কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
কোটচাঁদপুরের দুর্বাকুন্ডু গ্রামে রাস্তার এইচবিবি করণের কাজে হরিলুটের অভিযোগ উঠেছে। মানহীন কাজ করায় এলাকাবাসী একাধিকবার রাস্তার কাজ বন্ধ করার পরও প্রভাবশালী ঠিকাদার কাজ অব্যাহত রেখেছেন। অবশেষে প্রতিকার চেয়ে স্থানীয়রা ২৮ মার্চ ঝিনাইদহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক ও কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে বলা হয় ৮০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে উপজেলার সাফদারপুর ইউনিয়নের দুর্বাকুন্ডু গ্রামের পিচ মোড় থেকে তুহিনের ইটভাটা পর্যন্ত ১ হাজার মিটার এইচবিবি রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে।
তিন্নি এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি করছেন। কাজের শুরু থেকেই রাস্তায় নিম্নমানের ইট ও বালুর পরিবর্তে ধুলা মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে এ পর্যন্ত অসাধু এ ঠিকাদার রাস্তা নির্মাণের জন্য মোট ১২০ গাড়ি ইট কিনেছেন। এর মধ্যে ৮৫ গাড়ি ইটই দুই নম্বর। ২২শ টাকা দরে ৭৩ গাড়ি ধুলাযুক্ত নিম্নমানের বালি কেনা হয়েছে। যে কারণে নির্মাণের পর পরই এ রাস্তায় ছোট-খাটো পাওয়ার টিলার ও বিভিন্ন যান চলাচল করায় ইট ভেঙে গুড়ো হয়ে গেছে। এইচবিবি’র বেডের নীচে ৬ ইঞ্চি বালু ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও বালুর পরিবর্তে ২ ইঞ্চি করে ধুলা মাটি দেওয়া হয়। এছাড়া বেডে ফাঁকা ফাঁকা করে ইট বসানো হয়েছে।
অভিযোগ পেয়ে গত ২৮ মার্চ বিকালে স্থানীয় সাংবাদিকরা সরেজমিন রাস্তা পরিদর্শনে গেলে রাস্তার কাজের কোন পরিচিতি বোর্ড দেখা যায়নি। শ্রমিক ছাড়া পাওয়া যায়নি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে। দুর্বাকুন্ডু ও কৃষ্ণপুর রাস্তার মুক্তার মন্ডলের জমির নিকট ব্রিজের দুই পাশে বেইজমেন্ট ছাড়া গাইড ওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। ধুলা মাটির উপরে ইট বিছিয়ে ওয়ালের কাজ করা হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানান, ঠিকাদারের লোকজন ভোর রাতে প্রয়োজনীয় ইট এনে সকাল ১০টার মধ্যে কাজ শেষ করছেন। এরপর রাস্তায় আর কাউকে পাওয়া যায় না। ইতিমধ্যে রাস্তার ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। স্থানীয়রা বলেন, যেভাবে ব্রিজের গাইড ওয়াল করা হচ্ছে তা আগামী বর্ষা মৌসুমে ভেঙে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এদিকে কাজ শেষ হতে না হতেই বিভিন্ন স্থানে রাস্তা দেবে গেছে। ছোট-খাটো যান চলাচলের কারণে ইট ভেঙে গুড়ো হয়ে গেছে। বেড কাটা, ইট সাজানো, গাইড ওয়াল তৈরিসহ ১শ মিটারের রাস্তায় সব মিলে ৩০ লক্ষ টাকা খরচ হবে বলে অভিজ্ঞজনেরা মনে করছেন। এভাবেই সরকারের বরাদ্দের টাকা লুটপাটে ব্যস্ত রয়েছেন ঠিকাদার।
এ ব্যাপারে ঠিকাদার কামাল হোসেনের ০১৭১২-২০৩০৮৪ নম্বরে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। দুর্বাকুন্ডু গ্রামের বাসিন্দা সেলিম বলেন, পিআইও অফিসের সহকারী প্রকৌশলী ওলিউল্লাহ ও কার্য সহকারী জাহাঙ্গীর আলম দুপুর ১২টার দিকে এসে রাস্তার কাজ বন্ধ করে দেন। কিন্তু ঠিকাদারের লোকজন রাস্তার কাজ চলমান রাখে। বিকাল ৫টার দিকে সাংবাদিকরা রাস্তার কাজ পরিদর্শনে গেলে শ্রমিকদের কাজ করতে দেখতে পান। এ ব্যাপারে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মুহম্মদ জহুরুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ঠিকাদারকে রাস্তার কাজ বন্ধ করতে বলা হয়েছে। কাজ বন্ধ না করলে পুনরায় মানসম্মতভাবে কাজ করে নেয়া হবে।