নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের চৌগাছার স্বর্পরাজপুর গ্রামের কিশোর মারুফ হোসেন (১৩) খুনে উচ্চ আদালত ১০ আসামির চার জনের মৃত্যুদণ্ড ও একজনের যাবজ্জীবন রায় দেয়ার পরও সাজাপ্রাপ্তরা গ্রেফতার হয়নি। সাজাপ্রাপ্তরা প্রকাশ্যে ঘুরে বাড়ানোসহ নিহতের মা ও ভাইকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। এ অভিযোগে ৫ মে চৌগাছায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন নিহতের মা আবিরন নেছা। রোববার (৭ মে) দুপুরে প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে তথ্য জানানো হয়। এসময় তিনি দ্রুত রায় কার্যকর ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আবিরন নেছা ও তার মেঝো ছেলে ফারুক হোসেনসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ফারুক হোসেন বলেন, তার ছোট ভাই মারুফ হোসেন ২০১৬ সালের ১০ আগস্ট সকালে বাসা থেকে বাজারের উদ্দেশ্য বের হয়। এরপর কোন সন্ধান না পেয়ে সেসময় চৌগাছা থানায় জিডি করা হয়। ১৬ আগস্ট সন্ধ্যার দিকে পাশের মির্জাপুর গ্রামে হাসেম আলীর খেজুর ও মেহগনি বাগানের মধ্যে মারুফের মস্তকবিহীন হাত-পা কাটা লাশ পাওয়া যায়।
লিখিত বক্তব্য মতে, এ ঘটনায় নিহতের মা আবিরন নেছা চৌগাছা থানায় সাতজনের নামে হত্যা মামলা করেন। এতে স্বর্পরাজপুর গ্রামের হযরত আলী মন্ডল (৫০) ও তার ভাই সুলাইমান মন্ডল (৪৫), হযরত আলীর দুই ছেলে টুটুল মন্ডল (২৮) ও বিল্লাল হোসেন (৩০), শহর আলীর ছেলে আবুল বাশার (৩২), নূর ইসলাম লালুর ছেলে বাবু মন্ডল (২২) এবং ইশার আলী মন্ডলের ছেলে ইকরামুল হোসেনকে (৩০) আসামি করা হয়। প্রথমে চৌগাছা থানা ও পরে যশোর সিআইডি মামলাটি তদন্ত করে।
সিআইডি তদন্ত করে নিহতের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনসহ আজহারুল ইসলাম নামে একজনকে গ্রেফতার করে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ১০ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়। মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য যশোর আদালত থেকে খুলনা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করা হয়। খুলনা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২০১৯ সালের ২৬ মে মারুফ হোসেন হত্যায় ১০ আসামিকে বেকসুর খালাস দেন।
এ রায়ের বিরুদ্ধে মারুফ হোসেনের মা ওই বছরই হাইকোর্টে আপিল করেন। এ আপিল আংশিক মঞ্জুর করে বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ চলতি বছরের গত ৩ মে ১০ আসামির মধ্যে সুলাইমান মন্ডল, আবুল বাশার, বাবু মন্ডল, আজহারুল ইসলাম ওরফে বুড়ো এই চারজনকে মৃত্যুদ- ও হযরত আলী মন্ডলকে যাবজ্জীবন সাজা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের মেজো ভাই ফারুক হোসেন বলেন, হাইকোর্টের রায়ের পর থেকেই আসামিরা আমাকে ও আমার পরিবারকে জীবননাশের হুমকি দিয়ে আসছে। রায়ের পর দিন রাত আনুমানিক নয়টার দিকে আমি ও আমার মা আমাদের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে থাকা অবস্থায় তারা অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। গালিগালাজ করতে নিষেধ করিলে তারা মারপিট করতে উদ্যত হন এবং খুন-জখমের হুমকি দেন। এ ঘটনায় ৫ মে চৌগাছা থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।
নিহতের মা আবিরন নেছা বলেন, হাইকোর্ট রায় দিয়েছে, কিন্তু সাজাপ্রাপ্তরা এখনো প্রকাশ্যে রয়েছে। রায়ের পর আমাদেরকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। মামলার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত তাদের আইনের বেড়াজালে বাধা যায়নি। আমি ছেলের খুনিদের সাজা কার্যকর ও আমাদের জীবনের নিরাপত্তা চাই।
এবিষয়ে জানতে চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন রিসিভ করেন ডিউটি অফিসার এসআই হাবিব। তিনি বলেন, এ বিষয়ে তারা জানা নেই। সংশ্লিষ্ট জিডিটি এসআই শাহিনুর রহমানকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এসআই শাহিনুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, থানা থেকে এখনো তদন্তের বিষয়ে তাকে কোন কাগজ দেয়া হয়নি। তবে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।