কল্যাণ ডেস্ক
আজ সেই ১৪ জুলাই। চব্বিশের এই দিনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের রাজাকার ট্যাগ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। যার প্রতিক্রিয়ায় তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে ছাত্রসমাজ। ফ্যাসিস্টের চোখে চোখ রেখে কথা বলে বিপ্লবী তরুণেরা।
প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার কম হয়নি গেল ১৬ বছরে। সেই ধারাবাহিকতায় কোটা সংস্কার আন্দোলন দমাতে, শিক্ষার্থীদের ওপর ছোড়া হয় রাজাকার ট্যাগ।
২০২৪ সালের ১৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রীকে ‘মেধা এবং কোটা খুব সহজে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাচ্ছে, যে সব মেধাবীরা চাকরি না পেয়ে কোটা চাকরি পেয়ে যাচ্ছে’ সাংবাদিক প্রভাষ আমিনের এমন প্রশ্নে শেখ হাসিনার উত্তর ছিলো ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নাতী পুতিরা মেধাবী না, যত রাজাকারের নাতী পুতিরা হলো মেধাবী’। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সংকটময় পরিস্থিতি শান্ত করার বদলে, যেনো আগুনে ঘি ঢালেন তিনি।
১৪ জুলাই শেখ হাসিনার ওই মন্তব্যের জেরে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ছাত্রসমাজ। রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে বের হয় প্রতিবাদ মিছিল। পরদিন সকালে ছাত্রলীগ নেতাদের ডেকে স্পষ্ট নির্দেশনা দেন ওবায়দুল কাদের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে তারা আসলে সরকার বিরোধী আন্দোলনই করতে যাচ্ছে।
এরপর দুপুরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয় ছাত্রলীগ। বিশেষ করে ছাত্রীদের ওপর বর্বর হামলার ঘটনা নাড়িয়ে দেয় গোটা ছাত্রসমাজকে। কিন্তু, তখনও হুংকার ছাড়েন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম।
সাদ্দাম বলেন, সব কিছুই মনে রাখা হবে। সবকিছুর জবাব দেয়া হবে।
এরপর রাজাকার-রাজাকার খেলার পরিণতি বুঝিয়ে দেয় ছাত্ররা। ১৬ জুলাই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রলীগকে বিতাড়িত করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন হলে গুড়িয়ে দেয়া হয় নেতাদের দখল করা কক্ষগুলো।
স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার রাজাকার ট্যাগের বিরুদ্ধে সেদিন প্রথম স্লোগান তুলেছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জসিম উদ্দিন হলের শিক্ষার্থীরা। ওই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সিফাত ইবনে আমীন প্রথম রাজাকার রাজাকার. স্লোগানে যুক্ত করেন. কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার স্বৈরাচার বাক্যটি।
সিফাত ইবনে আমীন বলেন, আমাদের লক্ষ্য ছিলো আন্দোলনকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রূপ দিবো। পরবর্তী যখন ১৪ জুলাই হাসিনা সবাইকে রাজাকারের নাতী পুতি ট্যাগ দিলো তখন প্রথমেই জসীমউদ্দিন হল থেকে তুমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার স্লোগান শুরু হয়।
ফ্যাসিবাদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে হলের তালা ভেঙে বেরিয়ে আসাটা সহজ ছিলনা নারী শিক্ষার্থীদের জন্য। যারা সম্মুখে ছিলেন উত্তাল সেই সময়ে। দুর্বার সেই সাহসের গল্পই শোনালেন সেদিনের জুলাইযোদ্ধারা।
নারী শিক্ষার্থীরা বলেন, রাত ১২টায় আমরা মনে করি যে না এখন ঘরে থাকার সময় না। সঙ্গে সঙ্গে বের হই আমরা। সেদিন যদি আমরা সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ না করতাম, তাহলে আমাদের কাছে মনে হয় ৫ আগস্ট হতো না।
তারা বলেন, এটা খুব অদ্ভুত ঘটনা যে ১৫ মিনিটে ৫ টা হল সংঘবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে আসছে। আমরা ম্যাচেন্জার গ্রুপে সবাইকে জিঙেস করলাম যে আমরা কি যাবো? সবাই এক বাক্যে হ্যাঁ বলে বেড়িয়ে গেল।
তারা আরও বলেন, যখন আপনি যৌক্তিক দাবিতে সবাইকে ট্যাগ দিচ্ছেন তখন সবাইর মনে যে ক্ষোভ ছিল তার তাড়নাই আমরা হল থেকে বেড়িয়ে এসেছি।
ভবিষ্যতে কেউ রাজনৈতিক স্বার্থে মহান মুক্তিযুদ্ধকে প্রজন্মের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাইলে, উচিত পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার হুঁশিয়ারিও দেয় ছাত্রসমাজ।