নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বহাল রাখার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন যশোরের মুক্তিযোদ্ধারা। যশোর জেলার সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ’র ব্যানারে শনিবার (১৩ জুলাই) দুপুর ১২টায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবনে এ সংবাদ সম্মেল অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মুজিব বাহিনী বৃহত্তর যশোর জেলার ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জাসদ’র কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি সভাপতি রবিউল আলম। সংবাদ সম্মেলনে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকার অবমাননা ও সুপ্রিম কোর্টের আদেশ লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদে জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা রবিউল আলম বলেন, সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্বশাসিত বা আধা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩ তম গ্রেডে (১ম ও ২য় শ্রেণি) কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে তারা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। তারা সমগ্র দিবস ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে অবরোধ আরোপ করছে, রেলপথ অবরোধ করছে। এমনকি সর্বাত্মক হরতালের কর্মসূচি দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ১৯৭৫ সাল থেকে সকল সরকারের আমলেই ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল থেকেছে। ২০১৩ সালে হাইকোর্টর এক রায়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণ এবং যথাযথভাবে অনুসরণ করতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে সরকার কর্তৃক ৯ম-১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত ছিল ২০১৩ সালের মহামান্য হাইকোর্টের প্রদত্ত রায়ের সাথে সাংঘর্ষিক।
এমতাবস্থায় ২০২১ সালে ৭ জন সরকার কর্তৃক ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের পরিপত্রকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। সেই অনুযায়ী গত ১০ জুলাই বুধবার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানিতে সকল পক্ষকে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের পর ঢাকার শাহবাগ মোড়সহ অন্যান্য পয়েন্টে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ করে যাবতীয় যানবাহনসহ পথচারীদের দুর্ভোগ সৃষ্টি করে। পরে ১১ ও ১২ জুলাই অবরোধ করে। শুধু তাই নয় টেলিভিশন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা দেখেছি আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ অবরোধ চলাকালে রাস্তায় ফেলে দেওয়া জাতীয় পতাকার উপর দিয়ে অবলীলায় হেঁটে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ জাতীয় পতাকা বিছিয়ে তাস খেলছে। তাদের মধ্যে অনেকে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টকে ভুঁয়া বলে কটূক্তি করছে।
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশে দেশে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল এবং আছে। দেশের স্বাধীনতার জন্য সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবার, অনুন্নত ও সুবিধাবঞ্চিত জেলা, অনগ্রসর নারী সমাজ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীদের পশ্চাৎপদতাকে বিবেচনায় নিয়ে উন্নয়ন সমতার আওতায় আনার নিরিখেই বাংলাদেশের সরকারব্যবস্থা চাকরিতে বিভিন্ন পর্যায়ে কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করে আসছে। ফলে সামগ্রিক প্রয়োজনেই কোটা বহাল রাখতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা হায়দার গণি খান পলাশ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এইএচএম মুযহারুল ইসলাম মন্টু, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আফজাল হোসেন দোদুল, আবুল হোসেন, সাবেক জেলা কমান্ডার শেখ আব্দুর রাজ্জাক, বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার, নজরুল ইসলাম চাকলাদার, অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ, আমিরুল ইসলাম রন্টুসহ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা।
