চৌগাছা প্রতিনিধি: যশোরের চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক-নার্সদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসেছিলেন জেলার সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস। মতবিনিময় সভায় শুরুতে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন। এমন সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রসূতি ওয়ার্ডে শুরু হয় দুই প্রসূতির আর্তচিৎকার। এখনই সিজার না করালে বাঁচানো যাবে না দুই প্রসূতিকে। কিন্তু হাসপাতালে গাইনি বিভাগের একমাত্র চিকিৎসক ছুটিতে রয়েছেন। চিকিৎসক না থাকায় চিন্তার ভাজ পড়ে প্রসূতির স্বজন ও নার্সদের কপালে। এমন সময়ে সিভিল সার্জন বক্তব্য রেখে তার সঙ্গে থাকা অন্যান্য চিকিৎসকদের নিয়ে ওই দুই প্রসূতির সিজারের দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধে। এরপর অল্প সময়ের ব্যবধানে দুটি সিজারের মাধ্যমে দুই প্রসূতির কোলে এনে দেন দুটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান।
শনিবার দুপুরে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ঘটনা ঘটে। ওই দুই নবজাতক ও তাদের মায়েরা সবাই সুস্থ রয়েছেন। এদিকে আলোচনা সভা ছেড়ে দুই প্রসূতির সিজার করে জেলাজুড়ে প্রশংসায় ভাসছেন সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস।
জানা যায়, চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজার দুটি হলেও ওই দুই প্রসূতির কেউই চৌগাছা উপজেলার বাসিন্দা নন। এর মধ্যে সুমাইয়া খাতুন (১৯) ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার বৈচিতলা গ্রামের জনৈক রিংকু এবং প্রসূতি শাহানারা (৩০) যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামের টিটো মিয়ার স্ত্রী।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার বলেন, আমাদের স্থায়ী কোনো স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। ডা. হাবিবুন নাহার ফোয়ারা একাই সিজারিয়ান অপারেশন করে থাকেন। তবে শনিবার তিনি ব্যক্তিগত কারণে ছুটিতে ছিলেন। অথচ দুজন প্রসূতির সিজার করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছিল। ঐ সময়ে সিজার না করালে তাকে বাঁচানো যেত না এমন পরিস্থিতি হয়ে গিয়েছিলো। সেই সময়ে হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্সদের সঙ্গে মতবিনিময় করছিলেন সিভিল সার্জন। এমন সময় হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ড থেকে নার্সরা জানান, দুই প্রসূতিকে জরুরি সিজার করতে হবে। এরপর বিষয়টি সিভিল সার্জন মহাদয়কে জানালে সঙ্গে সঙ্গে তিনি ওপারেশন থিয়েটার রেডি করার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে সিভিল সার্জন এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা মিলে দুই প্রসূতির সিজার করেন। সিজারে দুই প্রসূতির দুটি ছেলে সন্তান হয়েছে।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, শনিবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে একটা অনুষ্ঠানে ছিলাম। হঠাৎ হাসপাতালে ভর্তি দুই প্রসূতির সিজারের দরকার হয়ে পড়ে। তবে দুঃভাগ্যক্রমে হাসপাতালে সিজারের জন্য ঐ সময় কোনো চিকিৎসক ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে আমি সিজার করেছি।
তিনি আরও বলেন, এর আগে প্রায় ১ হাজারের বেশি সিজার করার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার। তবে এমন বিপদগ্রস্ত অবস্থায় কোনো প্রসূতির অপারেশন করিনি। অপারেশনের পর ওই দুই প্রসূতি এবং তাদের দুই সন্তানই ভালো রয়েছে জেনে খুব ভালো লাগছে।