আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ, কেশবপুর (যশোর): যশোরের কেশবপুরে ৪ হাজার ৬৫৮টি মাছের ঘেরে প্রতিবছর ৯২০ কোটি টাকার ৩৬ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব মৎস্য ঘেরে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আধুনিক পদ্ধতির মাছ চাষ সম্ভব হলে উৎপাদন বহুলাংশে বেড়ে যাবে বলে উপজেলা মৎস্য অফিসের দাবি। অবৈধ দখলের কারণে মাছ বাজার সংকুচিত হওয়ায় মাছবাহী ট্রাক, পিকআপ বাজারে ঢুকতে পারে না। ফলে মাছ বিপণন ব্যবস্থা বিঘিœ হওয়ার পাশাপাশি কেশবপুরের উৎপাদিত অধিকাংশ মাছ চলে যাচ্ছে পাশের বিভিন্ন বাজারে। এ অবস্থায় মাছ বাজারের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে বাজার সম্প্রসারণের দাবি স্থানীয়দের। আর মাছ বাজার সম্প্রসারণ করা গেলে এখান থেকে বছরে কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করা সম্ভব।
আশির দশকে কেশবপুরের প্রধান নদ-নদী নব্য হারালে উপজেলার অধিকাংশ বিলগুলোতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ সময় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ঘের ব্যবসায়ীরা বিলের পানি নিষ্কাশন করে কৃষকদের বোরো আবাদের শর্তে কোনো প্রকার হারি ছাড়াই বিলগুলো বেঁড়িবাধের আওতায় এনে মাছ চাষ শুরু করেন। পরবর্তীতে মাছ চাষ লাভজনক হওয়ায় জমির মালিক কৃষকদের হারি দিয়ে ঘের মালিকরা মাছ চাষ অব্যাহত রেখেছেন। উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্য মতে, এ উপজেলায় মোট ৪ হাজার ৬৫৮টি মাছের ঘের রয়েছে। যার মধ্যে কৃষি জমি রয়েছে ৭ হাজার ৪৪৯ হেক্টর। এসব ঘেরের মধ্যে সরকারি খাল রয়েছে ৫৯টি। যার আয়তন ৩৯৪ হেক্টর জমি। প্রতিবছর এসব ঘেরে ৩৩ হাজার ৮শ’ ২০ মেট্রিক টন সাদা, ২ হাজার ১শ’ ১৮০ মেট্রিক টন গলদা, ২শ’ ৪৫ মেট্রিক টন বাগদা, ৩শ’ কেজী কুচিয়া, ১৭শ’ কেজি কাঁকড়া ও ৫ মেট্রিক টন শুটকিসহ মোট ৩৬ হাজার ২শ’ ৫২ মেট্রিক টন দেশি ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উৎপাদন হয়ে থাকে। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৯২০ কোটি ৮৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
কেশবপুর মাছ বাজার আড়ৎদার সমিতির সভাপতি আব্দুল হান্নান বিশ্বাস জানান, এ উপজেলার উৎপাদিত মাছ বিপণনের জন্যে শহরের কাঁচা বাজারের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে পাইকারি মাছ বাজার। মাছ বাজারে জায়গা কম ও প্রশস্ত রাস্তা না থাকায় রফতানিযোগ্য মাছবাহী ট্রাক, পিকআপ বাজারে ঢুকতে পারে না। ফলে বিপণন ব্যবস্থার অভাবে এখানকার উৎপাদিত মাছ চলে যাচ্ছে আশপাশের বাজারে। এ অবস্থায় মাছ বাজারের হরিহর নদীর অববাহিকার অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে বাজার সম্প্রসারিত করতে হবে। যেটি করলে প্রতিবছর কোটি টাকারও বেশি সরকারি রাজস্ব আয় হবে এবং বাজারেরও উন্নয়ন হবে। সড়ক সরু হওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা এ বাজারে মাছ কিনতে এসে পড়েন বিপাকে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সজিব কুমার সাহা বলেন, কেশবপুরে মাছের উৎপাদন ধরে রাখতে ঘেরের বেঁড়িবাধগুলো মজবুত করে তৈরি করতে হবে। এছাড়া, মৎস্য ঘেরে সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের মাধ্যমে মাছের উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব। মাছ বাজারে মাছ সংরক্ষণে সরকারিভাবে একটি মৎস্য আহরণ কেন্দ্র করা হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম বলেন, মাছ বাজারের পাশে হরিহর নদী অববাহিকার জমি অবৈধভাবে দখল করে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। তারা অসাধু ভূমি কর্তাদের ম্যানেজ করে বর্তমান কাগজপত্রের বৈধতা দেখাচ্ছে। যে কারণে মাছ বাজার সম্প্রসারণ সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া মাছ বাজারে প্রবেশের পিছনের রাস্তাটি দখল হয়ে গেছে। বাজারের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে।