এম আর মাসুদ, ঝিকরগাছা
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আর মাত্র ১০ থেকে ১২ দিন পরই কৃষক বুকভরা আশা নিয়ে কাস্তে চালাবেন রোপা আমনের ধানখেতে। দিগন্তজোড়া মাঠে হিমেল হাওয়ায় দোল খাচ্ছে ধানের সোনালি শীষের সঙ্গে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। ঠিক এ সময় আবহাওয়াজনিত কারণে ‘কারেন্ট পোকার’ আক্রমণের খবরে কৃষক দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। এরই মধ্যে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এই পোকার আক্রমণের খবর পাওয়া গেছে।
দূর থেকে দেখলে মনে হচ্ছে ক্ষেতের ধান পেকে গেছে। ধানের শীষ ও গাছ সম্পূর্ণ সোনালী বর্ণ হয়ে গেছে। আক্রান্ত গাছে ধানের ভেতরে কোনো দানা নেই। শতচেষ্টা করেও প্রতিকার না মেলায় কৃষকের সর্বস্বান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে পরিস্থিতি সামাল দিতে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর আক্রান্ত এলাকায় যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণে তৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে।
রোববার সরেজমিন উপজেলার বল্লা মাঠে দেখা গেছে, কমবেশি প্রায় ধানক্ষেতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এ মাঠে মহসিন আলম মুক্তি, বাবলুর রহমান, সালাউদ্দীন লাল্টুর রোপা আমনের ধানখেত কারেন্ট পোকায় আক্রান্ত হয়েছে। মহসিন আলম মুক্তি বলেন, তিন বিঘা ১৫ কাটা জমিতে এবার আমন ধানের চাষ করে ছিলাম। আক্রান্ত ক্ষেতে প্রতিকার পেতে সিনজেনটা কোম্পানির ওষুধ ছিটানোর পরও কোনো ফল পাইনি। শেষে সময়ের আগেই ধান কেটেছি। তাতে কিছু ধান-বিচালি বাঁচাতে পেরেছি। তারপরও ধান চাষে ২৫ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। মহসিন আলম মুক্তি অভিযোগ করেন, আমাদের এলাকায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (ব্লক সুপারভাইজার) কে তা কোনো কৃষক জানেন না। কোনো দিন এলাকায় আসতেও দেখেনি।
একই গ্রামের বাবলুর রহমান বলেন, আবহাওয়া ঠিক থাকলে সপ্তাহ খানেক পরই খেতে কাঁচি চালাবো। এ অবস্থায় আশপাশে কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখে আগেভাগেই সিনজেনটা কোম্পানির প্রণাম, সেমকো কোম্পানির হপার শর্ট নামক ওষুধ ছিটায়েছি সব খেতে। তারপরও ক্ষেত আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত ১৮ কাটা জমির ধান কেটেছি। তাতে এক ছটাক ধান-বিচালি কিছুই হয়নি।
বল্লা বাজারের কীটনাশক বিক্রেতা আব্দুল মাজিদ বলেন, এবার আমন ধানে কারেন্ট পোকার আক্রমণ এত বেশি যে পর্যাপ্ত প্রতিষেধক ওষুধ সরবরাহ করে পারা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ বলেন, এটা আবহাওয়াজনিত পোকার আক্রমণ। কারেন্ট পোকার হাত থেকে রেহাই পেতে আগে থেকে আলোক ফাঁদের মাধ্যমে পোকা নির্ণয় করে ওষুধ ছিটানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আরও বলেন, ঝিকরগাছাতে রোপা আমনের ধানক্ষেতে আক্রান্তের হার এখনো সহনীয় পর্যায়ে আছে।