যশোরে কমেছে সংক্রমণ, বেড়েছে মৃত্যু
সবচেয়ে কম মৃত্যু সাতক্ষীরায়
সুনীল ঘোষ: করোনায় একদিনে সর্বোচ্চ ৪ জনের মৃত্যু দেখলো যশোর। তাদের সবাই জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ সময়ে খুলনা বিভাগে করোনায় মৃত্যু হয় ৫ জনের। এ হিসাবে একদিনে মৃতের সংখ্যায় যশোর শীর্ষে। একই সময়ে আরও ৪৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৫ শতাংশ। সংক্রমণ ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড ছিল ১ ফেব্রুয়ারি। দিনটিতে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ৬ জনের প্রাণ নেয় করোনা। সংক্রমণের হার ছিল ৪০ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
সোমবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টার থেকে জানানো হয়, গত ২৪ ঘন্টায় ১৮৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪৫ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। চলতি মাসের প্রথমদিনে সংক্রমণে ছিল উর্দ্ধগতি। পরীক্ষা বিবেচনায় সংক্রমণের হার উঠেছিল ৪০ দশমিক ৪৯। মৃত্যুতেও ছিল সর্বোচ্চ রেকর্ড। আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ৬ জনের মৃত্যু হয়। সেই তুলনায় ‘রেড জোন’ যশোরে সংক্রমণের হার কমেছে।
যবিপ্রবির অনুজীব বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. ইকবাল কবির জাহিদ মনে করেন, আক্রান্ত অনেকের শরীরে উপসর্গ না থাকায় তারা নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন না। যে কারণে সংক্রমণের হার কম মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, যশোরে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে জনগণ সচেতন না। জনসচেতনতায় তেমন কোনো কার্যক্রমও নজরে পড়ছে না। অনেকেই ডাবল ডোজ টিকা পেয়েছেন। তারা নিরাপদ ভাবছেন। তারা নমুনা পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন মনে করছেন না। তিনি বলেন, এ কারণে সংক্রমণ কমেছে বলে ধরা হচ্ছে। বেশিরভাগ মানুষের নমুনা পরীক্ষা না করে প্রকৃত চিত্র বলা মুশকিল।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের উপ-সেবা তত্ত্বাবধায়ক ফেরদৌসী বেগম জানান, হাসপাতালের রেড জোনে বর্তমানে ১৯ ও ইয়েলো জোনে ১৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার) করোনা আক্রান্ত ৩ জন ও উপসর্গ নিয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দু’জন নারী ও দু’জন পুরুষ। সূত্র মতে, এর আগে ১ ফেব্রুয়ারি করোনা আক্রান্ত দু’জন ও উপসর্গ নিয়ে মোট ৬ জনের মৃত্যু হয়।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মনজুরুল মুরশিদ এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা বিভাগে করোনায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে যশোর জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের। এ সময়ে খুলনা বিভাগে নতুন করে ৪৬৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। সংক্রমণে শীর্ষে রয়েছে খুলনা। জেলাটিতে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ১০৩ জন। এছাড়া কুষ্টিয়ায় ৮৬ জন ও যশোরে ৬৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে যবিপ্রবির ল্যাবে ৪৫ জন করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর বাইরে সাতক্ষীরায় ২৮, ঝিনাইদহে ২২, বাগেরহাটে ৩৪, নড়াইলে ১৫, মাগুরায় ৩০, চুয়াডাঙ্গায় ৩৭ ও মেহেরপুরে ৪৪ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে বলে প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিভাগীয় এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় সোমবার সকাল পর্যন্ত ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ১১ হাজার ৩৩০ জন। ৩ হাজার ২৩৫ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় সংক্রমণে শীর্ষে রয়েছে খুলনা। জেলাটিতে ৩১ হাজার ৩৯০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৮২০ জন। সবচেয়ে কম আক্রান্ত হয়েছে মাগুরায়। এখানে শনাক্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৫৬৭ জন। সবচেয়ে কম মৃত্যু হয়েছে সাতক্ষীরায়। এখন পর্যন্ত জেলাটিতে ৯০ জন মানুষের প্রাণ নিয়েছে করোনা।