রায়হান সিদ্দিক 
কালেক্টরেট ভবনসহ গোটা চত্বরের খোল নলচে পাল্টে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে দৃষ্টিনন্দন, নয়নাভিরাম মনোরম পরিবেশ। যশোরবাসীর অনেকেই এখন এটিকে বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে দেখছেন। পড়ন্ত বিকেলে ভিড়ে ঠাসা থাকে এলাকাটি। বিশেষ করে তরুণ তরুণীদের উপস্থিতি নজর কাড়ে।
এখানকার পুকুরটিকে সংস্কার করে দৃষ্টিনন্দন করা হয়েছে। পুকুরটিতে শোভা পাচ্ছে পদ্মফুল। শুধু তাই নয়; পুকুর জুড়ে লুটোপুটি খেলে নানান রঙের মাছ। শিশু কিশোররা তন্ময় হয়ে অবলোকন করে সেই দৃশ্য।
স্মরণকালের তাপদহে মানুষের জীবন যখন ওষ্ঠাগত, তখন শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ সবার অন্যতম বিনোদনস্থল হয়ে উঠেছে কালেক্টরেট চত্বর। সান বাঁধানো পুকুরপাড়ে গিয়ে তারা স্বস্তির পরশ পাচ্ছেন।
সকাল-সন্ধ্যা সারাদিনই কালেক্টরেট চত্বরে মানুষের আনাগোনা লেগে থাকে। কেউ আসেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দাপ্তরিক কাজে, কেউ আসেন পাশেই অবস্থিত কালেক্টরেট মার্কেটে, আবার কেউ আসেন অবসর সময় কাটাতে। ঐতিহ্যবাহী এই ভবনসহ চারপাশ মনোরম করে সাজাতে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান নিয়েছেন নানান উদ্যোগ।
ভবনের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত জেলা প্রশাসকের কক্ষ। উঠতে চোখে পড়বে জাতীয় পাখি দোয়েলের সুন্দর ভাস্কর্য, তারপর এ্যাকুয়ারিয়ামে নানা রঙের মাছ। উপরে উঠতে মাঝপথে দেয়ালে টেরাকোটায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন শরণার্থীদের দুর্দশা আর যুদ্ধবীভিষিকার গল্প ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’। ওপরেই রয়েছে এক নজরে জেলা পরিচিতি ম্যাপ।
জেলা প্রশাসকের কক্ষে ঢোকার আগেই রয়েছে অভ্যর্থনা কক্ষ। যেখানে অপেক্ষমানদের জন্য রয়েছে টেলিভিশন। বইয়ের তাকে আছে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও ঐতিহ্য-ইতিহাস নিয়ে রকমারি বই।
জেলার সর্বোচ্চ পদের অধিকারী জেলা প্রশাসকের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে দেখা করতে আসেন নানা পেশার মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষাও করতে হয় তাদের। কথা আছে অপেক্ষার যন্ত্রণা মৃত্যু যন্ত্রণার চেয়েও কষ্টকর। তাই সময় কাটাতে এখানে রয়েছে দেশের সকল জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা। পত্রিকা পড়েও যদি সময় না কাটে তাহলে পড়তে পারেন বই। এখানে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধসহ হরেক রকমের বই আছে।
যশোর শহরের বেজপাড়ার বাসিন্দা হামিদুল হক নানা প্রয়োজনে দীর্ঘদিন ধরেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসেন। তিনি বলেন, আগে এত সুন্দর আর মনোমুদ্ধকর পরিবেশ ছিল না। কোন কাজে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসলে এখন আর অপেক্ষা করতে বিরক্তি লাগে না। সময় কাটানোর জন্য রয়েছে পুকুর পাড়। আবার জেলা প্রশাসকের কক্ষে প্রবেশের আগে রয়েছে নান্দনিক অভ্যর্থনা কক্ষ। অনেক সময় বই আর পত্রিকা পড়েই কাটিয়ে দেয়া যায়।
