নিজস্ব প্রতিবেদক
অন্যের ঘরে নিজের জন্ম। সন্তানের জন্মও অন্যের ঘরে। দীর্ঘ ৭১ বছর পর নিজের নামে তিনিই কিনা পেলেন জমির দলিল ও ঘরের কাগজ! তাই উচ্ছ্বাস যেন কমছে না রিকসা চালক আকবর আলীর। জমির দলিল হাতে নিয়ে তিনি বলেন, ছোট্টকাল থেকেই যশোর শহরে রিকসা চালিয়ে আসছি। স্ত্রী আর দুই ছেলে নিয়ে শহরের খালদার রোডে এক বস্তিতে বসাবস করে আসছি। সারাজীবন ভাঙা ঘরেই রাত্রীযাপন করেছি। এখন শেখ হাসিনার দেওয়া
সদর উপজেলার ফতেপুর ধানকাটা আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুই শতক জমি আর পাকা ঘরই তার পরিবারের স্থায়ী ঠিকানা। গত শনিবার স্ত্রীকে নিয়ে রিকসা চালিয়ে সেই পাকা ঘর দেখে এসেছি। ঘরটি তাঁর খুব পছন্দ হয়েছে। থাকার কক্ষের সঙ্গে রান্নাঘর। পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থাও ভালো। বিদ্যুৎ আছে। পানি আছে। পরিবার নিয়ে এখন খুব ভালোভাবে থাকতে পারবেন। তবে যেখানে জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন সেই খালদার রোডের বস্তিতে আরো এক সপ্তাহ কাটিয়ে প্রতিবেশিদের সঙ্গে বিদায় নিয়েই শেখ হাসিনার দেওয়া ঘরে উঠবেন বলে জানান তিনি।
রিকসাচালক আকবরের মতোই যশোরের ৮ উপজেলার ৩৩৩ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আধা পাকা ঘর দিয়েছে সরকার। বুধবার বেলা ১১ টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার পর সদর উপজেলার ৫৫ জন ঘর সুবিধাভোগী পরিবারের মাঝে দলিল ও ঘরের কাগজপত্র বুঝিয়ে দেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লুর রহমান চৌধুরি। এই বাড়ি ও জমির দলিল হস্তান্তরের মধ্যদিয়ে ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা হয়েছে যশোরের শার্শা, বাঘারপাড়া ও কেশবপুর উপজেলা। আশ্রয়ণ কেন্দ্রে মাথা গোজার ঠাঁই পেয়ে খুশি এসব পরিবারগুলো। একটি সময় রাস্তার পাশে বা অন্যের জমিতে ঝুপড়ি ঘর তুলে বসবাস করলেও এখন নিজের ঘর পেয়েছেন তারা। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এমন উপহারে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এই পরিবারগুলো।
সদর উপজেলার সিরাজসিঙ্গার বাসিন্দা অশ্বিণ দাস বলেন, পরের জমিতে চাষাবাদ, পরের জমিতে বসাবাস করে আসছি। চাষবাদ করেই ৭ সদস্যের সংসার চলে। সারাদিন কাজের পর ভালোভাবে শোবার জায়গা ছিলো না। এখন শেখ হাসিনার কল্যাণে আমার আধা পাকা ঘর আর দুই শতক জমি হয়েছে। জীবনের এই শেষ অংশে কি খাবো জানি না; তবে বলতে পারি ভালোভাবে শুইতে পারবো। শহরের বেজপাড়ার সুধীর বাবুর কাঠগোলার সামনে বাসা ভাড়া করে থাকতে তাপসী সরদার ও সুমন সরদার দম্পতি। তাদের পরিবারে রয়েছে দুটি সন্তানও। তাদের নতুন পরিচয় সদরের ধানকাটা আশ্রয়ণ প্রকল্পে। নতুন ঘর পেয়ে এই দম্পতি জানান, তাদের দুঃখ কষ্টের দিনআনিপাতের কথা। তাপসী সরদার বলেন, স্বামী সেলুনে কাজ করেন। যে টাকা পায় সেটা দিয়ে ঘর ভাড়া দিয়ে আর থাকে না। সংসার চালানেই কষ্টকর। পরের বাড়িতে থাকার কারণে পরের গাল মন্দ কথা শুনতে হয়। এখন আমাদের নতুন ঘর, স্থায়ী ঠিকানা হয়েছে। আমরা খুব খুশি।
আরও পড়ুন:গৃহহীনদের হাতে আরও ৩৯,৩৬৫টি ঘর তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী
সদর উপজেলার ৫৫ জন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর হস্তন্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লুর রহমান চৌধুরি। তিনি বলেন, আমাদের সমাজের অসংগতি রয়েছে। এই সংগতির কারণে দেশে ভূমিহীন হয়েছে। দেশে সুষমবন্ঠন যদি না থাকে, ন্যায় বিচার ইনসাফ না থাকে সেই দেশে গরীব হয় বেশি। তখনই রাষ্ট্র বাধ্য হয়ে গরীবদের পাশে দাড়াতে। সেই দায়িত্ব নিয়ে শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার দক্ষ দিকনির্দেশনা আজ বাংলাদেশ ভূমিহীন মুক্ত হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে খুলনা বিভাগের দুটি জেলা মাগুরা ও চুয়াডাঙ্গা ও ২৩ উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা হয়েছে। এসব স্থানে এর পরেও কেউ যদি ভুক্তভোগী থাকে তাকেও ঘর ও ভূমি দেওয়া হবে।
জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে মৃত বঙ্গবন্ধু অনেক শক্তিশালী মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশে অনেক সমস্যা আছে। কত সংকটও রয়েছে। তবে এই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই সমস্যা সংকট দ্রত শেষ হবে। জাতির পিতাে যে ত্যাগ স্বীকার করেছে। সেই ত্যাগের বিনিময়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ হবে স্মাট বাংলাদেশ। জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, যশোরে এক হাজার ৭৬১টি বাড়ি উপহার হিসাবে দেওয়া হয়েছে ভূমিহীন ও অসহায়দের মাঝে। বুধবার চতুর্থধাপে জেলায় ৩৩৩টি পরিবারের মাঝে ভ‚মিসহ ঘর দেওয়া হলো। এই বাড়ি ও জমির দলিল হস্তান্তরের মধ্যদিয়ে ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা হলো যশোরের শার্শা, বাঘারপাড়া ও কেশবপুর উপজেলা। বাকী উপজেলা গুলো এই বছরেই ভূমিহীন মুক্ত হবে।
শেখ হাসিনার উন্নয়ন যে দর্শন সেই দর্শনে কেউ দেশে গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের এই দুরহ কাজ ও কঠিন কাজে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তার সার্বিক সহযোগিতায় চলমান রয়েছে। এই প্রকল্প নিয়ে কোন প্রশ্ন উঠেনি। প্রধানমন্ত্রীর এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন কর্তরা সংপৃক্ত থাকতে পেরে নিজেরা গর্বিত।উপকারভোগীরা এখন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন। এসময় বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরি, ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনুপ দাস।
আরও পড়ুন:যশোরে নির্মাণাধীন ভবন ঘিরে মৃত্যুঝুঁকি
