কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি
নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই যশোরের কেশবপুরে ভোটের মাঠে চমক দেখা যাচ্ছে। নৌকা ছেড়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা ভিড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দিকে। নৌকার বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন তারা। এরমধ্যে শেষ সময়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহাদাত হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক গৌতম রায়, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক বিশ্বাস শহীদুজ্জামান শহীদকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন মেরুকরণ। দলীয় নেতাদের এমন ইউটার্নে রীতিমত বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে নৌকার প্রার্থীকে। একারণে নৌকার প্রার্থীকে রাজনৈতিক বলি হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
যশোর-৬ আসনে মোট প্রার্থী চার জন। এরমধ্যে শুরু থেকেই ভোটের মাঠ জমিয়ে রেখেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহীন চাকলাদার, স্বতন্ত্র প্রার্থী এইচ এম আমীর হোসেন ও আজিজুল ইসলাম। এই তিন প্রার্থীর জনসমর্থন ও প্রচারণার কাছে ঠিকমত দাঁড়াতেই পারছেন না জাতীয় পার্টির প্রার্থী জিএম হাসান। সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও কেশবপুরের সাবেক এমপি ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুর পর ২০২০ সালের উপনির্বাচনে যশোর-৬ আসনের (কেশবপুর) এমপি হন যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। এরপর থেকে গুটি কয়েক লোকের দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সাথে তার দূরত্ব বাড়ার কারণে হেভিওয়েট এই প্রার্থী বর্তমান ভোটের মাঠে অসহায় হয়ে পড়েছেন।
এরপরও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহাদাত হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক গৌতম রায়, উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক বিশ্বাস শহীদুজ্জামান শহীদ, মজিদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী গোলাম সরোয়ার, পৌর যুবলীগের অন্যতম নেতা জয়ভদ্র ও মজিদপুর ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তারসহ সহযোগী সংগঠনের একাংশের নেতারা নৌকা ছেড়ে যোগ দেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এইচএম আমীর হোসেনের সাথে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজুল ইসলামও আমীর হোসেনের মত সকাল থেকে গভীর রাত অবধি প্রতিটি পাড়া, মহল্লায় মানুষের দ্বারে দ¦ারে ছুটছেন, ভোট ভিক্ষা চাচ্ছেন। চলছে উঠান বৈঠক, ভোটারদের দেয়া হচ্ছে নানা প্রতিশ্রুতি। তিনিও জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদি। ফলে ভোটের মাঠে কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়েছেন নৌকার প্রার্থী শাহীন চাকলাদার।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শাহীন চাকলাদার বহিরাগত হওয়ায় যশোরের ৬টি আসনের মধ্যে কেশবপুর সংসদীয় আসনে এবার নির্বাচন একটু ভিন্ন হতে যাচ্ছে। কারণ এই আসনে স্থানীয় নেতাকে বাদ দিয়ে বহিরাগত শাহীন চাকলাদারকে আওয়ামী লীগের মনোনীত করায় তৃণমূল আওয়ামী লীগে ব্যাপক ক্ষোপের সৃষ্টি হয়। আর সেই ক্ষোভ থেকেই নৌকার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের স্থানীয় ২ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য হয়। এ নির্বাচনে সিংহভাগ ভোটাররা নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ায় এবার কেশবপুরে ভোটের হিসার-নিকাশ পাল্টে গেছে। বিশেষ করে স্থানীয় প্রার্থী হিসেবে খন্দকার আজিজের ঈগল প্রতীকের পক্ষে এলাকার উঠতি বয়সি থেকে শুরু করে বয়স্ক এমনকি নারী ভোটাররা নিজের টাকা খরচ করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এক কথায়, উপজেলার প্রত্যেক গ্রাম-গঞ্জে ঈগলের গণজোয়ার তৈরি হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গৌতম রায় বলেন, এমপি শাহীন চাকলাদারের চালানো অত্যাচারের প্রতিকার পেতে এবারের নির্বাচনে এইচএম আমীর হোসেনের কাঁচি প্রতীকে ঝুঁকে পড়েছে ভোটাররা। ২০২০ সালে একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে কেশবপুরের জনগণ শাহীন চাকলাদারকে ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করেন। তিনি জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হন। এবারের নির্বাচনে কাঁচি প্রতীককে মানুষ ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছে।
নৌকা প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মাস্টার আব্দুস সামাদ সরদার জানান, শাহীন চাকলাদার এখানকার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করেছে। তিনি সাড়ে তিন বছর ধরে এলাকায় সভা, সমাবেশ ও উঠান বৈঠক করে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। সেকারণে মানুষ উন্মুখ হয়ে আছে তাকে ভোট দিয়ে পুনরায় এমপি বানানোর জন্যে।
ঈগল প্রতীকের প্রার্থী আজিজুল ইসলাম বলেন, এমপি শাহীন চাকলাদার এলাকার কোনো উন্নয়ন করিনি। তার স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্যের কারণে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এলাকার ভোটাররা তরুন প্রজন্মের মানুষ হিসেবে আমাকে ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করতে চায়।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, ভোট অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে যাতে ব্যাপক ভোটারের উপস্থিতিতে হয় তার জন্যে কাজ করছে প্রশাসন। ভোটারদের কোনো প্রকার ভয়ভীতি ও হুমকি বরদাস্ত করা হবে না।
উল্লেখ্য, কেশবপুরে ২ লাখ ১৭ হাজার ৯৮৮ জন ভোটার ৮১ টি ভোট কেন্দ্রে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এদিকে, বিএনপির নেতারা ভোট বর্জনের আহবান জানিয়ে গ্রামে গ্রামে লিফলেট বিতরণ করছে।