নিজস্ব প্রতিবেদক
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যশোর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীকের এনামুল হক বাবুল ভোটের মাঠের চেয়ে আদালতের বারান্দায় ‘ঘুরছেন বেশি’। দল থেকে তিনি নৌকা প্রতীক পেলেও নির্বাচন কমিশন ও হাইকোর্টে ঋণখেলাপির অভিযোগে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়। পরে হাইকোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত তার প্রার্থিতা ফিরিয়ে দেন। কিন্তু স্বতন্ত্র প্রার্থী রণজিত কুমার রায় ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রার্থী সুকৃতি মন্ডল সুপ্রিম কোর্টে ফের তার প্রার্থিতা বাতিলের আবেদন করেন। আগামী ২ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে বিষয়টির ফয়সালা হবে। আর এ রায় দেখে ভোটের মাঠে নামবেন স্বতন্ত্র প্রার্থী নৌকা বঞ্চিত রণজিত কুমার রায়।
তফসিল অনুযায়ী সব বৈধ প্রার্থী ১৮ ডিসেম্বর থেকে পুরোদমে প্রচারণায় থাকলেও যশোরের ছয়টি আসনের মধ্যে ব্যতিক্রম যশোর-৪ আসনটি। বাঘারপাড়া-অভয়নগর উপজেলা ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ আসনের নৌকার প্রার্থী এনামুল হক বাবুলের ঋণখেলাপির অভিযোগ তোলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান এমপি রণজিত কুমার রায় ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রার্থী সুকৃতি মন্ডল। ভোটের মাঠ ছেড়ে রণজিত রায় ও সুকৃতি মন্ডল নৌকার মাঝি বাবুলকে কোর্টে পরাস্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের কাছের লোকজনের ভাষ্য, বাবুলের ব্যক্তি ইমেজ রয়েছে। আছে দলের প্রতীক। ভোটের মাঠে তার বিজয় ঠেকানো যাবে না। এজন্য তার প্রার্থিতা বাতিল করতে পারলে ভোটের মাঠের চিত্র রাতারাতি পাল্টে যাবে। তাই মাঠ ছেড়ে আদালতে হারাতে সব ধরনের চেষ্টা করে যাচ্ছে রণজিত ও সুকৃতি মন্ডল। আর আদালতে ন্যায় বিচার পেতে বারান্দায় বারান্দায় ঘুরছেন এনামুল হক বাবুল। ২ জানুয়ারি রায় পক্ষে এলে মোটামুটি ভোটে তার (বাবুল) জয় নিশ্চিত বলে ভোটার ও রাজনীতি সচেতন মানুষ মনে করছেন।
এবিষয়ে এনামুল হক বাবুল বলেন, ‘মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই আমি ঢাকায় নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে কোর্টের বারান্দায় বারান্দায় দিন পার করছি। স্বাভাবিকভাবে মাঠে ভোট করার জন্য যে সময় দিতে হয় আমি আইনের মারপ্যাচের কারণে দিতে পারিনি।’
অন্যদিকে বাঘারপাড়ায় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন নিয়ে প্রতিদিনই চলছে গ্রুপিং রাজনীতি। যা গত বৃহস্পতিবার বাঘারপাড়া উপজেলার আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হাতাহাতির মতো ঘটনা ঘটে। তবে ৮ সদস্যর পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী বিশ্বাসকে। সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলাইমান হোসেন বিশ্বাস, যশোর মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যাপক ডা. নিকুঞ্জ বিহারী গোলদার, সাবেক অতিরিক্ত সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ কুমার অধিকারী, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মোল্যা, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল কবির বিপুল ফারাজী, দোহাকুলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু মোতালেব তরফদার এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সহকারি অধ্যাপক নজরুল ইসলামকে। কমিটি গঠন হলেও এখন পর্যন্ত তেমন কোন কর্মকাণ্ড চোখে পড়েনি। অপরদিকে, তিন বারের সংসদ সদস্য ও বর্তমান এমপি রনজিৎ কুমার রায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মাঠে রয়েছেন। ভোটের মাঠে তাকে বা তার কোন অনুসারী, পোস্টার দেখা না গেলেও গোপনে ভোটের প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
রনজিৎ রায় সাংবাদিকদের বলেন, আমি ভোটের মাঠে নেই। আমার কোন কর্মী সমর্থক যদি আমার জন্য প্রচার প্রচারণা চালায়। আমি তো কাউকে নিষেধ করতে পারি না, এটা গণতন্ত্রের দেশ। আগামী জানুয়ারি দুই তারিখে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে আরো ৬ জন বিচারপ্রতি নিয়ে এনামুল হক বাবুলের প্রার্থিতা বাতিলের রিভিউ শুনানি রয়েছে তারপর আমি ভেবে দেখবো’।
অন্যদিকে, যশোর-৪ নির্বাচনী এলাকায় চোখে পড়ার মতো প্রচার প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন জাতীয় পার্টির জহুরুল হক জহির, তৃনমূল বিএনপির অবসবপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এম শাব্বির আহম্মেদ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সুকৃতি কুমার মন্ডল।