কল্যাণ ডেস্ক:
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের আদালতের এই ঐতিহাসিক রায় শুধু দেশে নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাতে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই রায় বাংলাদেশের জনগণকে মনে করিয়ে দিয়েছে— যে-ই যত ক্ষমতাবান হোক না কেন, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানে নিহত হাজারো মানুষের পরিবারের জন্য এই রায় আংশিক হলেও ন্যায়বিচারের অনুভূতি এনে দিয়েছে।
বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা বছরের পর বছরের দমন–পীড়নে ভেঙে পড়া গণতান্ত্রিক ভিত্তি পুনর্নির্মাণের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি।
তিনি বলেন, তরুণ ও শিশুদের বিরুদ্ধে যে প্রাণঘাতী বল প্রয়োগ করা হয়েছিল— যাদের অস্ত্র ছিল শুধু তাদের কণ্ঠস্বর— তা রাষ্ট্র ও নাগরিকের মৌলিক সম্পর্ককে ভেঙে দিয়েছে।
এসব ঘটনা বাংলাদেশের মূল মূল্যবোধ— মর্যাদা, দৃঢ়তা ও ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকার—কে গভীরভাবে আঘাত করেছে।
জুলাইয়ের ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে প্রায় ১,৪০০ মানুষ প্রাণ হারান উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, তারা কেবল সংখ্যা নয়; তারা ছিল আমাদের ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক, অধিকারসম্পন্ন নাগরিক।
তিনি জানান, গত কয়েক মাসের সাক্ষ্যে উঠে এসেছে কীভাবে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী শক্তি— এমনকি হেলিকপ্টার থেকেও— ব্যবহার করা হয়েছিল।
এই রায় সেই ভোগান্তিকে স্বীকৃতি দেয় এবং অপরাধীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করার মাধ্যমে বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফেরায়।
ড. ইউনূস বলেন, পরিবর্তনের পক্ষে যেসব ছাত্র ও নাগরিক দাঁড়িয়েছিলেন, তাদের অনেকেই জীবনের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাদের এই উৎসর্গই বাংলাদেশের ভবিষ্যতের পথকে আরও দৃঢ় করেছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সামনে অগ্রসর হতে হলে শুধু আইনি জবাবদিহিতা নয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের মাঝে আস্থা পুনর্গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মানুষ কেন প্রকৃত প্রতিনিধিত্বের জন্য সবকিছু ঝুঁকির মুখে ফেলে— তা গভীরভাবে বোঝা এবং সেই অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এখন রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব।
তিনি বলেন, আজকের রায় সেই দীর্ঘ যাত্রার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
বিবৃতির শেষ অংশে ড. ইউনূস বলেন, আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ সাহস এবং বিনয়ের সাথে সামনে থাকা সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে সক্ষম হবে। আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং মানবিক সম্ভাবনার প্রতি অঙ্গীকারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার শুধু টিকে থাকবে না— এটি আরও সুদৃঢ় হবে।
