তিন দিবসকে ঘিরে ২৫ কোটি টাকার বিক্রির আশা
ইলিয়াস উদ্দীন: একদিন পর বসন্ত বরণসহ তিনটি উৎসব শুরু হতে যাচ্ছে। তাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালীর বাজার। সব ধরনের ফুলের দাম বেড়েছে। মানভেদে প্রতিটি গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা, যা মাসখানেক আগেও ছিল মাত্র ১ থেকে ৩ টাকা। জারবেরা বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৮ থেকে ১২ টাকায়। গাঁদা ফুল প্রতি হাজার পাঁচ থেকে ৭শ’ টাকা পর্যন্ত। যা আগে ছিলো দুইশ’ থেকে তিনশ’ টাকা। পহেলা ফাল্গুনসহ তিন দিবসে ফুলের বাজার চাঙায় প্রায় দুই বছর পর মুখে হাসি ফুটেছে গদখালীর চাষিদের। তারা বলছে, এই তিন দিবস যত কাছে আসবে ফুলের দামও তত বাড়বে। আশা করছেন গত দুই বছর ধরে করোনায় লাগাতার যে ক্ষতির শিকার হয়েছেন তারা, এ বছর ফুল বিক্রি করে কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্যমতে, যশোরে ফুলচাষি রয়েছে প্রায় ৬ হাজার। তারা অন্তত ১৫শ’ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার ফুল চাষ করেন। ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী, পানিসারা, নাভারণ, নির্বাসখোলার বিভিন্ন মাঠে অন্তত ১১ ধরনের ফুল উৎপাদন করেন। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, জিপসি, রডস্টিক, কলনডালা, চন্দ্র মল্লিকাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল শোভা পাচ্ছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে শীত প্রধান দেশের ফুল টিউলিপ ফুল চাষের মাধ্যমে গদখালীতে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে প্রতিবছরই গদখালীর ফুলচাষিরা নতুন জাতের ফুল উপহার দিয়ে থাকেন। গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, লং স্টিক রোজের পর এবারের ভালোবাসা দিবসে ফুলপ্রেমীদের জন্য নতুন উপহার দিচ্ছে টিউলিপ।
এলাকায় উৎপাদিত ফুল বিক্রির জন্য গদখালীতে রয়েছে দেশের বৃহত্তম ফুলের বাজার। শুক্রবার কাকডাকা ভোর থেকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের উপস্থিতিতে সরব হয়ে ওঠে ফুলের বাজার। গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা ফুলের পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়েছে রয়েছে শত শত ফুলচাষী। কেউ ভ্যান, কেউ সাইকেল বা ঝুড়ির মধ্যে ফুল রেখে ঢাকা ও স্থায়ীয় ব্যবসায়ীদের সাথে ফুলের দাম নিয়ে হাক-ডাকে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। গত দুদিন ধরে ফুলের চাহিদা বাড়তি থাকায় পাইকারি ব্যবসায়ীরা অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি ফুল কিনছে। একই সাথে বেশি দাম পাওযায় ফুল চাষীরাও বাজারে দ্বিগুণ ফুল এনেছে। সবমিলিয়ে উৎসবের এই মাসে ফুল-বেচাকেনায় জমে উঠায় ফুলচাষি কিংবা ব্যবসায়ীদের মনে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
পটুয়াপাড়া গ্রামের ফুলচাষি রিজাউল ইসলাম চার বিঘা জমিতে গোলাপের চাষ করেছেন। এখন গোলাপের দাম দ্বিগুণ। ১ দিন পরে আরো বাড়বে। ফুলের মান ধরে রাখতে গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরিয়ে রাখা হয়েছে। এজন্য বাড়তি তিন থেকে চার টাকা খরচ হচ্ছে। ভালবাসা দিবসকে টার্গেট করে সেই ফুল বিক্রি করতে পারলে সব খরচ উঠে লাভ হবে বাড়তি।
গদখালীতে প্রথমবারের মতো টিউলিপ চাষ করেছেন পানিসারার ইসমাইল হোসেন। তার পাঁচশতক জমিতে ফুঠেছে বিভিন্ন রঙের সাত প্রকারের টিউলিপ ফুল। তিনি জানান, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে তার জমিতে টিউলিপ ফোটা শুরু করেছে। ভালোবাসা দিবসে এসব টিউলিপ বিক্রি করা হবে। করোনা আর ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের রেশ কাটিয়ে চাষিরা আশার আলো দেখছিলেন। তবে অসময়ের বৃষ্টিতে অনেক ফুল নষ্ট হয়ে গেছে। বর্তমানে ফুলের যে দাম আগামী তিন দিবস পর্যন্ত থাকলে সব ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, সরকারের বিধি নিষেধে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম। কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছে ফুলের বাজার। মানুষ ফুল কিনছে। বিভিন্ন কারণে এবার ফেব্রুয়ারিতে ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে তিন দিবসে অন্তত বিশ থেকে পঁচিশ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হতে পারে। তিনি জানান, অসময়ের বৃষ্টিতে অনেক ফুল নষ্ট হয়ে গেছে। পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস যত কাছে আসবে, ফুলের দামও তত বাড়বে বলে জানান এই নেতা।