কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
ক্লিনিকের খরচ মেটাতে ৩ দিনের শিশু সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছিলেন মা কোকিলা খাতুন। এরপর কোল শুন্য হয়ে সন্তানের জন্য ছটফট করতে থাকে মা। তখন শিশু সন্তানকে ফেরত চাইলেও দিতে অস্বিকৃতি জানায় ক্রেতারা। পরে শিশুটির বাবা আকাশ আলী বৃহস্পতিবার কালীগঞ্জ থানাতে অভিযোগ দিলে পুলিশের সহযোগিতায় ওইদিনই শিশুটি ফিরে পায় তার মায়ের কোল।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চরখাজুরা গ্রামের আকাশের স্ত্রী শিশুটির মা কোকিলা খাতুন জানায়, তার স্বামী দ্বিতীয় বিবাহ করার পর থেকেই তার কোন খোঁজ খবর নিত না। এ কারণে ১ মাস আগে গর্ভবতী অবস্থায় কোকিলা তার বাবার বাড়িতে চলে আসে। এরিমধ্যে ২৮ নভেম্বর প্রসব বেদনা উঠলে কোকিলার মা তাকে কালীগঞ্জ শহরের ডক্টরস ক্লিনিকে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানে ওইদিনই বিকালে সিজারিয়ানের মাধ্যমে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।
দরিদ্র পরিবারের সন্তান কোকিলা জানায়, সন্তান জন্মের পরও তার স্বামী কোন খোঁজ খবর নেয়নি। এদিকে ক্লিনিকের সিজার ও ঔষধপত্র খরচের টাকা যোগাড়ে তারা দিশেহারা হয়ে পড়ে। টাকা যোগাড়ে তার মা আনোয়ারা খাতুন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকে। অবশেষে কোন উপায় না পেয়ে ৫৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ৩ দিন বয়সের শিশুটিকে তারা কালীগঞ্জে হেলায় গ্রামের এক নিঃসন্তান দম্পতির হাতে তুলে দেন। কিন্তু একদিন না যেতেই সন্তানের মায়ার টানে দিশেহারা হয়ে পড়ে মা কোকিলা।
এদিকে পরিবারের থেকে সন্তান বিক্রির খবর শুনে স্ত্রীর কাছে ফিরে আসেন শিশুটির বাবা আকাশ আলী। তিনি জানান, তাকে না জানিয়ে সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। পরে ঘটনাটি শুনে সন্তান ফেরত পেতে হেলায় গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে সোহাগসহ ২ জনকে অজ্ঞাত করে থানাতে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই ওইদিন বিকালে পুলিশ ফুটফুটে শিশুটিকে উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেয়।
অর্থের বিনিময়ে শিশুটিকে গ্রহন করা হেলাই গ্রামের সোহাগ আলী বলেন, আমরা নিঃসন্তান দম্পতি। শিশুটির নানি আনোয়ারা খাতুনের কাছে জানতে পেরে শিশুর মা ও এলাকার জনপ্রতিনিধিদের জানিয়ে স্ট্যাম্প করে শিশুটিকে দত্বক নিই। তিনি জানান, শিশুটিকে সিজারে ক্লিনিকের খরচপত্র বাবদ ৫৫ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে পুলিশের নির্দেশেই শিশুটিকে তার মাসহ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছি।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আবু আজিফ জানান, স্বামীর অবহেলা ও অভাবের তাড়নায় কোকিলা নামে এক মা তার শিশু সন্তানকে দত্তক দিয়েছিল। পরে বাবার অভিযোগ পেয়ে পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছে।