কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি: দেশকে স্বাধীন করতে নিজের জীবন বাজি রেখে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা। এছাড়া ৩০ লাখ শহীদ ও কয়েক লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে এদেশে উড়েছিল লাল সবুজের পতাকা। অথচ দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের আড়পাড়া (বিশ্বাসপাড়ার) শহীদদের গণকবরটি আজও রয়েছে অবহেলা ও দৃষ্টিসীমার বাইরে। ওই স্থানে যাওয়ার নেই ভালো কোন রাস্তা। ধুলা কাঁদা মাড়িয়ে যেতে হয় ময়লা আর আবর্জনায় পরিপূর্ণ এই গণকবরে।
এই গণকবরে যাওয়ার উপযুক্ত পাকা রাস্তার দাবি জানিয়েছেন এসব শহীদের পরিবার ও স্থানীয়রা। বর্তমান সরকারের আমলে এই গণকবর চিহ্নিত করার পাশাপাশি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হলেও যথাযথভাবে দেখভালের অভাবে তা অবহেলায় পড়ে রয়েছে। অথচ এখানে শুয়ে আছেন ৭ সূর্য সন্তান। যার মধ্যে ৬ জনই ছিলেন কালীগঞ্জের আড়পাড়ার বাসিন্দা।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে কালীগঞ্জ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্মাণ করা হয়েছে শহীদের স্মৃতিস্তম্ভ। এখানে যে সব শহীদদের কবর দেয়া হয়েছে তারা হলেন আরশেদ আলী বিশ্বাস, নেছের আলী বিশ্বাস, আছির উদ্দিন বিশ্বাস, ইয়াকুব আলী মন্ডল ও মুনছুর আলী খাঁ। বাকি একজনের পরিচয় জানা যায়নি ফলে লেখা রয়েছে আরও অনেকে।
শহীদ আরশাদ আলীর বড় ছেলে রেজাউল ইসলাম জানান, ১৯৭১ সালের বৈশাখ মাসের ৫ তারিখ বিকেলে তাকে ও তার বাবাকে এক বিহারির সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনী বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। রেজাউল তখন ১৩ বছরের কিশোর। এরপর আরো বেশ কয়েকজনের সঙ্গে তাদেরকে লাইনে দাঁড় করানো হয়। তখন সুযোগ বুঝে পালিয়ে যান রেজাউল। পালানোর সময় শুনতে পান গুলির শব্দ। এতে শহীদ হন তার বাবাসহ সাতজন। মরদেহ গুলো ফেলে রাখা হয় আড়পাড়ার একটি পুকুর পাড়ে। শহীদ আরশাদ আলীর স্ত্রী শরবানু জানান, পাকিস্তানি সেনারা চলে গেলে তিনি শাশুড়িকে নিয়ে স্বামীর মরদেহ কুড়িয়ে এনেছিলেন। কবর দিয়েছিলেন বাড়ির পাশেই। বাকিদের মরদেহ পুকুর পাড়েই পড়েছিল। যে বিহারীরা তাদেরকে হত্যা করেছিল তাদের বাড়িও আড়পাড়া এলাকায়।
স্থানীয়রা বলেন, এ স্মৃতিস্তম্ভে যাওয়ার জন্য একটি রাস্তা নির্মাণ করা হলে এলাকার মানুষ প্রতি বছর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারবে। স্মৃতিস্তম্ভে লেখা আছে ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার আড়পাড়ায় পাক হানাদার বাহীনি দ্বারা নির্মমভাবে হত্যাকৃত ব্যক্তিদের গণকবর। এই গণকবরটি সাবেক মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজুর বাড়ির পিছনে। এই গণকবরের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও অধিকাংশই মানুষ জানেই না এটা কোথায়।
এসব শহীদদের পরিবারের সদস্যরা জানান, এখানে স্মৃতিস্তম্ভ যাওয়ার ভালো একটি রাস্তা নির্মাণের একান্ত প্রয়োজন। বর্তমানে এখন যে যে মাটির রাস্তা রয়েছে সেটিও বেদখল হয়ে যেতে পারে। এখানে যাওয়ার রাস্তা নির্মান করা হলে স্বাধীনতা দিবসসহ বিভিন্ন দিবসে শহীদদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। জানবে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। খুব দ্রুত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ স্মৃতিস্তম্ভে যাওয়ার জন্য ভালো একটি পাকা রাস্তা নির্মাণ করবেন এমনটিই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া জেরিন বলেন, আমি নতুন আসছি জায়গাটাও আমি চিনিনা। আপনার কাছে প্রথম জানলাম। গণকবরের স্মৃতিস্তম্ভটি পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।