আনোয়ার হোসেন, মণিরামপুর
২০২২ সালের আগস্ট মাসে যশোরের মণিরামপুরের হাকোবা ঈদগাহ মোড় হতে সোনাডাঙ্গা পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র অভিমুখী দেবিদাসপুর সড়কটির খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু করেন ঠিকাদার। তখন দুই হাজার ৬১০ মিটার (২.৬১ কিলোমিটার) সড়কের ইটের সলিং তুলে প্রায় ৫০০ মিটার রাস্তা খুঁড়ে গর্ত করে আর কাজ করেননি ঠিকাদার। সেই থেকে পাঁচ মাসের অধিক সময় সড়কটি পড়ে আছে। ফলে সড়কটিতে চলাচলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন হাজারো মানুষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সোনাডাঙ্গা পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থেকে দেবিদাসপুর স্লুইসগেট পর্যন্ত রাস্তা গভীর করে খোঁড়া রয়েছে। রাস্তার এ অংশে কিছু বালি দেওয়া হয়েছে। রাস্তার বাকি অংশের হাকোবা শ্মশানঘাট পর্যন্ত ইটের সলিং তুলে ফেলা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, গেল বছর সোনাডাঙ্গা পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র থেকে দেবিদাসপুর স্লুইসগেট পর্যন্ত রাস্তা খোঁড়ার পর পাশের হরিহর নদী থেকে অবৈধভাবে বালি তুলে রাস্তায় ফেলছিল ঠিকাদারের লোকজন। খবর পেয়ে তখন ভ্রাম্যমাণ আদালত বালি তোলা যন্ত্র জব্দ করে। এরপর থেকে আর রাস্তার কাজ চলেনি।
দেবিদাসপুর-হাকোবা সড়কটি হয়ে বাকোশপোল, সোনাডাঙ্গা ও দেবিদাসপুর গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ মণিরামপুর বাজারে আসা-যাওয়া করেন। আশপাশে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা এ সড়কে মণিরামপুর বাজারে স্কুল-কলেজে যাতায়াত করে। মাঠের ফসল ঘরে তুলতে গ্রামবাসীর কাছে সড়কটির গুরুত্ব অনেক। তবে ঠিকাদার রাস্তার আধা কিলোমিটার গভীর করে খুঁড়ে রাখায় এ অংশে কোন যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। সলিং উঠিয়ে রাখা অংশও চলাচলের অনুপযোগী।
দেবিদাসপুর স্লুইসগেট এলাকার আবুল কাশেম বলেন, ‘রাস্তা আগে যা ছিল চলতি পারছিলাম। এখন বৃষ্টি হলি ঘরের বারান্দারতে নামতি পারব না। অনেক দিন হচ্ছে রাস্তা খুঁড়ে রাখিছে। এরপর আর কাজ করেনি। কেউ খোঁজও নেয়না।’
দেবিদাসপুর গ্রামের ইমান হোসেন বলেন, ‘ঠিকাদার রাস্তার সলিং তোলার পর সোনাডাঙ্গা হাসপাতাল মোড় থেকে দেবিদাসপুর স্লুইসগেট পর্যন্ত গভীর করে খুঁড়ে রেখেছে। যারমধ্যে অর্ধেকে বালু দেছে। গত অক্টোবরের বৃষ্টিতে খোঁড়া অংশের কাদাপানিতে আমাদের চলাচলে খুব কষ্ট হয়েছিল।’
উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তরের সূত্র মতে, ২০২১-২২ অর্থ বছরে হাকোবা ঈদগাহ মোড় হতে মণিরামপুর পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র পর্যন্ত দেবিদাসপুর গ্রামের ভিতরের দুই হাজার ৬১০ মিটার দীর্ঘ সড়কটি পাকা করার জন্য দুই কোটি ১১ লাখ টাকা বরাদ্দে কাজ পায় বিশ্বজিৎ কনস্ট্রাকশন। কার্যাদেশ পেয়ে গত বছরের আগস্টের দিকে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করেন ঠিকাদার বিশ্বজিৎ দাস।
সড়কটি পাকাকরণ কাজের দেখভালের দায়িত্বে আছেন উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তরের নকশাকার গাওসল আজম। তিনি বলেন, কাজের মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে। এখনো ঠিকাদার রাস্তায় বালি ফেলতে পারেনি। ঠিকাদার বিশ্বজিৎ দাস বলেন, রাস্তা টেন্ডার হওয়ার পর মালামলের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। এছাড়া নদী থেকে বালি তোলা বন্ধ হওয়ায় আর বালি দেওয়া হয়নি। শনিবার থেকে বালু ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।
এদিকে ঠিকাদারের সাথে কথা বলার পর স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হরিহরনদী থেকে বালু তুলে রাস্তায় ফেলার জন্য ঠিকাদারের লোকজন তোড়জোড় চালাচ্ছে। কিন্তু এখনো বালু ফেলা শুরু হয়নি।
মণিরামপুর উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার দাস বলেন, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেক ঠিকাদার কাজ করতে পারছেন না। আমরা তাঁদের কাজের তাগিদ দিচ্ছি।
আরও পড়ুন: যশোরে সড়ক দুর্ঘটনায় গর্ভবতী নারী নিহত
১ Comment
Pingback: যশোরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় কলেজ ছাত্রসহ দুজন নিহত - দৈনিক কল্যাণ