সহজ শর্তে ঋণ দিচ্ছে হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন
সুনীল ঘোষ: দৃষ্টিনন্দন ও টেকসই বাড়ি নির্মাণে ঋণ পাচ্ছেন কৃষকরাও। ‘পল্লীমা’ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে এই ঋণ দেয়া হচ্ছে। সহজ শর্তে ও দীর্ঘ মেয়াদীর ঋণে সুদের হারও কম। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রকল্পটি চালু করেছে সরকার। বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
এর আগে শুধুমাত্র পৌর এলাকার মানুষ এই সুবিধা ভোগ করে আসছিলেন। সরকারের প্রশসংনীয় এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে পাল্টে যাবে গ্রাম বাংলার চিত্র। যদিও যশোরে গতি পায়নি প্রকল্পটি। একদম ঢিমেতালে চলছে কার্যক্রম। প্রচার-প্রচারণা না থাকায় অধিকাংশ মানুষ কিছুই জানেন না এসবের। এরফলে সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন মানুষ। সরকারের উন্নয়ন ও সাফল্যের চিত্র থেকে যাচ্ছে অন্ধকারে।
গত ২০২০-২১ অর্থ বছরে যশোর পৌরসভা এলাকার ৩৩ জন নাগরিক প্রতিষ্ঠানটি থেকে ঋণ পেয়ে নির্মাণ করেছেন দৃষ্টিনন্দিত বহুতল ভবন। ফ্লাট কেনার ঋণ নিয়েছেন একজন। এর বাইরে চৌগাছা, ঝিকরগাছা, মণিরামপুর, কেশবপুর ও অভয়নগরের আরও ৯ জনকে ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন। যশোরের ৪২ জন বাড়ি নির্মাণের ঋণ নিয়েছেন ১২ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
প্রতিষ্ঠানটির যশোর অফিস থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করেছেন সদরের সজলপুর গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেন। মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জের কৃষক আলম দফাদার বাড়ি বানাতে ঋণ পাচ্ছেন ১৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। চৌগাছার কলেক প্রভাষক আলী কদর ১১ লাখ ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে বাড়ি বানিয়েছেন।
রাজগঞ্জের কৃষক আলম দফাদার জানান, তার ঋণ মঞ্জুর হয়েছে। তিনি দৃষ্টিনন্দিত একটি বাড়ি বানাবেন। এটি ছিল তার স্বপ্ন কিন্তু সামর্থ ছিল না। সেই স্বপ্ন এখন পূরণের পথে। তিনি সরকারের এই উদ্যোগকে মহতী দাবি করে বলেন, ‘পল্লীমা’ প্রকল্পটি থেকে ঋণ নিয়ে স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব কিন্তু সবাই প্রকল্পটি সম্পর্কে অবগত না। তিনি মনে করেন প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে স্বপ্নচারীদের স্বপ্ন পূরণে গতি সৃষ্টি করা যেতে পারে।
যশোর শহরের বারান্দিপাড়ার বাসিন্দা সৈয়দ কামরুল ইসলাম কল্যাণকে জানান, তিনি ৬০ লাখ ঋণ নিয়ে ৬তলা ভবন নির্মাণ করেছেন। ২০ বছরে কিস্তিতে ৮ শতাংশ সরল সুদে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
তিনি বলেন, কোন রকম ঝুক্কি-ঝামেলা ছাড়াই ঋণ পেয়েছি। স্বপ্ন দেখতাম একটি সুন্দর বাড়ির। সেই স্বপ্ন বর্তমান সরকার পূরণের সুযোগ দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, এই ঋণ নিয়ে বাড়ি বা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করা কোন ঝুঁকির কাজ না। ভাড়ার টাকাও লাগবে না ঋণ শোধ হতে।
যশোর অফিসের সিনিয়র ম্যানেজার ইসমাইল হোসেন শিশির জানান, কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ প্রতিষ্ঠানটির ‘পল্লীমা’ প্রকল্প থেকে বিনিয়োগ ছাড়াই দীর্ঘ মেয়াদী কিস্তির ঋণ নিয়ে বাড়ি বানাতে পারেন। গ্রুপ ভিত্তিক ও ফ্লাট কেনার ঋণ নেয়ারও সুযোগ রয়েছে প্রকল্পটিতে। সুদের হারও কম। ৫ বছর থেকে ২০ বছর মেয়াদী ঋণে ৭ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ হারে সুদ নেয়া হয়। কিস্তির মেয়াদের ওপর নির্ভর করে সুদের হার। তিনি আরও বলেন, এতদিন পৌর এলাকার মধ্যে বাড়ি নির্মাণের ঋণ দেয়া হতো।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকার ‘পল্লীমা ও ‘প্রবাসবন্ধু’ নামে দুটি প্রকল্প চালুর ঘোষণা দেয়। যার কার্যক্রম যশোরে চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রাম পর্যায়ে বিস্তৃত করতেই প্রকল্প দুটি চালুর নির্দেশ দেয় সরকার। এর ফলে শহরের নিকটবর্তী গ্রামীণ এলাকায় ‘সবার জন্য আবাসন’ সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। শহরে ঘনবসতির চাপও কমে আসবে। এরআগে শুধুমাত্র পৌর এলাকার নাগরিকদের মধ্যে ঋণ প্রদান কার্যক্রম সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানে ‘পল্লীমা ও ‘প্রবাসবন্ধু’ প্রকল্পের পাশাপাশি ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিক বাড়ি নির্মাণ বিনিয়োগে ‘মনজিল’ নামে আরও একটি প্রকল্পের আওতায় ঋণ দেয়া হচ্ছে।
ঋণগ্রহীতার সংখ্যা কম কেন প্রশ্নোত্তরে তিনি বলেন, প্রচার প্রচারণার বিষয় না। বাস্তবতা হলো গ্রামের মানুষ প্লান পাস করাকে জটিল বিষয় মনে করেন। অনেকে ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে আনেন কিন্তু আমরা গ্রহণ করি না। কারণ চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার না। বাড়ি নির্মাণে প্লান পাস করাটা বাধ্যতামূলক। তিনি বলেন, আমরা গ্রোথ এলাকা-যেমন বসুন্দিয়া, সিংহঝুলি, খাজুরাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকাতে ঋণ দিচ্ছি। তার ভাষ্যমতে, পৌর এলাকা বা সদর হতেই হবে তা নয়। যেসব এলাকায় ব্যাংক, স্কুল কলেজ, বাজারসহ সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে সে এলাকার মানুষ ঋণ নিতে পারবেন।
হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন যশোর অঞ্চলের সহ-মহাব্যবস্থাপক সিএম রুম দৈনিক কল্যাণকে বলেন, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই বছর ঠিকমত ঋণ বিতরণ করা যায়নি। প্রচারণা একদম নেই, তা নয় দাবি করে তিনি বলেন-২১-২২ অর্থবছরের ৬ মাসে ১২ কোটির উপরে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। টার্গেট পূরণ করেও এবার আমরা অধিক লোককে ঋণ দিতে পারবো। তবে প্রচারণা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলেও মনে করেন প্রতিষ্ঠানটির এই কর্মকর্তা।