ক্রীড়া ডেস্ক: ইতিহাসে প্রথমবার শীতকালে আয়োজিত ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২। যার অন্যতম কারণ কাতারের ভয়াবহ তীব্র আবহাওয়া। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে জুন-জুলাইয়ে গরম থাকে ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে। তাই ফুটবলের মহাযজ্ঞ শুরু হয়েছে নভেম্বর-ডিসেম্বরে।
কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবলের খেলা হচ্ছে আট স্টেডিয়ামে। এর মধ্যে একটি স্টেডিয়ামের নাম সবার নজর কাড়ে। স্টেডিয়ামের নাম ‘নাইন সেভেন ফোর’। কিন্তু কেন এমন নাম দেওয়া হলো? এই স্টেডিয়াম নিয়ে ফুটবল দর্শকের যেন কৌতূহলের শেষ নেই।
নাইন সেভেন ফোর স্টেডিয়ামে সাতটা খেলা হবে। এরই মধ্যে এই মাঠে প্রথম ম্যাচও হয়ে গেছে গতকাল রাতে। মেক্সিকো-পোল্যান্ড মুখোমুখি হয়েছে ব্যতিক্রমী আদলে গড়ে তোলা স্টেডিয়ামে। এই স্টেডিয়ামে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ফ্রান্সের খেলা রয়েছে। বিশ্ব ফুটবলের আরেক তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগালের খেলাও রাখা হয়েছে নাইন সেভেন ফোর স্টেডিয়ামে।
আয়োজক কাতার সেভাবেই কাজ করছে। তারা দেখাতে চায়, পরিকল্পনায় কতটা এগিয়ে কাতার। এই স্টেডিয়ামটি তুলে বাংলাদেশে আনা হতে পারে। কেন স্টেডিয়ামের নাম করা হলো ‘নাইন সেভেন ফোর’? কারণ ব্যতিক্রমী এই স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে কনটেইনার দিয়ে। ৯৭৪টা কনটেইনার দিয়ে তৈরি করা হয়েছে স্টেডিয়ামটি। যেগুলো খেলা শেষে অনায়াসে খুলে ফেলা যাবে। তুলে নেওয়া যাবে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে।
বিশ্বকাপের স্মৃতিমাখা এই স্টেডিয়াম বাংলাদেশে আনার পরিকল্পনার কথা শোনা যাচ্ছে। এরই মধ্যে সেটা নিয়ে আলোচনাও হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমে এসেছে। কাতারে অবস্থান করছেন বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ এবং বাফুফের সহসভাপতি আতাউর রহমান মানিক। তারা এরই মধ্যে সেখানে একটি সভায় আলোচনা তুলেছেন। স্টেডিয়াম খুলে ফেলা হলে সেটি কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে, কী কাজে লাগানো হবে? বাংলাদেশ বলছে, তারা নাইন সেভেন ফোর স্টেডিয়ামটি বাংলাদেশে আনতে চায়। কিন্তু চাইলেই তো হবে না। কাতারে সংবাদমাধ্যমকে সোহাগ জানিয়েছেন, ঢাকায় ফিরে কাতার দূতাবাসের সঙ্গে কথা চালাচালি করবেন।
চলুন জেনে নেয়া যাক স্টেডিয়ামগুলোর দর্শকাসন সংখ্যা ও কোন স্টেডিয়ামে কটি ম্যাচ আয়োজিত হবে-
লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়াম: নবনির্মিত এই স্টেডিয়ামের দর্শকাসন সংখ্যা ৮০, হাজার। মোট ১০টি ম্যাচ আয়োজিত হবে লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে। এই স্টেডিয়ামে আয়োজিত হবে বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ ও সমাপনী অনুষ্ঠান।
আল খোরের আল বায়াত স্টেডিয়াম: স্টেডিয়ামের দর্শকাসন সংখ্যা ৬০ হাজার। এই স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ৯টি ম্যাচ আয়োজিত হবে। এই স্টেডিয়ামেই আয়োজিত উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে আয়োজক দেশ কাতার ও ইকুয়েডর।
আল ওয়াকরাহের আল জানুব স্টেডিয়াম: ২০১৯ সালে উদ্বোধন হওয়া এই স্টেডিয়ামের দর্শকাসন সংখ্যা ৪০ হাজার। মোট ৭টি ম্যাচ আয়োজিত হবে এই স্টেডিয়ামে।
আল রায়ানের আহমাদ বিন আলী স্টেডিয়াম: দর্শকাসন সংখ্যা ৪০ হাজার। এই স্টেডিয়ামে মোট ৭টি ম্যাচ আয়োজিত হবে।
খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম: ১৯৭৫ সালে উদ্বোধন হওয়া এই স্টেডিয়ামের দর্শকাসন সংখ্যা ৪০ হাজার। একসঙ্গে ৪০ হাজার দর্শক এই স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে ম্যাচ উপভোগ করতে পারবেন। এটিই কাতারের আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়াম।
আল রাইয়ানের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম: এই মাঠে একসঙ্গে ৪০ হাজার দর্শক খেলা দেখতে পারবেন। বিশ্বকাপের ৮টি ম্যাচ আয়োজিত হবে এই স্টেডিয়ামে।
দোহার স্টেডিয়াম ৯৭৪: ৪০ হাজার দর্শকাসন বিশিষ্ট রাস আবু আবুদ স্টেডিয়ামে, যার নাম বদলে রাখা হয়েছে স্টেডিয়াম ৯৭৪। ৭টি ম্যাচ আয়োজিত হবে এই স্টেডিয়ামে। অদ্ভুত এই নাম দেওয়ার কারণ কাতারের আন্তর্জাতিক ডায়াল কোড (+৯৭৪) অনুযায়ী। শুধু কি তাই, এই স্টেডিয়াম নির্মাণ করতে ঠিক ৯৭৪টি শিপিং কন্টেইনার ব্যবহার করা হয়েছে। জানা যায় বিশ্বকাপের পর এই স্টেডিয়াম ভেঙে ফেলা হবে। এবং কন্টেইনারগুলো কোন অনুন্নত দেশে দান করা হবে। যারা এটা ব্যবহার করে তাদের ফুটবল উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারবে।
দোহার আল থুমামা স্টেডিয়াম: টুপির মতো দেখতে এই স্টেডিয়ামের দর্শকাসন সংখ্যা ৪০ হাজার। ৮টি ম্যাচ আয়োজিত হবে এই স্টেডিয়ামে।
আরও পড়ুন: জীবন বাঁচাতে সৌদি ফুটবলারকে জার্মানি পাঠানো হলো