নিজস্ব প্রতিবেদক
আধুনিক ও উন্নতমানের-রোগমুক্ত জারবেরা ফুলের অনুচারা যশোরের গদখালির বাণিজ্যিক ফুল চাষিদের মাঝে বিতরণের উপলক্ষে মঙ্গলবার ২৬ আগস্ট দুপুর ১২টায় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ল্যাবরেটরি অফ ফাংশনাল জিনোমিক্স অ্যান্ড প্রোটিওমিক্স, জিইবিটি বিভাগ।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার ফুলের রাজ্য খ্যাত গদখালির পানিসারার মাঠ পর্যায়ে সরাসরি নিয়োজিত বাণিজ্যিক ফুলচাষীরা স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল মজিদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে যবিপ্রবি উপাচার্য বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফুলের বাগান হলো গদখালী যা যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলায় অবস্থিত। এখানে প্রায় চার হাজার বিঘা জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ করা হয়, যা দেশের ফুলের চাহিদার বৃহৎ অংশ পূরণ করে। বাংলাদেশের এই সম্ভাবনাময় অংশ নানা সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতায় জর্জরিত। ফুলচাষিসহ আমাদের সকলকে এই প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে সচেষ্ট হতে হবে, তবেই আমরা দেশীয় ফুলের চারার চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চাহিদার যোগান দিতে পারবো। আমাদের দেশে পর্যাপ্ত পরিমানের গবেষণা ল্যাব আছে। কিন্তু দক্ষ ও মানসম্মত গবেষকের অনেক অভাব। তাই শিক্ষার্থীদেরকে ভালো ও দক্ষ গবেষক হওয়া জন্য সর্বদা চেষ্টা করতে হবে। আমাদের দেশে অর্থনৈতিক প্রাচুর্যতা কম থাকায় ফুলচাষি ও এর সংশ্লিষ্ট সবাইকে একজোট হয়ে কাজ করার জন্য উদ্ভুদ্ধ করেন। তিনি বলেন- আমাদের সবাইকে মাটি ও মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। এদেশের উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি শুধু জারবেরাই নয় বরং অন্যান্য সকল ফুলের উৎপাদন ও গুণগতমান নিয়ে কাজ করার জন্য যবিপ্রবি গবেষকদের আহ্বান জানান এবং ফুল চাষিদের সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য গদখালীতে একটি ল্যাব স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শুরুতে যবিপ্রবির ট্রেজারার অধ্যাপক ড. হোসেন আল মামুন জারবেরা ফুলের ইতিহাস তুলে ধরেন। তিনি বলেন- জারবেরা ফুল মূলত দক্ষিণ আফ্রিকার স্থানীয়, যেখানে এটিকে “ট্রান্সভাল ডেইজি” বা “আফ্রিকান ডেইজি” নামেও পরিচিত। জার্মান উদ্ভিদবিজ্ঞানী ট্রাগোট জরবারের নামে এই ফুলের নামকরণ করা হয়। জারবেরার প্রথম বৈজ্ঞানিক বর্ণনা তৈরি হয় ১৮৮৯ সালে, এবং এটি দ্রুত সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এর উজ্জ্বল রঙ ও বৈচিত্রের জন্য।
অনুষ্ঠানে যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতি লি. (জেএফএস) এর সভাপতি আব্দুর রহিম তার বক্তব্যে বলেন, গদখালীকে “ফুলের রাজধানী” হিসাবেও অভিহিত করা হয়, কারণ এখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুল চাষ করা হয় এবং এই অঞ্চলের ফুল সারাদেশে সরবরাহ করা হয়। ১৯৮২ সাল থেকে এখানে বাণিজ্যিক ফুল চাষ শুরু হয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে আধুনিকভাবে এই জারবেরা ফুলের চাষ শুরু হয়। জারবেরার চারা পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে যা আমাদের জন্য অনেক ব্যয় বহুল ও সময় সাপেক্ষ। জেএফএস এর সাধারণ সম্পাদক মীর ফারুখ আহম্মদ বলেন- আমরা বেশ কয়েকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের চারা সংগ্রহ করেছি এবং বাণিজ্যিকভাবে চাষও করেছি। অন্যান্য চারার তুলনায় যবিপ্রবি অনুচারার গুণগতমান অনেক ভালো। আমার যদি এই চারাগুলো স্বল্পমূল্যে এবং যথা সময়ে পাই তবে সেটি ফুল চাষে অনবদ্য ভূমিকা রাখবে এবং সেটি আমাদের ভোগান্তিও কম করবে।
জারবেরা ফুলের গবেষণা প্রকল্পটির পরিচালক জিইবিটির সহযোগী অধ্যাপক ড. আব্দুর রউফ সরকার তার বক্তব্যে বলেন- যবিপ্রবি উক্ত জারবেরা ফুলের গবেষণা ও ফুলচাষীদের চাহিদা মাফিক অনুচারা উৎপাদনের মাধ্যমে যশোরের গদখালীর ফুলচাষিদের বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষের ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে চান এবং তিনি তার গবেষণার মাধ্যমে যশোর অঞ্চলের তথা দেশের কৃষির সামগ্রিক উন্নয়নে যবিপ্রবির ভূমিকা পালনের আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন যবিপ্রবি জীববিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম, জিইবিটি বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল হাসান, যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতি লি. (জেএফএস) এর অন্যান্য সদস্যবৃন্দ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক ফুলচাষীরা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জিইবিটি বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন ল্যাবরেটরি অফ ফাংশনাল জিনোমিক্স অ্যান্ড প্রোটিওমিক্স প্রকল্পটির সহযোগী প্রকল্প পরিচালক ও ল্যাব হেড অধ্যাপক ড. শেখ মিজানুর রহমান এবং সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনায় ছিলেন জিইবিটি বিভাগের এম.ফিল শিক্ষার্থী নাসরিন আক্তার।