নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবির বিন আনোয়ার বলেছেন, ‘বিএনপিকে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসাবে বিশ্বাস করে না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় যে সংজ্ঞা রয়েছে তার একটাও বিএনপির মধ্যে নেই। ফলে তাদের বলা যেতে পারে এন্ট্রি আওয়ামী লীগ দল। দেশ বিরোধী দল বা শক্তি। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি, ঘাতক দালালদের যে শক্তি; সেই শক্তির প্লাটফর্ম হচ্ছে বিএনপি। সেই দল বিএনপি নির্বাচনে আসুক বা নাই আসুক। আমরা জনগণকে সাথে নিয়ে নির্বাচনে যাবো।
রোববার সন্ধ্যায় যশোর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে স্মার্ট কর্নারের উদ্বোধনকালে তিনি এসব মন্তব্য করেন। যশোর শহরের গাড়িখানাস্থ আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এই স্মার্ট কর্নারের মধ্যে দিয়ে ৩২ জেলা হিসাবে এই কর্নার চালু হলো। এই স্মার্ট কর্নারে দুটি কম্পিউটারের মাধ্যমে চারজন স্বেচ্ছাসেবী কর্মী সকাল-বিকাল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন বার্তা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে জনগণের কাছে পৌঁছে দিবেন। আগামী নির্বাচনে অনলাইনে প্রচার-প্রচারণার কাজে এই স্মার্ট কর্নার বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা।
দেশে আবারও চক্রান্ত শুরু হয়েছে মন্তব্য করে কবির বিন আনোয়ার বলেন, ‘চক্রান্ত শুরু হয়েছে। আস্তে আন্তে চক্রান্তকারীদের দাঁত ও নখ বের করা শুরু করেছে। এতোদিন তারা গুটিয়ে রেখেছিলেন, নির্বাচন আসাতে আবারও তারা সংক্রিয় হচ্ছেন। তাদের সঙ্গে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রে তারা (বিএনপি) অর্থও ব্যয় করছে। আপনারা শুনলে অবাক হবেন, আমেরিকা ইউরোপের বিভিন্ন লবিষ্ট নিয়োগ করে জামাত নেতা মীর কাশেম আলীকে রক্ষা করতে জামাত বিএনপি ৭০০ কোটি টাকা খরচ করেছিলো। তারা এসব লবিষ্টদের বিদেশে টাকা দিয়ে বসিয়ে রেখে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ২০০৮ সালের যে নির্বাচন হয়েছিলো সেটি বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়েছিলো। সেই নির্বাচনে সবাই অংশ নিয়েছিলো। আমাদের জরিপে বলে-২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা শতকরা ১৪ জন মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছিলাম। বাকীটা বিভিন্ন সভা সমাবেশে ভোট চাওয়া হয়েছিলো। কিন্তু ডোর টু ডোর নির্বাচন প্রচারণা করতে পেরেছিলাম মাত্র শতকরা ১৪ ভাগ। এবার আমাদের পরিকল্পনা হবে আওয়ামী লীগের যে ৫০ ভাগ ভোটার রয়েছে, তাদের সকলের কাছে যাওয়ার। আর তাদের ভোট চূড়ান্ত করবো। ভোটে কে আসলো; না আসলো সেটা আওয়ামী লীগের বিষয় না। দেশে যে সংবিধান আছে; সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে উন্নয়ন হয়েছে বিগত সরকারগুলোর হাত ধরে হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই সরকারের হাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু এই উন্নয়নের বার্তা আমরা জনগণের কাছে পৌছে দিতে পারছি না। আমরা প্রচারে দুর্বল। এসব কথা চিন্তা করেই আমরা জেলা জেলায় স্মার্ট কর্নার চালু করছি। সরকারের নানা উন্নয়নের সমালোচনা করে বিরোধীদলীয় শক্তিরা। এই স্মার্ট কর্নার থেকে সেই সমালোচনার জবাব দিবে। সত্যিকারের তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করবে। বিভিন্ন গুজবের জবাব দিবে। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর যে উন্নয়ন বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছে দিবে। সারা দেশে ৭৮টি স্মার্ট কর্নার চালু করা হবে। যেখানে থাকবে আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীর ডাটাবেজ। প্রতিটি অফিসের জন্য ৪ জন কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। সরকারের উন্নয়নমূলক সব কাজ সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরতে স্মার্ট কর্নার বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।
দলের কোন্দল নিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বড় দল। এই দলে বিভিন্ন পেশা শ্রেণির মানুষ আছে। সবার মতপার্থক্য, অভিমান থাকবেই। ফলে দলে দ্বন্দ্ব থাকবে এটা আমরা স্বাভাবিক মনে করছি। আমাদের দলে যোগ্য লোকের সংখ্যা বেশি। সেই হিসাবে আমাদের প্রতিযোগিতাও থাকবে। কিন্তু সেটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা যেন না হয়। সেটা দলকে অতিক্রম না করে। সেটা বঙ্গবন্ধুর কন্যা ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে। সেই বিষয়ে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযুদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট আলী রায়হান, মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা, মেহেদী হাসান মিন্টু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর জহিরুল ইসলাম, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মাহমুদ হাসান বিপু ও জেলা যুবলীগের সহ সভাপতি সৈয়দ মেহেদী হাসান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মুজিব-উদ-দ্দৌলা সরদার কনক। অনুষ্ঠান শেষে সারাদেশে বিএনপির অগ্নি সন্ত্রাস, নৈরাজ্য সৃষ্টি ও সহিংসতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। বিক্ষোভ মিছিলের নেতৃত্ব দেন কবির বিন আনোয়ার। দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গন থেকে শুরু হয়ে বিক্ষোভ মিছিল চৌরাস্তায় যেয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ অংশ নেয়।