কল্যাণ ডেস্ক: চলতি বছরে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে বলে অর্থনীতিবিদেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাই নতুন বছরে খুব বেশি প্রবৃদ্ধির আশা হয়তো করা যাবে না। তবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা যেন ধরে রাখা যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে। এটা সম্ভব হলে আগামী বছরে আমরা ভালো প্রবৃদ্ধি আশা করতে পারব।
আমরা বেশ কতগুলো অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিয়েই নতুন বছরটা শুরু করেছি। আমাদের অর্থনীতি এখনো করোনার ধাক্কা পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এর সঙ্গে নতুন বছরে করোনার নতুন একটি ঢেউয়ের শঙ্কাও তৈরি হয়েছে।
গত বছর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যে বৈশ্বিক সংকট তৈরি হয়েছে, তা রয়ে গেছে। এ ছাড়া প্রবাসী আয় কমা, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের বাজারে অস্থিতিশীলতার মতো বিষয়গুলো বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল। তবে সাধারণ মানুষকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে মূল্যস্ফীতির ঘটনা। গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি আমরা দেখেছি এ সময়।
নতুন বছরে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে আমাদের। সমস্যা যে পর্যায়ে আছে, তা যেন আরও খারাপ অবস্থায় না যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু করণীয় আছে আমাদের সামনে। প্রথমেই বলব, সাধারণ মানুষের কষ্ট কমাতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তাজাল আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম কমলো ৬৫ টাকা
এর মাধ্যমে দরিদ্র্য মানুষকে সহায়তা করতে পারি। সবচেয়ে জোর দিতে হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। বাহ্যিক কিছু প্রভাবের কারণে বাজারে পণ্যের দাম বাড়ছে, এটা ঠিক। এটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না, তবে মোকাবিলা তো করতে পারি।
খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন, যার প্রভাব গিয়ে পড়ছে ভোক্তাদের ওপর।
এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের তদারকি সংস্থাগুলোর কার্যক্রম বাড়াতে হবে। সামনে রোজার মাস। এ জন্য বিশেষ তদারকি বাড়ানো প্রয়োজন। এটা এক অর্থে নির্বাচনেরও বছর। সব মিলিয়ে বাজারে স্থিতিশীলতা ধরে রাখা আমাদের জন্য খুব জরুরি।
অন্যদিকে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য দেশে কর–জিডিপির হার বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। সরকার ইতিমধ্যে করজাল বাড়াতে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে।
আরও কীভাবে করজাল বাড়ানো যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি ডলারের জোগান বাড়াতে হলে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়াতে হবে। এ জন্য রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয় পাঠানোর প্রক্রিয়া আরও সহজ করা যেতে পারে।
প্রবাসীদের আয় কীভাবে বৈধ চ্যানেলে আনা যায়, সে উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি রপ্তানি আয় বাড়াতে নতুন বাজার সৃষ্টি, উচ্চমূল্যের পণ্য তৈরি ও পণ্যবৈচিত্র্য বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
মেট্রোরেলসহ আমাদের অনেকগুলো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। এসব প্রকল্প যদি কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে অর্থনীতির গতি বাড়বে। নতুন বছরে এটাও একটা চ্যালেঞ্জ হবে আমাদের জন্য।
চলতি বছরে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে বলে অর্থনীতিবিদেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাই সব মিলিয়ে নতুন বছরে খুব বেশি প্রবৃদ্ধির আশা হয়তো করা যাবে না। তবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা যেন ধরে রাখা যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে। এটা সম্ভব হলে আগামী বছরে আমরা ভালো প্রবৃদ্ধি আশা করতে পারব।
আরও পড়ুন: এক টাকার পণ্য যেন রূপকথার গল্প
১ Comment
Pingback: স্বর্ণের দামে নতুন রেকর্ড - দৈনিক কল্যাণ