নিজস্ব প্রতিবেদক
চাঁদাবাজির অভিযোগে রাজবাড়ির গোয়ালন্দঘাট থানা পুলিশের ওসি ও এক এসআইসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে যশোর আদালতে মামলা হয়েছে। সোমবার নওয়াপাড়ার মেসার্স সায়াদ এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী ইমরান হুসাইন মামলাটি দায়ের করেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার দালাল অভিযোগটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআইডি পুলিশকে আদেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী জিএম কামরুজ্জামান ভুট্টো।
আসামিরা হলেন, গোয়ালন্দ থানা পুলিশের ওসি স্বপন কুমার, এসআই মনিরুল ইসলাম এবং পুলিশের কথিত সোর্স গোয়ালন্দঘাটের উত্তর দৌলতদিয়া গ্রামের মালেক মোল্লার ছেলে সোহেল ওরফে ভাঙ্গা সোহেল ও সাহজুদ্দিন ব্যাপারীপাড়ার মৃত সিদ্দিক শেখের ছেলে ইয়াসিন শেখ।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ইমরান হুসাইনের অভিযোগ, তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নদী পথে বিভিন্ন প্রকার মালামাল পরিবহন করা হয়। গত বছরের অর্থাৎ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি গোয়ালন্দ দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের একটি শাখা অফিস স্থাপন করেন। অফিস উদ্বোধনের কিছুদিন পর গোয়ালন্দঘাট থানা পুলিশের ওসি স্বপন কুমার ও এসআই মনিরুল ইসলাম তাদের কথিত সোর্স ভাঙ্গা সোহেল ও ইয়াসিন শেখের মাধ্যমে তাকে ফেরিঘাট পুলিশ বক্সে ডেকে নিয়ে যান।
এ সময় ওসি ও এসআই তাকে বলেন যে, এখানে ব্যবসা করতে হলে তাদের চাঁদা দিতে হবে। নতুবা তাকে বিভিন্ন মামলায় ঢুকিয়ে নাজেহাল করা হবে। ফলে ইমরান হুসাইন ব্যবসা পরিচালনার স্বার্থে একই বছরের ১০ মার্চ চাঁদা হিসেবে ওসিকে ২১ হাজার টাকা দিয়ে একটি ও এসআইকে ১৮ হাজার টাকা দিয়ে একটি মোবাইল ফোনসেট ক্রয় করে দেন। এছাড়া ওসি ও এসআই’র দাবি অনুযায়ী একই বছরের ২৮ এপ্রিল ৩৮ হাজার টাকা দিয়ে ৪ কার্টন খেঁজুর এবং সাড়ে ১৩ হাজার টাকা দিয়ে ১৫টি পাঞ্জাবি ক্রয় করে দেন ইমরান হুসাইন। কিন্তু এরপরও ওসি স্বপন কুমার ও এসআই মনিরুল ইসলাম ক্ষ্যান্ত হননি। পরবর্তীতে তারা তাদের কথিত সোর্স ভাঙ্গা সোহেল ও ইয়াসিন শেখের মাধ্যমে ওই ব্যবসায়ীর কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। কিন্তু ব্যবসা মন্দার কারণে ইমরান হুসাইন তাদের দাবিকৃত চাঁদার টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে তাকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হয়। এ কারণে কোনো উপায় না পেয়ে ওসি স্বপন কুমারকে নগদ ১ লাখ টাকা এবং এসআই মনিরুল ইসলামকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা চাঁদা হিসেবে দেন ইমরান হুসাইন। এরপর চাঁদার বাকী টাকার জন্য তারা ইমরান হুসাইনকে অব্যাহত হুমকি দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে ইমরান হুসাইন ঘোয়ালন্দঘাটের অফিসটি বন্ধ করে দেন। তারপরও চাঁদার জন্য তাকে অব্যাহত হুমকি দেওয়ায় গত ২৫ মে ইমরান হোসেন ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি ও রাজবাড়ি পুলিশ সুপার বরাবার লিখিত অভিযোগ করেন। গত ২৮ এপ্রিল স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ সদর দফতর বরাবরও লিখিত অভিযোগ দেন তিনি। বিভিন্ন দফতরের তিনি অভিযোগ দেওয়ায় কারণে তার ওপর আরও ক্ষিপ্ত হন ওসি স্বপন কুমার ও এসআই মনিরুল ইসলাম। তারা চাঁদার বাকী ৭ লাখ ৩০ হাজার টাকার জন্য তাদের কথিত সোর্স ভাঙ্গা সোহেল ও ইয়াসিন শেখের মাধ্যমে ইমরান হুসাইনকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। ভাঙ্গা সোহেল ও ইয়াসিন শেখ মোবাইল ফোন করে তাকে হুমকি দিয়েছেন। তবে অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে গোয়ালন্দ থানা পুলিশের ওসি স্বপন কুমার মজুমদার বলেন, ‘আমরা বিরুদ্ধে এজাহারে যা যা উল্লেখ করেছেন সেটা মিথ্যা। প্রথম কথা হলো গোয়ালন্দঘাটে ইমরান হুসাইনের কোন অফিস নাই। পুলিশ এখন অনেক পরিশোধিত। ওসিদের এখন টাকা বা চাঁদা নেওয়া এতো সহজ! আদালত যেহেতু তদন্ত করবে, নিশ্চয়ই তদন্ত কর্মকর্তা সঠিক তদন্ত করবেন।
