কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি
সারা বছর ধরে চলে বালু ও মাটি কাটার মহোৎসব। কৃষিজমি, টিলা, খাল-বিল কোনো কিছুই বাদ যায় না মাটিখেকোদের হাত থেকে। ইটভাটায় মাটির জোগান, ডেবা ভরাট, বসতভিটা, রাস্তা তৈরিসহ বৈধ ও অবৈধ নানা কাজে কৃষি জমির টপ সয়েল কাটা হচ্ছে। এসব মাটি লাখ লাখ টাকায় বিক্রি করেন মাটিখেকোরা। মাঝে মধ্যে প্রশাসনের অভিযান হলে জরিমানার টাকাকে ব্যবসার খরচ ধরে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জন্য বৈধ ও অবৈধ বাজেট রেখে প্রতিবছর কৃষিজমি নিজেদের স্বার্থে ক্ষতি করছেন তারা।
শস্যভান্ডার খ্যাত কেশবপুরের আয়তন ৩৪৭.৭২ বর্গমিটার। প্রায় ৩ লাখ জনসংখ্যার এ উপজেলায় ইটভাটা আছে ১৬টি। চলতি বছর সচল ছিল ১১টি। যার কোনটিরই বৈধ কাগজপত্র নেই। ইটভাটার বেশিরভাগই গড়ে উঠেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সড়কের পাশে কৃষি জমির পাদদেশে। ইটভাটার প্রধান উপকরণ হচ্ছে কৃষি জমির টপ সয়েল। কৃষি জমি থেকে হাজার হাজার একর টপ সয়েল রাতের আঁধারে কেটে ইটভাটায় সরবরাহ করার কারণে বিরান ভূমিতে পরিণত হচ্ছে অনেক কৃষি জমি। কোটি টাকার মাটি কাটলেও জরিমানা হয় মাত্র ৫০ হাজার টাকা। এটা মেনে নিয়েই মাটিখেকোরা অবাধে মাটি কেটে চলেছে।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা সংশোধন আইন-২০০৩ বলছে, কোনও ফসলি জমি থেকে বালু বা মাটি কাটা যাবে না। কৃষি বা অন্য ফসলি জমির টপ সয়েল কাটলে (জমির মাটির উপরের অংশ) দুই বছর জেল খাটতে হবে। এ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে উপজেলার বায়সা গ্রামে জাহাঙ্গীর আলম, বিধান দাস, হারুন, শ্রীরামপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, বাবলুর রহমান, জাহানপুর গ্রামের হারুনর রশিদ, মির্জাপুর গ্রামের মিন্টু, জলিল, বগা গ্রামের আনিছুর রহমান, মহাদেবপুর গ্রামের বাবু, চালিতাবাড়িয়া গ্রামের হারুনর রশিদ ও ভোগতী এলাকার চিহ্নিত মাটি ব্যবসায়ী আলম মাটি কাটা ব্যবসায় জড়িত। এরা প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি মাটি কাটা অব্যাহত রেখেছেন। অধিকাংশ মাটি যায় ইটভাটায়। স্কেভেটর দিয়ে গভীরভাবে চাষের জমির মাটি কাটায় আশপাশের জমির চেয়ে ওই সব জমি নিচু হয়ে যাচ্ছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে বোরো আবাদের জমিসহ ক্ষুদ্র কৃষকদের জমি। অব্যাহতভাবে মাটি কেটে ট্রাক্টর, মিনি ট্রাকযোগে সকাল থেকে গভীর রাত অবধি সড়ক দিয়ে যাতায়াতে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। হুমকিতে পড়েছে এলাকার শত শত স্কুল পড়–য়া শিশু শিক্ষার্থী, ঘটছে দুর্ঘটনা। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বোরো আবাদের জমিসহ কৃষক।
এ ব্যাপারে মাটি ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা জনস্বার্থে মাটি কাটার কাজ করি। তাছাড়া, ইটভাটার প্রধান উপকরণ তো মাটি। কেশবপুরে ব্যাপক ইটের চাহিদা রয়েছে। মাটি কাটায় ইতোমধ্যে তার দুবার করে ৪ জন শ্রমিককে ধরে উপজেলা প্রশাসন জরিমানা করেছে। ভাবছি এ ব্যবসা আর করবো না।
এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফুজ্জামান বলেন, যেখানে মাটি কাটার খবর পাচ্ছি সেখানেই অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মাটি কাটার অভিযোগে এবছর কয়েকজন মাটি ব্যবসায়ীর মালামাল জব্দসহ জেল-জরিমানা করা হয়েছে। এরপরও থামানো যাচ্ছে না।