নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরের কেশবপুর উপজেলার মূলগ্রামের কিশোর আনিন নাঈম (১৫) হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। চোর সন্দেহে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত ৩ জনকে গত মঙ্গলবার আটক করেছে সংস্থাটি। বুধবার তাদের আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মারুফ আহমেদ তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
আটকরা হলেন, কেশবপুর উপজেলার হাড়িয়াঘোপ গ্রামের আবুল কাশেম খাঁ’র ছেলে নুরুজ্জামান খাঁ (৩০), মুনসুর মোড়লের ছেলে শিমুল হোসেন (২৮) ও মৃত গহর আলী মোড়লের ছেলে আতিয়ার রহমান (৪৫)।
পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন জানান, নাঈম মূলগ্রামের মশিয়ার রহমানের ছেলে। ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি সকাল ৭টার দিকে কেশবপুর উপজেলার ভান্ডারখোলা গ্রামের ইকবালের মোড় থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় স্বজনেরা স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জানতে পারেন, ওইদিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে নাঈম হাড়িয়াঘোপ গ্রামের জনৈক আব্দুস সোবহানের বাড়ি থেকে বাইসাইকেল চুরি করে পালিয়ে যাবার সময় ধরা পড়ে এবং স্থানীয় লোকজন তাকে পিটুনি দিলে তিনি মারা যান। পরে এ ঘটনায় নিহতের পিতা মশিয়ার রহমান অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে কেশবপুর থানায় একটি মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ৩ এপ্রিল কেশবপুর থানার পুলিশ আদালতে মামলার ফাইনাল রিপোর্ট দেয়। এই রিপোর্টের ওপর বাদী মশিয়ার রহমান আদালতে নারাজী দিলে বিচারক মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআই যশোরকে নির্দেশ দেন। এর প্রেক্ষিতে পিবিআই মামলাটির তদন্ত শুরু করে। বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই’র এসআই মিজানুর রহমান-২ গত মঙ্গলবার কেশবপুর অভিযান চালিয়ে হত্যার সাথে জড়িত অভিযোগে নুরুজ্জামান খাঁ, শিমুল হোসেন ও আতিয়ার রহমানকে আটক করেন। আটকের পর তারা কিশোর নাঈমকে হত্যার কথা স্বীকার করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক ব্যক্তিদের কাছ থেকে পিবিআই জানতে পারে, নাঈম একজন ইটভাটা শ্রমিক। একই ভাটায় কাজ করার সুবাদে হাড়িয়াঘোপ গ্রামের মৃত হাশেম আলীর ছেলে আসাদুর রহমানের সাথে তার সখ্য গড়ে ওঠে। এ কারণে নাঈম প্রায় আসাদুরের বাড়িতে যাতায়াত করতো। ২০১৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ভোর ৫টার দিকে নাঈম হাড়িয়াঘোপ গ্রামে আসাদুরের বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে যাচ্ছিলো। পথে হাড়িয়াঘোপ কারিকরপাড়ারজনৈক তৌহিদুর রহমানের বাড়ির সামনে পৌঁছালে স্থানীয় লোকজন তাকে চোর সন্দেহে চিৎকার করতে থাকেন। তখন নাঈম প্রাণভয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় জনৈক রেজোয়ান মাস্টারের স্যালোমেশিনের ড্রেনের মধ্যে পড়ে যায়। এ সময় নুরুজ্জামান খাঁ, শিমুল হোসেন ও আতিয়ার রহমানসহ অন্যরা তাকে মারধর করতে করতে ভান্ডারখোলার ইকবালের মোড়ের জনৈক হাবিবুর রহমানের চায়ের দোকানের সামনে নিয়ে আসেন। এরপর সেখানে তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। ইট দিয়ে তার মাথাসহ বিভিন্ন স্থানে আঘাত করলে ঘটনাস্থলেই নাঈমের মৃত্যু হয়।