নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর সদর উপজেলার গাইদগাছি গ্রামে মাসুদ রানা (৩২) নামে এক কাঠ ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলা তদন্তে সন্তুষ্ট নয় বাদী পক্ষ। মামলার তদন্তকাজ এখনো শেষ হয়নি। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৬ জনকে আসামি করা হলেও ঘটনার পেছনে কি ছিলো তার কারণ এখনো অজানা। ফলে মামলাটি গভীর ভাবে তদন্তের জন্য আইজিপির কাছে আবেদন করেছেন নিহতের মা বাদী খাদিজা পারভীন।
যদিও পুলিশ বলছে, মামলার সব আসামি আটক আছে। সাক্ষীদের সাক্ষ্য নিয়ে মামলার তদন্ত শেষ করা হবে। অতিশিঘ্রই চার্জশিট দাখিলের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তবে বাদি পক্ষ ক্যাম্প পুলিশের তদন্তে সন্তুষ্ট না। তারা এই মামলাটি আরো গভীরভাবে তদন্তের জন্য পিবিআই বা সিআইডিতে স্থানন্তরের প্রস্তুতি নিয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ হেড কোয়ার্টারে আবেদন করা হয়েছে। নিহত মাসুদ রানা যশোর সদর উপজেলার গাইদগাছি গ্রামের মৃত সোহরাব হোসেনের ছেলে।
মামলার আসামিরা হলো, সদর উপজেলার গাইদগাছি (তেরঘর, ফুলবাড়ি) গ্রামের আবুল হাসানের ছেলে বাবু (৩৫), অভয়নগর উপজেলার বনগ্রামের আজিজুর রহমান আইজের ছেলে মুরাদ হোসেন (৩২), প্রেমবাগ কাটাখাল পশ্চিমপাড়ার হাফিজুর রহমানের ছেলে শিমুল হোসেন শান্ত (২৫), শওকত আলী মোল্লার ছেলে আল-আমিন (২৭), প্রেমবাগ গ্রামের আলী আকবরের ছেলে রাজু (২৮) এবং সদর উপজেলার গাইদগাছি দক্ষিণপাড়ার নুরুর ইসলাম নুরুর ছেলে পিন্টু (৩২)।
নিহতের মা খাদিজা বেগম এজাহারে উল্লেখ করেন, তার ছেলে মাসুদ রানা কাঠের ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করতো। অভয়নগরের প্রেমবাগ সুপারি বাগান জামে মসজিদের গ্রিল চুরি করাকে কেন্দ্র করে তার ছেলে মাসুদ রানার পরিচিত গাইদগাছি গ্রামের শ্বশুর বাড়িতে বসবাসকারী জুলফিকারকে (৩০) আসামিরা দোষারোপ করে। এই নিয়ে তাদের দুইজনের সাথে আসামিদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে জুলফিকারকে তার শ্বশুরবাড়িতে যেতে বাধা দেয় আসামিরা। গত ২৩ আগস্ট জুলফিকার তার (মাসুদ রানার) বাড়িতে যায়। পরে খাওয়া শেষ করে তার ছেলে মাসুদ রানা, মণিরামপুর উপজেলার সুবোলকাঠি গ্রামের মুনসুর আলী বিশ্বাসের ছেলে ইসরাফিল হোসেন, করেরাইল গ্রামের শামীমের ছেলে সজিব মোল্লা, আলমগীর হোসেনের ছেলে সুমন হোসেন এবং বারপাড়া গ্রামের বাবুল গাজীর ছেলে মঈন উদ্দিন ওই রাতে গাইদগাছি গ্রামে যায়।
বিষয়টি বুঝতে পেরে রাত দেড়টার দিকে আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে জুলফিকারের শ্বশুর বাড়িতে ঢোকে এবং লাঠি সোটা ও কুদালের আচাড়ি দিয়ে তাদের মারপিট করে। ওই ৬জনকে টেনেহেঁচড়ে ঘরের বাইরে বের করে। এরপর বিষয়টি ভিন্নখাতে নিতে আসামি আলামিনের পিতা শওকত আলী স্থানীয় মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো করে। গণপিটুনি দিয়ে জখম করে ওই গ্রামের ফিরোজ আহমেদের ভ্যানে করে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। ওই বাড়ি থেকে মাত্র তিনশ’ গজ দূরে কাটাখাল নামক স্থানে গিয়ে ওই ৬জনকে ভ্যান থেকে নামিয়ে নেয়। সেখানে গিয়ে মাসুদ রানাকে দ্বিতীয় দফা মারপিট এবং শ্বাসরোধে হত্যা করে আসামিরা চলে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় মাসুদ রানা। বাকি ৫জন আহত হয়। পরে তাদের অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়।
বাদি পক্ষের দাবি, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডাকাত নাটক সাজিয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোক জড়ো করে মাসুদ রানাকে হত্যাসহ ৬জনকে পিটিয়ে জখম করা হয়। পরে দ্বিতীয় দফার নির্যাতনে মাসুদ রানা মারা যায়। এই হত্যার পেছনে আরো লোকজন আছে। কিন্তু পুলিশ মামলার তদন্তে গভীরে যায়নি বা যেতে চাচ্ছে না।
নিহতের এক স্বজন জানিয়েছেন, মামলার আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। কিন্তু আসামিদের কাছ থেকে মোটা অংকে উৎকোচ গ্রহণ করার কারণে হত্যা রহস্য উদঘাটনে ‘শীতল মনোভাব’ নিয়ে কাজ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই কামরুজ্জামান। ফলে আসামিদের রিমান্ডে নিয়েও কোন লাভ হয়নি। পুলিশি অবহেলা দেখে মামলার বাদি এই মামলাটি ডিবি পুলিশকে দিয়ে তদন্তের জন্য পুলিশ সুপারের কাছে দুইটি আবেদন করেছেন। কিন্তু পুলিশ সুপার কোন গুরুত্ব না দেয়ায় মামলাটি তদন্তের দায়িত্বে থাকেন বসুন্দিয়া পুলিশ ক্যাম্পের সাবেক ইনচার্জ এসআই কামরুজ্জামান। ফলে মামলাটি ক্ষতি হতে পারে এই আশংকায় বাদী খাদিজা বেগম গত বুধবার পুলিশ হেড কোয়ার্টারে আবেদন করেছেন। ওই আবেদনে সিআইডি অথবা পিবিআই দিয়ে তদন্তের জন্য আইজিপির কাছে আবেদন করেছেন।
এখনো তদন্ত কর্মকর্তা হিসাবে আছেন এসআই কামরুজ্জামান। তিনি বলেছেন, মামলার এক আসামি শিমুলকে ঘটনার পরদিন আটক করা হয়েছিল। বাকি পাঁচজন আদালতে আত্মসমপর্ণ করে। তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারা এই বিষয়ে পুলিশকে তথ্য দিয়েছে। মামলার তদন্ত কাজ শেষের দিকে। চার্জশিট দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।