জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: বিস্ময়কর সব উদ্ভাবনী নিয়ে যশোর জিলাস্কুল শুরু হয়েছে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলা। জেলার ৪৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবনী যন্ত্রপাতি স্থান পেয়েছে স্টলে। এসব দেখে মুগ্ধ যশোরের জেলা প্রশাসকসহ দর্শণার্থীরা। বহুমাত্রিক এসব উদ্ভাবনীতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা দরকার। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাবে। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে, ঘুরে যাবে অর্থনীতির চাকাও-এমনি প্রত্যাশা ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের।
তার বিহীন বিদ্যুৎ সংযোগ, সিস্টেম লস প্রতিরোধ ও দূর-দূরান্ত থেকে মোবাইল টিপে ক্ষয়-ক্ষতি থেকে রক্ষা যন্ত্র, ভূমিকম্প, নদীতে পানি বৃদ্ধি ও আগুন লাগলে এলার্ম বেজে ওঠার বিস্ময়কর যন্ত্রসহ নানা উদ্ভাবনের সমারোহে জিলাস্কুলে তৈরি হয়েছে ভিন্ন এক আবহ।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় প্রধান অতিথি হিসেবে বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। এরআগে জিলা স্কুল অডিটোরিয়ামে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় প্রধান অতিথি বক্তব্য রাখেন তিনি। জেলা শিক্ষা অফিসার একেএম গোলাম আযম সভাপতিত্ব করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন এডিসি (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন।
জিলা স্কুলের দক্ষিণ ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় উদ্ভাবনী সরঞ্জামের প্রদর্শনী স্টল ঘুরে দেখেন প্রধান অতিথি তমিজুল ইসলাম খান। এ সময় তিনি ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞান চর্চা ও উদ্ভাবনী কাজে আরও মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন। প্রদর্শনী মেলায় আসা কেশবপুরের মনোরঞ্জন ও চৌগাছার একটি কলেজ অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হোসেন দৈনিক কল্যাণকে বলেন, ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন উদ্ভাবন করে অনেকেরই তাক লাগিয়ে দিয়েছে। তাদের প্রতিভা বিকাশে সরকারি পৃষ্টপোষকতা দরকার-যোগ করেন তারা। তারা বলেন, শহরের খ্যাতিমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পেছনে ফেলে অনেক ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে গ্রামের ছেলেমেয়েরা। মেলায় প্রদর্শিত বিস্মময়কর উদ্ভাবনগুলোর অধিকাংশ এসেছে উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এমন মন্তব্য তাদের।
মেলায় অংশ নিয়েছে চৌগাছা এসএম হাবিবুর রহমান পৌর কলেজের একাদশ শ্রেণির দুই ক্ষুদে বিজ্ঞানী সেহরিয়ার কবীর ও মৃন্ময় পাল কাব্য। তাদের আবিস্কার স্মার্ট সুইচ, ওয়্যারলেস ইলেক্ট্রিসিটি, হিউমিডিটি টেমপ্যারেচার নামে ৩টি যন্ত্র। তারা দর্শণার্থীদের দেখান কিভাবে তার বিহীন বিদ্যুৎ সংযোগ, সিস্টেম লস কমানো ও যেকোন স্থান থেকে স্মার্ট মোবাইল ফোনের সাহায্যে ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
তরিকুল ইসলাম কলেজের ক্ষুদে বিজ্ঞানী মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে সহপাঠী রেতআন আহম্মেদ রিফাত ও লিন্ডা উদ্ভাবন করেছে ভূমিকম্প, অগ্নিকান্ড ও নদীতে পানি বাড়লে আগাম সংকেত পাওয়ার যন্ত্র এলার্ম। হঠাৎ বৃষ্টিতে ছাদে বা যেকোন স্থানে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভিজলে মোবাইল ফোনে টুংটাং করে বেজে উঠবে এলার্ম-এটি কিভাবে সম্ভব তাও দেখিয়েছে দর্শণার্থীদের।
মণিরামপুর উপজেলার নেঙ্গুড়াহাট স্কুল এন্ড কলেজের ক্ষুদে বিজ্ঞানী শাহারিয়ার আহমেদ, ফরহাদ হোসেন ও হাদিউজ্জামান উদ্ভাবন করেছে বাড়িতে অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ ঢুকলে তা আগাম জানান দেয়ার যন্ত্র। এছাড়া ট্যাংকি পানিতে ভরে গেলে তাদের আবিস্কৃত যন্ত্র পানি সরবরাহ অটো বন্ধ করে দেবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনেও বানিয়েছে আরেকটি বিস্ময়কর যন্ত্র। তারা প্রকল্পের নাম দিয়েছে মডার্ন ক্লাইমেট সোসাইটি।
কেশবপুরের পাঁজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সৌভিক চৌধুরী, রিয়াদ হাসান শুভ ও রাকিব পারভেজ আবিস্কার করেছে বিস্ময়কর যন্ত্র। যা দ্রুতগতির রেলে স্থাপন করে রাখলে দুর্ঘটনার আগে সংকেত দেবে। অটো পড়ে যাবে ব্যারিয়ার। যেকোন যানবাহনকে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষায় তারা উদ্ভাবন করেছে আরও একটি বিস্ময়কর যন্ত্র। যা গাড়িতে থাকলে আগাম সংকেত পেয়ে চালক হতে পারবেন সর্তক। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায় সামনে থেকে গাড়ি আসছে কি-না তা চোখে দেখা না গেলে সংকেত দেবে চালককে।
তাৎক্ষণিক চালক বুঝে যাবেন সামনে গাড়ি আসছে। নদীতে আধুনিক সেতু নির্মাণে এই ৩ শিক্ষার্থী আবিস্কার করেছেন চমকপ্রদ যন্ত্র। সেতু পানিতেই ভাসবে। নৌকাসহ জলে চলাচলের যেকোন যানবাহন আসলে সয়ংক্রিয়ভাবে সেতুর এক মাথা উঠে যাবে উপরে। যানটি চলে যাওয়ার পরই সেতু ফিরবে আগের অবস্থায়।
এই ৩ ক্ষুদে বিজ্ঞানী দৈনিক কল্যাণকে জানায়, সরকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসলে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে দিতে পারবে তাদের এসব উদ্ভাবনী যন্ত্র। তখন চূড়ান্ত নামকরণ করতেও সুবিধা হবে।
যশোর সম্মিলনী ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা স্টলে সাজিয়ে বসেছে সমন্বিত কৃষি খামার। কম জমিতে একই সাথে মাছ চাষ, হাঁস পালন, গো-খাদ্য ও সবজি উৎপাদনের পাশাপাশি বায়োগ্যাস ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে দাবি ১০ম শ্রেণির ছাত্র আফরাজ আহম্মেদ সিয়ামের।
বৈশ্বিক সমস্যা দুরীকরণে বিস্ময়কর এক যন্ত্রের উদ্ভাবন করেছে মধুসূদন তারাপ্রসন্ন বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী দিপান্তিতা রায়। এই ক্ষুদে বিজ্ঞানীর দাবি তার উদ্ভাবনীয় যন্ত্র কার্যকর ভুমিকা রাখতে পারবে। মেলার আজ (বুধবার) সমাপনী দিনে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হবে।