আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ, কেশবপুর: বিজ্ঞ আদালতের ১৪৪ ধারা অমান্য করে কেশবপুরের পাঁজিয়া ইউনিয়নের সাগরদত্তকাটি আমতলা বিলের ৩২৫ বিঘা মাছের ঘের জোরপূর্বক দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ঘের মালিক কেরামত গাজী কেশবপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। জমির মালিকদের মধ্যে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘের কমিটির সভাপতি কিতাব্দি গোলদার জমির মালিকদের মতামতের ভিত্তিতে ১৪২৪ সালে ৩২৫ বিঘা জমির এই ঘেরটি কামরুজ্জামান বিশ্বাসকে পরবর্তী ৫ বছরের জন্য লিজ দেন। চুক্তিঅনুযায়ী ধানী জমি ২০ হাজার ও খাল ভেড়ি ৪০ হাজার টাকা দেয়ার কথা থাকলেও ঘের মালিক সেটা দেননি। গত ৩০ চৈত্র ঘেরটির মেয়ার শেষ হওয়ায় নতুন করে ঘের কমিটির সভাপতি কিতাব্দী গোলদার ও তার ছেলে আমিনুর রহমানসহ অধিকাংশ জমির মালিকরা ঘেরটি কেশবপুরের অপর ঘের মালিক কেরামত গাজীর কাছে লিজ দিতে ইচ্ছুক। সম্প্রতি তারা আগামী ৫ বছরের জন্য কেরামত গাজীকে লিজ দিয়েছেন। খবর পেয়ে ঘেরটি নিজের নামে ডিড করতে ঘের কমিটির সদস্য নূর মোহাম্মদ ও মিজানুর রহমান আলতাফ গোলদারের সহযোগিতায় ঘের মালিক কামরুজ্জামান বিশ্বাস কৌশলে পুনরায় নতুন একটি ডিড করে ধানী ১৪ হাজার ও খাল ভেড়ী ৩০ হাজার ধার্য করে সভাপতির স্বাক্ষর জালিয়াতি করে নতুন করে একটি ডিড করে। ডিড অনুযায়ী জমির মালিকদের হারির টাকা প্রদান না করে ঘেরের মেয়াদ পরবর্তী আরো ৫ বছর বাড়িয়ে নেয়ার চক্রান্তে লিপ্ত হয়। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় থাকা একদল সন্ত্রাসী জমির মালিকদের তুলে নিয়ে পাঁজিয়া বাজারে নিয়ে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে পরবর্তী ৫ বছরের জন্য নতুন ডিডে স্বাক্ষর করিয়ে নিচ্ছেন। জমির মালিকরা ডিডে স্বাক্ষর করতে নিষেধ করলে মারপিট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। ঘের কমিটির সভাপতি কিতাব্দি গোলদারকে ঘের মালিকের ভাড়াকৃত সন্ত্রাসীরা তুলে নিয়ে যায় পরবর্তীতে পুলিশের জরুরি আইনগত সেবা ৯৯৯ এ কল দিলে তাকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। জালিয়াতি করে ঘেরের চুক্তিপত্রের মেয়াদ বৃদ্ধির অভিযোগে ঘের মালিক কামরুজ্জামান বিশ্বাসসহ ৭ জনের নামে গত ৩০ মার্চ যশোর আদালতে মামলা করেন ঘের কমিটির সভাপতি কিতাব্দী গোলদারের ছেলে আনছার আলী। এ মামলার আসামিরা হলেন, ঘের মালিক কামরুজ্জামান বিশ্বাস, নুর মোহাম্মদ সরদার, মিজানুর রহমান, আনন্দ সরকার, আব্দুর রাজ্জাক, সুশান্ত বৈরাগী ও জিয়াউর রহমান।
আদালত মামলাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আদালতে এ মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত ১৪ এপ্রিল কামরুজ্জামান বিশ্বাস ওই বিরোধীয় ঘেরে ভুরিভোজ করে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন। যা নিয়ে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ঘটনায় অপর ঘের মালিক কেরামত গাজী নতুন ডিড অনুযায়ী যশোর আদালতে ওই জমিতে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন। যার মামলা নং-৪৯৬/২২। বিজ্ঞ আদালত সাগরদত্তকাটি ১০৯ নং মৌজার আর এস খতিয়ানের ৪৪.৪৬,১২৫,৪৬৭,৪৬৬,৪২০,১৭৫,৫৯২,৪২৭,৪৯৭,৪১৮,৩৩১,৪৫৯,৫৪, ৬৮৬,২৩২,১৫৮,৫৮,৫৩০,৪৭১,৫১০,১০৯,৩৯,৬৯৪,৬৬৪,১৩৬ দাগের ২৫৩৮ শতক ঘেরের জমিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। আদালতের নির্দেশে ২১ এপ্রিল কেশবপুর থানার উপপরিদর্শক (এস আই) মিজান মোল্লা উভয়পক্ষকে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার নোটিশ প্রদান করেন। আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে কামরুজ্জামান বিশ্বাস ওই ঘের দখলের চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে থানা পুলিশ উপস্থিত হয়ে দখল চেষ্টা বন্ধ করে দেন।
এ বিষয়ে কামরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, ওই ঘেরে আমি গত ৫ বছর মাছ চাষ করেছি। আবারো আমাকে ১৭৬ জন জমির মালিকদের অনেকেই ডিড করে দিয়েছেন। সে মোতাবেক বাংলা নতুন বছরের প্রথম দিনে ১৪ এপ্রিল মৎস্য অবমুক্ত করে মাছ চাষ শুরু করেছি। সকলের টাকা ঠিক মত দেয়া হয়েছে। কতিপয় ব্যক্তি ঘের নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে।
এ বিষয়ে কেরামত গাজী বলেন, ঘের কমিটির দুইজন সদস্য বাদে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ বাকি সবাই আমাকে আগামী ৫ বছরের জন্য ডিড করে দিয়েছেন। পূর্বের ঘের মালিক জমির মালিকদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ঘের দখলে রেখেছেন। তিনি এবিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এবিষয়ে কেশবপুর থানার উপপরিদর্শক মিলন মোল্লা বলেন, আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক ওই ঘেরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ২৪ এপ্রিল সকালে কামরুজ্জামান বিশ্বাস নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার চেষ্টা করেছিলো। খবর পেয়েই সেটা বন্ধ করে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে বলা হয়েছে। পরবর্তীতে নিদের্শনা অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।