ভীতিতে ছিলাম। স্কুলও বন্ধ ছিল। মাঝে কিছুদিন স্কুল খুলে দিলেও সপ্তাহে দু’দিন ক্লাস হয়েছে। স্কুলে ফিরতে পারা এই শিশুটিতে উচ্ছ্বসিত দেখা যায়। শিশুটির মা নাম প্রকাশে রাজি হননি। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার শঙ্কা কাটছে না। এখন বাচ্চাকে স্কুলে আনা-নেয়া করতে ছোট্ট চাকরিটি ছেড়ে দিতে হবে। এই যানজটের মধ্যে শিশুকে একা ফেলে চিন্তামুক্ত থেকে কাজ করা যায় না। বিষয়টিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।
প্রায় দেড় মাস বন্ধ থাকার পর সারাদেশের মতো যশোরের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোও খুলেছে। প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে কোমলমতি শিশুরা। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে ক্লাসে ফিরেছেন মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্লাস হবে প্রতিদিন (সপ্তাহে ৬ দিন)। তবে প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধই থাকছে। যশোর সরকারি ইন্সটিটিউট স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জানান, শিশু শ্রেণির ক্লাস শুরু হবে চলতি মাসের ২০ তারিখ থেকে।
যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার অহিদুল আলম জানান, প্রায় দেড় মাস পর স্কুল খুলে দিয়েছে সরকার। শিক্ষা-কর্মকর্তারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন। এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, স্কুল শুরু ও ছুটির পর সড়কে যানজট হচ্ছে। এনিয়ে অভিভাবক মহলে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা দেখা দেয়া অস্বাভাবিক না। তবে প্রশাসন নিশ্চয় ব্যবস্থা নেবে-এমন প্রত্যাশা এই শিক্ষা কর্মকর্তার।