আবদুল কাদের
যশোর আড়াইশ শয্যা হাসপাতালে প্রথমবারের মতো চালু হয়েছে অত্যাধুনিক চর্ম রোগের চিকিৎসা। গত তিন মাসে এই হাসপাতালে চর্ম রোগের অপারশেন করা হয়েছে ৬০ রোগীর। আর চিকিৎসা নিয়েছেন ৯ হাজার। পরীক্ষা করা হচ্ছে চামড়ার বায়োপসি (গ্রথিত কোষ কেটে নিয়ে পরীক্ষা)। দেয়া হচ্ছে ত্বকের উঁচু ও নিচু স্থানে ইনজেকশন। যা খুবই ব্যয়বহুল। গরিব রোগীরা বিনামূল্য এই চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে। শিগগিরই চালু হবে ইলেক্ট্রোসার্জারি ও কার্গোসার্জারি।
চিকিৎসকরা বলছেন, দেশের আড়াইশ শয্যা হাসপাতাগুলোর মধ্যে যশোরেই প্রথম চর্ম রোগের আধুনিক চিকিৎসা করা হচ্ছে। এখন প্রয়োজন ইলেক্ট্রোসার্জারি, কার্গোসার্জারি মেশিন, লেজার মেশিন ও পাঞ্জ রিডার। প্রয়োজনীয় জনবল আর এসব আধুনিক যন্ত্রপাতি পেলে তারা আরও উন্নত সেবা দিতে পারবেন এই অঞ্চলের রোগীদের।
ঝিকরগাছার মৃত্যঞ্জয় নামে এক যুবক দীর্ঘদিন ধরে মুখের ক্ষত সমস্যায় ভুগছেন। বিভিন্ন চিকিৎসক দেখিয়েও ভালো হয়নি। শেষমেষ যশোর আড়াইশ শয্যা হাসপাতালে আসলে চিকিৎসকরা তার মুখের বায়োপসি করান। এরপর সঠিক চিকিৎসা পেয়ে তিনি সুস্থ আছেন। শহরের বেজপাড়ার শিশু অমিরের (১২) মাথায় টাকপোকা দেখা দেয়। এতে মাথার চুল পড়ে যাচ্ছিল বলে তার অভিভাবক রেবেকা সুলতানা জানান। পরে এই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা পেয়ে আমাদের ছেলে ভালো আছে।
আরও পড়ুন:এএফসির কমিটিতে সালাউদ্দিন-নাবিল
একই এলাকার বেজপাড়ার সোহাগ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে নখের সমস্যায় ভুগছিলেন। নখে পচন ধরেছিল তার। গত মার্চ মাসে যশোর আড়াইশ শয্যা হাসপাতালের চর্ম রোগ বিভাগে নখের অপারেশন করার পর ভালো আছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, যশোর আড়াইশ শয্যা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর গত জানুয়ারি মাস থেকে এই প্রথম চর্ম রোগের আধুনিকমানের চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এই তিন মাসে প্রায় ৯ হাজার রোগী চর্মরোগের চিকিৎসা নিয়েছেন। আর অপারেশন করেছেন ৬০ জন রোগী। যারা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা পেয়েছেন। এসব রোগের চিকিৎসা খরচ বাইরের হাসপাতালে ব্যয়বহুল।
হাসপাতালের চর্মরোগের চিকিৎসক গোলাম মোর্ত্তজা জানান, খুলনা বিভাগ তথা দেশের আড়াইশ শয্যা হাসাপাতলের মধ্যে প্রথম চর্মরোগের আধুনিক চিকিৎসা কার্যক্রম আমরা শুরু করেছি। প্রতি শনিবার অপারেশন করা হয়। শুরু করা হয়েছে চামড়া কেটে পরীক্ষার ব্যবস্থা। দেয়া হচ্ছে চুলপড়া রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি মুখের চামড়ার ক্ষত স্থানের বাইরে ও ভিতরে ইনজেকশন। এসব চিকিৎসা বাইরের ক্লিনিক বা হাসপাতাল থেকে নিতে হলে একজন রোগীর কমপক্ষে ৩ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকা লাগত। স্কিনের বায়োপসি করতে ৭ হাজার, চামড়ার নিচে ইনজেকশন দিতে ৩ হাজার, নখের সার্জারি করতে ৫ হাজার এবং তিল, আচিল ও চামড়ার টিউমার অপারেশন করতে প্রয়োজন হয় ১০ হাজার টাকার। সেটি যশোর আড়াইশ শয্যা হাসপাতালে আমরা বিনামূল্য সেবা দিচ্ছি। এতে এই অঞ্চলের মানুষ আধুনিক চিকিৎসা পাচ্ছেন কোন টাকা ছাড়াই। শিগগিরই চালু করা হবে ইলেক্ট্রনিক ও ক্রায়োসার্জারি চিকিৎসা।
আরও পড়ুন:শার্শায় বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা, কেন্দ্রীয় নেতাসহ আহত ১০
চিকিৎসক গোলাম মোর্ত্তজা জানান, আমাদের এখানে ৫ জন চিকিৎসকের জায়গায় তিন জন, ১০ জন কর্মচারীর জায়গায় ৫ জন নিয়ে কাজ করছি। জনবল পূর্ণ হলে এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি আসলে রোগীরা আরও ভালোমানের চর্মরোগের চিকিৎসা হাসপাতাল থেকে পাবেন বলে আশা করছি।
এব্যাপারে যশোর আড়াইশ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার হারুণ অর রশিদ জানান, আমাদের হাসপাতালে চর্ম ও যৌন রোগের আধুনিক চিকিৎসা সেবা চালু হয়েছে। বিশেষ করে চর্ম রোগের চিকিৎসায় মানুষের সাড়া ফেলেছে। প্রতিমাসে কমপক্ষে ৩ হাজার রোগী এখান থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। আশা করছি ঈদের পর ইলেক্ট্রনিক ও ক্রায়োসার্জারি মেশিন চলে আসবে। তখন আধুনিক পদ্ধতির ইলেক্ট্রনিক ও ক্রায়োসার্জারি চিকিৎসা শুরু হবে।
আরও পড়ুন:অর্ধেক দামে বা বিনামূল্যে পণ্য মেলে আইডিয়াতে
১ Comment
Pingback: বর্ষবরণ ঘিরে যেন প্রাণের ছোঁয়া লেগেছে সংস্কৃতির শহর যশোরে