যশোর সদরের করিচিয়া গ্রামের মোহাম্মদ আমিন বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধের ওপর বই পড়ে শেষ করেছি এই অভ্যর্থনা কক্ষে বসে। যদিও বইটি শেষ করতে সময় লেগেছে দীর্ঘদিন। বিভিন্ন সময় প্রয়োজনে জেলা প্রশাসকের সাথে দেখা করতে আসি। অধিকাংশ সময় তিনি ব্যস্ত থাকেন। একদিন মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি বই দেখে তা পড়তে শুরু করি। ভেতর থেকে ডাক না আশা পর্যন্ত বই পড়ি। ভেতর থেকে ডাক আসলে যে পর্যন্ত পড়া হয় তা নোট রাখি, পরে আবার ওইখান থেকে পড়া শুরু করি। এভাবেই বইটি পড়া শেষ করেছি।
জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান দায়িত্ব গ্রহণের পর মুক্তিযুদ্ধ, ইতিহাস ঐতিহ্য ও শিক্ষা সংস্কৃতি বিকাশে তার নন্দিত উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে। তার হাতের ছোয়ায় ফের চালু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী বি. সরকার ঘূর্ণায়মান রঙ্গ মঞ্চে। যশোর ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা রায়বাহাদুর যদুনাথ মজুমদার স্মরণ উৎসব তারই কৃতিত্ব। কালেক্টরেট ভবনের বর্ণিল সাজসজ্জা ও আলোকসজ্জায় বদলে গেছে দৃশ্যপট। আধুনিকায়ন হয়েছে ঐতিহ্যবাহী নিয়াজ পার্কটিও।
ঐতিহ্যবাহী ভবন নান্দনিক করার বিষয়ে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, প্রতিটি জেলার এমন একটি জায়গা থাকে। যা ওই জেলার পরিচিতি বহন করে। যশোরের কালেক্টরেট ভবনের রয়েছে ২০০ বছরের ঐতিহ্য। বিভিন্ন সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভবনের ছবি দিয়ে যশোরকে উপস্থাপন করা হয়।
তাই আমার মনে হয়েছে ভবনটিকে কিভাবে আরও নান্দনিক করা যায়। নান্দনিক পরিবেশের পাশাপাশি নাগরিক সেবার ব্যাপারটিও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সেবা নিতে এসে কেউ যেনো বিড়ম্বনার শিকার না হন সেই বিষয়টিও নজরদারি করা হয়। যেহেতু এখানে সব শ্রেণি পেশার মানুষ আসেন। তাই তাদের জন্য আধুনিক অভ্যর্থনা কক্ষ তৈরি করা হয়েছে।
দেশের প্রথম ডিজিটাল জেলা যশোর। সময়ের প্রয়োজনে চাকরি সূত্রে অনেকে এসেছেন, দায়িত্ব পালন শেষে আবার চলে গেছেন। কিন্তু কয়েকজন জেলা প্রশাসককে যশোরবাসী মনে রাখবেন, তাদেরই একজন মো. তমিজুল ইসলাম খান। করোনাকালীন সেবা ও তাৎক্ষণিক বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নজির গড়ে সব শ্রেণির মানুষের কাছে সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি।
সুশাসন ও দুর্নীতিমুক্ত গতিশীল জেলা প্রশাসন বাস্তবায়নে জিরো টলারেন্স নীতি পালনের পাশাপাশি মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৫০ শিক্ষার্থীর লেখা কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প ও আঁকা ছবি দিয়ে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রকাশ করা হয় ‘খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে বই। তার পৃষ্ঠপোষকতায় যশোরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের প্রসার ঘটেছে। করোনা অতিমারির সময় ২০২০ সালের আগস্টে যশোরের জেলা প্রশাসক পদে যোগদান করেন তমিজুল ইসলাম খান।

 
									 
					