ঢাকা অফিস
ঢাকার কেরানীগঞ্জে ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ নারী হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। মঙ্গলবার ১৩ জুন এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ১১ জুন রাত ৮টার সময় ৯৯৯-এ কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ সংবাদ পায় যে, কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন পূর্বাশুরস্থ তমা কনস্ট্রাকশনের পরিত্যক্ত জমির জঙ্গলের ভেতরে এক নারীর মরদেহ পড়ে আছে।
সংবাদ পেয়ে কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহাবুদ্দিন কবীর ও মডেল থানার ওসি মামুনুর রশীদ একটি টিম নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যান। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় ওই নারীর মৃতদেহের সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিডফোর্ড হাসপাতাল) প্রেরণ করেন। পরদিন পুলিশ বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা করে।
মৃত্যুরহস্য উদঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তারে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার একটি চৌকস দল তদন্ত শুরু করে।
পুলিশ সিআইডির ক্রাইমসিনের সহযোগিতায় মৃতদেহের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে তার নাম-পরিচয় শনাক্ত করে। নাম ও পরিচয় পাওয়ার পর তার পরিবারকে ঘটনা জানানো হয়। তারপর তদন্তদল ঘটনাস্থলের বিভিন্ন আলামত ও পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করে। তদন্তের একপর্যায়ে পুলিশ তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১২ জুন মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থানাধীন পশ্চিম মাসদাইর থেকে আসামি মো. শহিদুল ইসলাম (৩৮)-কে গ্রেপ্তার করে।
আসামি শহিদুল জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, নিহত ওই নারী সালমার সাথে শহিদুলের ০৭/০৮ বছরের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। ঘটনার এক দিন আগে সালমা শহিদুলের গ্রামের বাড়ি বরিশালে যায় এবং জানতে পারে যে শহিদুল বিবাহিত এবং তার স্ত্রী বরিশালে গ্রামের বাড়িতে থাকে।
এ তথ্য জানার পর ভিকটিম সালমা তাৎক্ষণিকভাবে শহিদুলকে ফোন করে প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিয়ে সালমাকে বিয়ে করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। উল্লেখ্য, সামলা ডিভোর্সি এবং তার নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া একটি মেয়ে আছে। শহিদুল সালমাকে কৌশলে ঢাকায় আসতে বলে।
ঢাকায় আসার পর শহিদুল সালমার সাথে ঘটনার দিন বিকেল ৫টার সময় ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেখা করে। ওই দিন শহিদুল রাত ১০টার পর ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে সালমাকে কেরানীগঞ্জে নেয়। তারপর শহিদুল ঘটনাস্থলের জঙ্গলে নিয়ে প্রথমে সালমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।
পরবর্তীতে সালমার সাথে থাকা ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। অতঃপর সালমার মৃতদেহ যাতে শনাক্ত করা না যায় সে জন্য ইটের টুকরা দিয়ে মুখ থেঁতলে চেহারা বিকৃত করে পালিয়ে যায় শহিদুল।
আসামি শহিদুল বার বার তার অবস্থান পরিবর্তন করে বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়ায় যাতে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করতে না পারে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি, গ্রেপ্তার তাকে হতেই হলো।
আরও পড়ুন: যশোরসহ ১১ অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টির আভাস