আব্দুল্লাহ আল ফুয়াদ, কেশবপুর
শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষ-সংকটের কারণে কেশবপুর সরকারি পাইলট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। নামকরা এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসএসসি পরীক্ষায় শতভাগ পাসের সাফল্য রয়েছে। সেই সঙ্গে উপজেলায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়ে আসছে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। তবে প্রতিষ্ঠানটি মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষের সংকটে ভুগছে। পাঁচ বছর আগে সরকারিকরণ হলেও অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুবিধা বাড়েনি। মাধ্যমিক পর্যায়ে হয়নি নতুন শিক্ষক নিয়োগও। ফলে সার্বিক শিক্ষার মানোন্নয়ন নিয়ে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৪২ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে ৯৬০ জন শিক্ষার্থী আছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরে রয়েছে ৫০০ শিক্ষার্থী। প্রতিবছর এখান থেকে শিক্ষার্থীরা সেরা ফল করে। এ বছর এসএসসিতে ৫৩ জন জিপিএ-৫ প্রাপ্তি শতভাগ পাসের সাফল্য অর্জন করেছে। ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে প্রতিষ্ঠানটি সরকারিকরণ হয়। এ বছরের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা সরকারি বেতন পান। এখন প্রতিষ্ঠানটি পূর্ণাঙ্গ সরকারি হলেও সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তেমন কোনো সুবিধা পাচ্ছে না।
স্কুল সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থী অনুপাতে মাধ্যমিক স্তরে ২৫ জন শিক্ষক থাকা দরকার হলেও আছেন ১৪ জন। ১১ জন শিক্ষক কম রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কলেজ শাখার শিক্ষকদের দিয়ে মাধ্যমিকের ক্লাস নেয়া হচ্ছে। এতে কলেজ শাখার ২১ শিক্ষকের ওপর ক্লাস নেয়ার বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে। কোনো কোনো শিক্ষকের সপ্তাহে অতিরিক্ত ৬টি ক্লাস নিতে হয়।
প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের ভবনটি পরে দোতলা করা ছাড়া আরও দুটি তিনতলা ভবন থাকলেও পুরোনো ভবনের ছাদের পলেস্তারা ভেঙে পড়ছে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেই শ্রেণিকক্ষগুলোতে ক্লাস নেয়া হয় না। প্রতিষ্ঠানটিতে কলেজ শাখা ছাড়াও রয়েছে কারিগরি বিভাগ। এক হাজার শিক্ষার্থীর একসঙ্গে ক্লাস চলার সময় শ্রেণিকক্ষের সংকট তৈরি হয় বলে শিক্ষকরা জানান।
শিক্ষক সংকটের বিষয়ে নবম ও দশম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী বলে, শিক্ষক সংকটের কারণে তাদের সমস্যা হয় সত্য। তবে এর কিছু সুবিধাও হয়েছে। কলেজ শাখার শিক্ষকদের ক্লাস তারা পাচ্ছে। তাদের ভাষায়, কলেজ শাখার শিক্ষকদের ক্লাস তাদের কঠিন বিষয়গুলো সহজে বুঝতে সাহায্য করছে।
কলেজ শাখার কয়েকজন শিক্ষক বলেন, তাদের কেবল উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির ক্লাস নেয়ার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানের সুনামের জন্য তারা প্রতিদিন মাধ্যমিকেও সমানতালে ক্লাস নিয়ে থাকেন। এতে তাদের নিজ বিষয়ের ওপর অতিরিক্ত নজর দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। তা ছাড়া কলেজের ক্লাস নেয়ার জন্য যেমন তাদের প্রস্তুতি নিতে হয়, আবার মাধ্যমিকের জন্যও একইভাবে প্রস্তুতি নিয়ে ক্লাসে যেতে হয়। এতে করে বাড়তি ক্লাসের বোঝা তৈরি হয়।
অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান বলেন, ২০১৮ সালে সরকারিকরণের পর থেকে আর কোনো শিক্ষক নিয়োগ হয়নি। ফলে শিক্ষক সংকট রয়েছে। তবে কলেজ শাখার শিক্ষকদের দিয়ে ক্লাস নিয়ে শিক্ষকের ঘাটতি পূরণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, শিক্ষক সংকটের বিষয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষ-সংকট রয়েছে। পুরোনো ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হবে। ছয়তলা একটি ভবন হলে ভালো হয়।
এ ব্যাপারে কেশবপুরের উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আকরাম হোসেন বলেন, সরকারি স্কুলের শিক্ষক সংকটের বিষয়টি বিভাগীয় কার্যালয় থেকে দেখা হয়। আমি নতুন এসে দু একটি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছি। পাইলট উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান ব্যাহত না হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।