জেমস রহিম রানা ও মনিরুজ্জামান মনির:
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মির্জা আব্বাস বলেছেন, খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে না পাঠালে আমরা সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করব। বর্তমান সরকার ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতেই দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে হত্যা করতে চায়। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে আন্দোলন এখন দুর্বার হয়ে উঠেছে। সরকার তা সহ্য করতে পারছে না। আর এ কারণে ইস্যু অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে, দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণ সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল হোসেন আজাদ, জয়ন্ত কুমার কুন্ডু, জেলা বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট সাবেরুল হক সাবু, আলী আকবার চুন্নু, দেলোয়ার হোসেন খোকন, নুর উন্ নবী,সাংবাদিক আনোয়ারুল কবির নান্টু, অ্যাডভোকেট আব্দুল গফুর, অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেন, কাজী হায়দার ডাবলু, আমিনুর রহমান মনি, সাবেরা নাজমুল মুন্নি, জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন, তরিকুল ইসলাম মনি, নূরুজ্জামান লিটন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রবিউল ইসলাম, মহিলা দলের রাজিয়া রহমান, ছাত্র নেতা সাজেদুর রহমান সাগর, কামরুজ্জামান বাপ্পীসহ বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের জেলা ও উপজেলানেতা কর্মীরা।
মির্জা আব্বাস বলেন, একজন মানুষের চিকিৎসার জন্য আমাদের সারা দেশের সভা করতে হচ্ছে। এটা একটা নজিরবিহীন ঘটনা। আর এই সভা বন্ধ করে দেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা আমাদের নেত্রীকে আটকে রাখতে পারবে না। এই সমাবেশ বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যাতে নেতাকর্মীরা না আসতে পারে তার জন্য অটো রিকশা ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এত বাধা উপেক্ষা করে বিএনপির নেতাকর্মীরা তারেক রহমান এবং খালেদা জিয়াকে অন্তর থেকে ভালোবেসে এই সমাবেশে উপস্থিত হয়েছেন।
তিনি বলেন, আমাদের সভা প্রতিবাদসভা নয়, দাবি আদায়ের সভা। আমাদের নেত্রীর মুক্তি চাই এবং সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে চাই।
এই সরকার ফাঁসির আসামিকেও মুক্তি দিয়ে বিদেশ যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু আমাদের নেত্রীকে জেলে ভরে রেখেছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে। কিন্তু অসুবিধা নেই নেত্রী জেলে আছে থাকবে এই নেত্রীর কর্মীরা সরকারকে পতন ঘটাবে ইনশাআল্লাহ। কিন্তু বিশ্ববাসী জেনে গেছে এই সরকার খুনি সরকার, এই সরকার গুন্ডা সরকার, এই সরকার ফ্যাসিবাদী সরকার। এই সরকারের আমলে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আমেরিকার ভিসা পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে। তবুও তাদের কোন বিচার হচ্ছে না। নির্বাচন কমিটি গঠন করার জন্য সার্চ কমিটি তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এই সরকারের আমলে কোন নির্বাচন নয়। আমরা রক্ত দিয়েছি এই দেশ স্বাধীন করেছি অথচ আজ বিশ্বে এই দেশ মাফিয়া দেশ হিসেবে পরিচিত। এই কথা শোনার জন্য এদেশ স্বাধীন করিনি ।
গতকাল বুধবার যশোর টাউন হল ময়দানে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেয়ার দাবিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা আব্বাস আরও বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জন্য আমরা দয়া চাচ্ছি না। এটা তার অধিকার। জাতি জানতে চায় খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাবেন কিনা? যদি না পাঠান তাহলে আমরা সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করব।
মির্জা আব্বাস বলেন, আমি গত কয়েকদিন আগে বরিশাল, ফরিদপুর জেলায় সফরে গিয়েছিলেন। আমি দেখেছি- কী আওয়ামী লীগ, কী বিএনপি সকলেরই এক কথা। কেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না, কেন তাকে তিলেতিলে মেরে ফেলা হচ্ছে?
