কল্যাণ ডেস্ক: মোরবি সেতু ধসে পড়ার ঘটনায় সৃষ্টিকর্তাকে দোষারোপ করেছেন সংস্কার কাজে জড়িত ওরেভা কোম্পানির ব্যবস্থাপক দীপক পারেখ।
গত রোববার (৩০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের মোরবি জেলার মাচ্ছু নদীর উপর ব্রিটিশ আমলে তৈরি একটি ঝুলন্ত সেতু ধসে পড়ে ১৩৫ জন প্রাণ হারান।
১৯ শতকে তৈরি ১৪০ বছরের পুরাতন ওই সেতুটি সংস্কার কাজের জন্য প্রায় সাত মাস বন্ধ রাখা হয়েছিল। স্থানীয়দের কাছে এটি জুল্টো পুল নামে পরিচিত। ২৩০ মিটার দীর্ঘ প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ওই সেতুতে প্রচুর মানুষ বেড়াতে যান।
সেতুটির সংস্কার এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল ওরেভা কোম্পানি। সেতু ধসের ঘটনায় পুলিশ এখন পর্যন্ত নয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা সবাই ওরেভা গ্রুপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের একজন ওরেভা গ্রুপের ব্যবস্থাপক দীপক পারেখ।
বুধবার তাকে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এমজে খানের আদালতে তোলা হয় বলে জানায় এনডিটিভি। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘ভগবানের ইচ্ছাতেই এমন দুর্ভাগ্যজনক একটি ঘটনা ঘটেছে।”
দীপক সেতু ধসের দায় ভগবানের উপর চাপাতে চাইলেও পুলিশ বলছে, যে তারে সেতুটি ঝুলে ছিল সেটিতে ‘মরিচা ধরে’ গিয়েছিল।
মোরবি জেলা পুলিশের উপ পুলিশ সুপার পিএ জালা আদালতকে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘‘সংস্কার কাজের সময় তারগুলো পাল্টে ফেলার কথা থাকলেও ওভেরা গ্রুপ সে কাজ করেনি।” এছাড়া, সরকারের অনুমতি ছাড়াই এবং সুরক্ষা মান যাচাই না করেই গত ২৬ অক্টোবর সেতুটি জনগণের জন্য পুনরায় খুলে দেয়া হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা পিএ জালা বলেন, ‘‘রক্ষণাবেক্ষণ এবং মেরামতের অংশ হিসাবে তারা শুধুমাত্র সেতুটির পাটাতন পরিবর্তন করেছিল। সেতুটি একটি তারের উপর ছিল এবং তারে কোন তেল বা গ্রিস লাগানো হয়নি। যেখান থেকে তারটি ভেঙ্গে গেছে তারের সেই অংশে মরিচা ধরেছে। তার মেরামত করা হলে এ ঘটনা ঘটত না।”
যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতু মেরামতের কাজ করেছে তারা সরকারি অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করার যোগ্যই ছিল না বলেও আদালতে দাবি করেন রাষ্ট্রপক্ষের একজন আইজীবী। তিনি বলেন, ‘‘তা স্বত্বেও ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২০০৭ সালে একবার এবং ২০২২ সালে পুনরায় সেতুটির সংস্কারের দায়িত্ব দেয়া হয়।”
কোনো ঝুলন্ত সেতুর পাটাতন পরিবর্তন করার পর যদি তার পরিবর্তন করা না হয় তবে পুরাতন তারের পক্ষে নতুন পাটাতনের ওজন সহ্য করা সম্ভব হয় না। সংস্কারের অংশ হিসেবে মাচ্ছু নদীর উপরের সেতুটির পাটাতনে চারস্তরের অ্যালুমিনিয়াম শিট ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে নতুন পাটাতনের ওজন অনেক বেড়ে গেছে।
ওরেভা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জয়সুখভাই প্যাটেল সেতুটি পুনরায় খুলে দেয়ার ঘোষণার সময় বলেছিলেন, সংস্কার করার পর আগামী আট থেকে ১০ বছর সেটি অক্ষত থাকবে।
কিন্তু খুলে দেয়ার পাঁচ দিনের মাথায়ই সেটি ছিঁড়ে পড়ে। সেতু দুর্ঘটনার পর জয়সুখভাইকে ঘটনাস্থলে যেতে দেখা যায়নি বলে এনডিটিভিকে জানান স্থানীয়রা। তাকে শেষবার তার পরিবারসহ ঘটনাস্থলে দেখা গিয়েছিল সেতু খুলে দেয়ার দিন।
আহমেদাবাদে ওভেরা কোম্পানির ফার্মহাউজটিও তালাবদ্ধ এবং পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।
সেতু দুর্ঘটনায় যে মামলা হয়েছে তাতে ওভেরার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা মোরবি পৌর কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়নি। মোরবি পৌর কর্মকর্তারাই ওভেরা গ্রুপকে সেতু সংস্কারের কাজ দেয়।
দীপক এবং ওভেরা গ্রুপের আরেকজন ব্যবস্থাপক সঙ্গে সেতু সংস্কারের কাজ করা দুই সাব-কন্ট্রাক্টরকে শনিবার পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। নিরাপত্তারক্ষী ও টিকেট বিক্রয়কর্মীসহ গ্রেপ্তার আরো পাঁচজন এখনো জুডিশিয়াল কাস্টাডিতে আছেন।
আরও পড়ুন: ল্যাপটপ চুরির পর ই-মেইল করে ক্ষমা চাইলো চোর, ফেরত দিল দরকারি নথিও

