নিজস্ব প্রতিবেদক
ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে যশোরে ঘর গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছে বিএনপি। একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকায় দৃশ্যমান হয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দলও। আর চূড়ান্ত প্রার্থী নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে জামায়াত। এছাড়াও জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী আন্দোলন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামী সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুতের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ছয়টি আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। তারা হলেন-যশোর-১ (শার্শা) মাওলানা আজিজুর রহমান, যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে ডা. মোসলেহ উদ্দীন ফরিদ, যশোর-৩ (সদর) আবদুল কাদের, যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর ও বসুন্দিয়া ইউপি) অধ্যাপক গোলাম রসূল, যশোর-৫ (মনিরামপুর) অ্যাড. গাজী এনামুল হক, যশোর-৬ (কেশবপুর) অধ্যাপক মোক্তার আলী।
জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি অনেক দূর এগিয়েছে। সদর বাদে প্রত্যেক উপজেলায় ভোটকেন্দ্রের পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ শেষ করেছে। ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠন, গণসংযোগ, প্রার্থীর প্রতিশ্রুতির লিফলেট বিতরণ, সামাজিক ও মানবিক সহায়তা বৃদ্ধি করেছে। পাশাপাশি প্রত্যেক আসনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করেছে। প্রতিমাসে আসনভিত্তিক কমিটির সভা হচ্ছে।
জেলা জামায়াতে ইসলামীর প্রচার সেক্রেটারি শাহাবুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, জেলার ৬টি সংসদীয় আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। তারা নিজ নিজ আসনে নিয়মিত গণসংযোগ ও প্রতিশ্রুতির লিফলেট বিতরণ করছেন। তাদের পক্ষে নেতাকর্মীরাও জনগণের কাছে গিয়ে ভোট চাইছেন। তিনি আরও বলেন, আসনভিত্তিক কমিটির প্রতিমাসে সভা, পোলিং এজেন্ট প্রশিক্ষণ ও কমিটি গঠন করা হচ্ছে। সুশৃঙ্খলভাবে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর জামায়াতের কোনো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি, লুটপাটের অভিযোগ নেই।
এদিকে, যশোরের প্রত্যেকটি আসনে বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। তারা হলেন, যশোর-১ আসনে মফিকুল হাসান তৃপ্তি, হাসান জহির, খায়রুজ্জামান মধু ও নুরুজ্জামান লিটন। যশোর-২ আসনে সাবিরা নাজমুল মুন্নী, মিজানুর রহমান খান, জহুরুল ইসলাম, অ্যাড. মো. ইসহক, যশোর-৩ আসনে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। যশোর-৪ আসনে ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব, ফারাজি মতিয়ার রহমান, ব্যারিস্টার নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ, যশোর-৫ আসনে অ্যাড. শহীদ মো. ইকবাল, মো. মুসা, ইফতেখার সেলিম অগ্নি ও আসাদুজ্জামান মিন্টু, যশোর-৬ আসনে অমলেন্দু দাস অপু, আবদুল হোসেন আজাদ ও আবদুস সামাদ বিশ্বাস।
একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকায় বিএনপির তৃণমূলের গ্রুপিং দৃশ্যমান। পালটাপালটি সভা-সমাবেশে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে বক্তব্য দিতেও দেখা যাচ্ছে। গত এক বছরে বিএনপির তৃণমূল থেকে শীর্ষ অনেকের বিরুদ্ধে দখল, চাঁদাবাজি ও লুটপাটসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত ও আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অতীতের অনেক ত্যাগী নেতাও বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে নিজের অবস্থান হারিয়েছেন।
এক বছরে যশোরে প্রায় দেড় হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছে জেলা বিএনপি। অভিযোগ তদন্ত ও যাচাই-বাছাই করে প্রায় সাড়ে তিনশ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার ও পদ স্থগিত করেছে বিএনপি।
এ বিষয়ে যশোর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার রবিউল ইসলাম বলেন, দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ অপরাধ করলে ছাড় নেই। ৫ আগস্টের পর প্রায় সাড়ে তিনশ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার ও পদ স্থগিত করা হয়েছে। ব্যক্তির দায় কখনো দল নেয়নি। ভবিষ্যতেও নেবে না।
যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, এখন দল গোছানোর কিছু নেই। ইতোমধ্যে সব কমিটি হয়েছে। বড় রাজনৈতিক দল হিসাবে প্রত্যেক আসনে একাধিক প্রার্থী মাঠে আছেন। দল যাকে চূড়ান্ত করবে সবাই তার পক্ষেই কাজ করবেন। দলের কোনো নেতাকর্মী ভুলত্রুটি করলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।