সুজিৎ কুমার রায়, কয়রা: সুন্দরবনের কোল ঘেষা খুলনার উকূলীয় উপজেলা কয়রার আমাদি ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে তরমুজ চাষ ৮ হাজার বিঘা ছাড়িয়েছে। স্থানীয়রা জানান, বিগত বছরে এই ইউনিয়নে কয়েকটি গ্রামে তরমুজ চাষে বাম্পার ফলন ও চাষিরা লাভবান হওয়ায় দ্বিগুণ জমিতে এবার চাষ হয়েছে। এর মধ্যে উন্নত জাতের পাকিজা, বারি-১, বারি-২ ও ড্রাগন ও রিজেন্ট-২ জাতের তরমুজের বীজ রোপণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইউনিয়নে চান্নিরচক, হাতিয়ারডাঙ্গা, হরিকাটি, চন্ডিপুর, খেওনা, পাটনিখালি, চকগোয়ালবাটি, চক চান্নামারা, মসজিদ কুড়, নাকশা, ভান্ডার পোল ও ভাগবা গ্রামে এক টুকরো জমি পড়ে নেই। এছাড়াও বাগালী, মহারাজপুর, কয়রা সদর ও উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নেও পরীক্ষামূলক কিছু কিছু জমিতে তরমুজ চাষ হচ্ছে। যে কারণে এসব গ্রামের গরু ছাগলের মালিকরা এই মুহূর্তে তাদের পশু অন্য এলাকায় আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে লালন পালনের জন্য পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।
তরমুজ চাষিরা জানান, আমন ধান কাটার পর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে তরমুজ চাষ শুরু হয় এবং ইতোমধ্যে অধিকাংশ জমিতে তরমুজের চারা গজিয়েছে। এদিকে প্রতিদিন চাষিরা পরিবারের নারী, পুরুষ ও তাদের স্কুলগামী ছেলেমেয়েদেরকেও সাথে নিয়ে সকাল বিকেল তরমুজ ক্ষেতে পানি দিতে দেখা যাচ্ছে। তাদের যেন একটু ফুসরত নেই। চাষিদের বক্তব্য বড় ধরনের বৃষ্টি ও বিগত বছরের মত দীর্ঘস্তায়ী খরা দেখা না দিলে এবারও লাভের আশা করছেন তারা।
চাষিরা আরও জানায়, আমাদী ইউনিয়নে কোথাও গভীর নলকূপে মিষ্টি পানি না পাওয়ায় পুকুর ও খালের পানি দিয়ে তরমুজের পাশাপাশি পুইশাক, কুমড়া, করলা, ঢেড়শ, ঝিঙা ও অন্যান্য সবজি চাষ করছেন তারা। যে কারণে এসব চাষিরা বিগত কয়েক বছর যাবত জাতীয় সংসদ সদস্য ও ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট এই ইউনিয়নে ছোট বড় ২০ টি খাল খননের দাবি জানিয়ে আসছেন।
কিনুকাটি গ্রামের অমিত সানা জানান, গতবারের চেয়ে এবার বীজ খুব ভাল গজিয়েছে কিন্তু কীটনাশক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে এবং ডিলাররা ভাল মানের কীটনাশক না এনে নরমাল কোম্পানির মাল বেশি দামে সরবরাহ করছে। ভাল কোম্পানির কীটনাশক সরবরাহ হলে গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ ফলন পাবেন বলে কৃষকরা দাবি করেন।
তরমুজ চাষের বিষয় চন্ডিপুর গ্রামের সফল তরমুজ চাষি অধ্যক্ষ ড. চয়ন কুমার রায় জানান, এই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে বিগত বছরে চাষের পর থেকে তরমুজ উত্তোলন পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী খরার কারণে ফলন কম হলেও ২ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি তরমুজ অন্যান্য জেলায় পাইকাররা নিয়ে গেছে। তিনি আশা করছেন চলতি মৌসুমে দ্বিগুণ জমিতে তরমুজ চাষ হওয়ায় শিলাবৃষ্টি না হলে এবার দ্বিগুণ উৎপাদন হবে।
মসজিদকুড় গ্রামের চাষি জোবায়ের হোসেন জানান, গত বছর ২০ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করে ভাল দাম পাওয়ায় তিনি বিঘা প্রতি ৭০ থেকে ১ লাখ টাকা বেচাকেনা করে খরচ বাদে লাভবান হওয়ায় এবার ৩০ বিঘা জমিতে চাষ করে ২৪ ঘন্টাই মাঠে পড়ে আছেন।
তিনি বলেন, এ বছর তরমুজ চাষ বেশি পরিমাণে হওয়ায় জমির হারিও বেড়ে গেছে। এখন ১ বিঘা জমি করতে খরচ হচ্ছে ২০ হাজার টাকা। অন্যদিকে এলাকার একাধিক চাষির অভিযোগ এলাকার খালগুলো ইজারা মুক্ত করে খনন করে সেচ ব্যবস্থা করা হলে, তরমুজসহ সবজি চাষে আমাদী ইউনিয়ন বিপ্লব ঘটাবে।
সংসদ সদস্য আকতারুজ্জামান বাবু জানান, বিগত বছর দীর্ঘস্থায়ী করার মধ্যে আমাদি ইউনিয়নের তরমুজ চাষিরা রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায়ও তরমুজ পাঠিয়ে বিপ্লব ঘটিয়েছিল।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আসাদুজ্জামান জানান, দেশের উপকূলীয় এলাকা কয়রায় চলতি মৌসুমে যে হারে তরমুজের চাষ হয়েছে, বড় ধরনের কোন আঘাত না আসলে এবং বাজারে ভাল মূল্য পেলে ভবিষ্যতে দেশের এক চতুর্থাংশ এলাকায় এখানকার তরমুজ চাহিদা পূরণ করবে।