বিএনপির চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশনেত্রীর কতদিন আয়ু আছে, আমি জানি না। আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি দুই-তিন দিন, হাতের ইশারায় কথা হয়েছে। তিনি মোটেও ভালো অবস্থায় নেই ।
তিনি বলেন, আমরা একের পর এক কথা বলে জনমত সৃষ্টি করছি। জনমত এগিয়ে আসছে।
মির্জা আব্বাস বলেন, সরকার চায় বিএনপির ওপর অত্যাচার করতে হবে, বিএনপিকে ধ্বংস করতে হবে। সুতরাং তারা মনে করে, একমাত্র খালেদা জিয়াকে ধ্বংস করতে পারলেই বিএনপি ধ্বংস হবে। জিয়ার পরিবার নিয়ে, খালেদা জিয়ার পরিবারের একটি শিশু বাচ্চাকে নিয়েও কথা বলেছে এই সরকারের মন্ত্রীরা।
তিনি বলেন, রাস্তা থেকে ধরে এনে মন্ত্রী বানিয়ে দেবেন, দেশের লোকেরা মান্য করবে, এটা ভাবার দরকার নাই। আমরা বিএনপির নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার সুসন্তান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও মুক্তির দাবিতে দেশ আজ সরব। তাই সরকারের উচিত হবে খালেদা জিয়াকে মুক্তি ও বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
তিনি বলেন, বিএনপি নেতা কর্মীদের ওপর অব্যাহত নির্যাতন চালিয়ে, বেগম জিয়ার চিকিৎসা বন্ধ করে বা পুলিশ দিয়ে সভা সমাবেশ বন্ধের চেষ্টা করে গদিতে টিকে থাকা যাবে না। সেটা হবে মুদির দোকানে ডিকশনারী খোঁজার মতো। জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ। তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।
নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনি বলেছেন, বিএনপিকে বাংলাদেশে কোথাও সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। কারণ আপনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান কোন এক সময় বলেছিলেন যে সরকারের বিরুদ্ধে যারা কথা বলবে তাদেরকে আমরা লাল ঘোড়া দেখিয়ে দেবো।
তিনি বলেন, আজ যশোরের সমাবেশ করতে দেয়া হবে না বলে টাউন হল ময়দানে তালা মেরে দেয়া হয়েছে। রিকশা ইজিবাইক বাস পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং মোড়ে মোড়ে পুলিশ দিয়ে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে। সমাবেশ বন্ধ করে দেয়ার জন্য এমনকি যশোর ডেকোরেশনের দোকান ও মাইকের দোকান গুলোকে নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারা যেন ডেকোরেশন না করে। তিনি বলেন আমরা দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি।বিএনপি নেত্রী চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারবে না এটা হতে পারে না।
বিশেষ অতিথি বিএনপি চেয়ার পার্সনের উপদেষ্টা মশিউর রহমান বলেন, এই জালিম সরকার আমাদের দৃষ্টিকে, মুখের কথাবার্তাকে অন্যদিকে সরিয়ে দিতে চায়। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না। আমাদের দৃষ্টি একটাই দেশনেত্রীর সুচিকিৎসা, দেশনেত্রীর মুক্তি। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র পুনঃর্প্রতিষ্ঠিত হবে। আর আজ যশোর থেকেই সেই আন্দোলন শুরু হলো। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির নেতা কর্মীরা ঘরে ফিরে যাবে না।
তিনি আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছেন, বেগম জিয়া সংসদীয় গণতন্ত্র দিয়েছেন, দেশের উন্নয়নে কাজ করেছেন, মানুষের কথা বলার অধিকার দিয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমরা অনেকেই তার কল্যাণে মন্ত্রী-এমপি হয়েছি। তার নাম নিয়ে, তার দলের পতাকা নিয়ে আমরা নির্বাচনে পাস করেছি। এবার আমাদের দেওয়ার পালা, নেওয়ার নয়। তাকে এখন দেওয়ার চেষ্টা করবো।
দীর্ঘ ৯ বছর পর যশোরে প্রকাশ্যে বড় ধরনের কোনো জমায়েত করেছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে যশোরে গণসমাবেশ আয়োজন করা হয়।সমাবেশকে কেন্দ্র করে শহরের মোড়েমোড়ে বিপুল সংখ্যক আইন শৃংখলা বাহিনী মোতায়েন করা হয় এবং শহরের প্রবেশদ্বার গুলোতে ব্যারিবেড সৃষ্টি করে দলীয় নেতাকর্মীদের বহনকারী যানবাহন আটকে দেয়া হয়। এতদাসত্বেওপুলিশের সকল বাধা উপেক্ষা করেবিএনপি’র গ্রামঅঞ্চলের নেতাকর্মীরা মহাসমাবেশ সফলের লক্ষ্যেশহরের দিকে স্রোতের মতো উঠে এসেছে।
দুপুর ২টায় এ সমাবেশ অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও সকাল ৯টার মধ্যেইস্থানীয় টাউন হল মাঠের দখল নেয় দলটির নেতাকর্মীরা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে শহরে জন¯্রােত বাড়তে থাকে। বেলা ১২টার মধ্যেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় টাউন হল মাঠ। বেলা ৩টায় বুলেট প্রুফ গাড়ি নিয়ে মাঠে প্রবেশ করেন মির্জা ফকরুল ইসলামসহ ন্দ্রেীয় নেতৃবৃন্দ। এসময় আশেপাশের সড়কেও তিল ধারণের ঠাই ছিল না। সবমিলিয়ে গণ সমাবেশ পরিণত হয় জনসুমদ্রে।