তবিবর রহমান
যশোর মোমিননগর সমবায় শিল্প ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর নকল করে দুই ব্যাংকে গচ্ছিত ৯২ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া হাত সিলিপের মাধ্যমে সমিতি থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন আরো ৩ লাখ টাকা। গত এক সপ্তাহ ধরে তদন্ত করে কমিটির সদস্যরা এ অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছেন। দুই-একদিনের মধ্যেই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবেন।
জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান জেলার বাঘারপাড়া উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মোমিননগর সমবায় শিল্প ইউনিয়নের সভাপতি মোজাম্মল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীনের বিরুদ্ধে খুলনা বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ে অনিয়মের অভিযোগ দেয়া হয়। তাদের অনিয়ম তদন্তে ৭ ফেব্রুয়ারি তিন সদস্যের কমিটি করে বিভাগীয় কার্যালয়। কমিটির অন্য দুজন হলেন যশোর জেলা সমবায় কার্যালয়ের পরিদর্শক ইকরামুল হক ও ঝিনাইদহ কার্যালয়ের পরিদর্শক জিল্লুর রহমান। গত এক সপ্তাহ ধরে কাগজপত্র যাচাই করে তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেছে। দুই-এক দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
মোমিননগর সমবায় শিল্প ইউনিয়ন থেকে খুলনা বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ে দেয়া লিখিত অভিযোগ মতে, মোমিননগর সমবায় শিল্প ইউনিয়নে সমিতির সদস্য সংখ্যা ৭৫। যা ১১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বর্তমান সভাপতি মোজাম্মল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন অন্য ৯ জনের স্বাক্ষর নকল করে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনে রেজুলেশন তৈরি করেন। তারা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক যশোর শাখায় সঞ্চয় থাকা এক কোটি টাকার বিপরীতে ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ৫০ লাখ টাকা সমিতির নামে ঋণ হিসেবে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। এক বছরের বেশি সময় ধরে গোপন থাকলেও চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে জানাজানি হয়। আর বিভিন্ন সময় হাত সিলিপে সমিতির কার্যালয় থেকে নিয়েছেন তিন লক্ষাধিক টাকা। অন্যদিকে জমি ক্রয়ের নামে ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর আইএফআইসি যশোর শাখা থেকে উত্তোলন করেছেন ৪২ লাখ টাকা। কিন্তু ইউনিয়নের নামে কোন জমি ক্রয় করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী দশ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে সমিতির সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত ও নিবন্ধকের অনুমোদন লাগে। কিন্তু অনুমোদনের ধার ধারেননি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।
আরও পড়ুন: কালীগঞ্জে শহীদ মিনারে বিএনপি ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত ৪
যশোর জেলা সমবায় কর্মকর্তা এসএম মঞ্জুুরুল হক বলেন, মোমিননগর সমবায় শিল্প ইউনিয়নে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ পেয়ে খুলনা বিভাগীয় সমবায় কার্যালয়ের যুগ্ম নিবন্ধক মিজানুর রহমান গত ৭ ফেব্রুয়ারি তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
তদন্ত কমিটির সদস্য যশোর জেলা সমবায় কার্যালয়ের পরিদর্শক ইকরামুল হক বলেন, চিঠি পেয়ে ১৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শুরু করে কমিটি। দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গেছে। অভিযুক্তরা নিজেই স্বীকার করেছেন তাদের ভুলের কথা। ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার কথা ছিল। সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছিল। দ্রুত প্রতিবেদন দেয়া হবে।
জানতে চাইলে মোমিন নগর সমবায় শিল্প ইউনিয়নের সভাপতি অভিযুক্ত মোজাম্মেল হোসেন মুঠোফোনে বলেন, ব্যক্তিগত কাজে টাকা উত্তোলন করা যাবে না তা আমাদের জানা ছিল না। আমাদের ভুল হয়েছে। আমরা টাকা ফেরত দিচ্ছি। কিছু টাকা ফেরত দিয়েছি। আর সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন বলেন, আমরা আগামীকালকের মধ্যে ৪২ লাখ টাকা দিয়ে দিয়ে দেব।
এদিকে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনিয়মের অভিযোগ করায় তাদের পক্ষ নিয়ে কয়েকজন হুমকি দিচ্ছে বলে যশোর কোতোয়ালি থানায় লিখিতভাবে জানিয়েছেন সমিতির সহ-সম্পাদক জহির উদ্দিন। জানতে চাইলে উপ-পরিদর্শক (এসআই) খালিদ হোসেন বলেন, থানায় দেয়া অভিযোগটি খোঁজ নেওয়ার জন্য তাকে দেয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীরাও আজ বুধবার তার কাছে এসেছিলেন। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও পড়ুন:শার্শায় ৪ কেজি স্বর্ণের বারসহ ২ পাচারকারী আটক
১ Comment
Pingback: পদ্মাসেতুর সাথে বেনাপোল স্থলবন্দর যুক্ততে ভারতের সাথে বাণিজ্য সম্প্রসারন ঘটবে: ভারতীয় হাইকমিশ