জহিরুল জিতু: চলচ্চিত্র গবেষক ও লেখক বাবলু ভট্টাচার্যের আজ ৫৭ তম জন্মদিন। ১৯৬৫ সালের ২৪ এপ্রিল তার জন্ম। তিনি আমাদের যশোরের সন্তান। বাড়ি মণিরামপুর উপজেলায়। তার বাবা আওয়ামী লীগের প্রেসিডিযাম মেম্বার পিযুস ভট্রাচার্য।
সাহিত্যিক-সংগঠক রণেশ দাশগুপ্ত বলতেন ‘বিপ্লব হবে কি হবে না কিংবা কবে হবে, তা সময়ই বলে দিবে; কিন্তু এই ভেবে আমি আমার ব্রত ভাঙবো কেন?’
সেই হিসেবে বাবলু ভট্টাচার্যও একজন ব্রতচারী মানুষ। আবার যথেষ্ট নিভৃতচারীও বটে। সেই নিভৃতে উছলে পড়া সৃষ্টির সংখ্যা কম নয়। তিনি চলচ্চিত্র, চিত্রকলা, নাটক ও ইতিহাস-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যেমন লিখেছেন তেমনি অনেক অনুবাদও করেছেন। বর্তমানে তার লেখা বইয়ের সংখ্যা ২৭। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র অঙ্গনে চলচ্চিত্র ও চলচ্চিত্র সাহিত্য দুই-ই সমান দক্ষতায় গ্রহণ করেন যারা, বাবলু ভট্টাচার্য তাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও চলচ্চিত্র-লেখক। তাঁর প্রতিটি লেখায় গভীর অনুসন্ধিৎসা নিহিত।
তিনি চলচ্চিত্র জগতের ফ্যান্টাসি ভেঙে, রাজনীতি-ইতিহাস ও মননের আলোকে উপর-নীচ করে দেখেন এবং সেভাবেই পাঠকের সামনে উপস্থাপন করেন। চলচ্চিত্র বিষয়ে তাঁর লেখা গ্রন্থ ‘চলচ্চিত্রের ইতিহাস এবং বাংলাদেশের চলচ্চিত্র’, ‘সত্যজিৎ চলচ্চিত্রের খুটিনাটি’, ‘হলিউডের রাজনীতি ও চার্লি চ্যাপলিন’, ‘উৎপল দত্ত : রাজনীতি ও থিয়েটার’, ‘প্রসঙ্গ : সিনেমা’, ‘চলচ্চিত্র চরিতাবিধান’, ‘চলচ্চিত্রকোষ’ বাংলা চলচ্চিত্র সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে তার দীর্ঘ কাজ ‘সত্যজিৎ রায়’ অত্যন্ত উঁচুমানের একটি গবেষণা। এদেশের চলচ্চিত্রের চর্চায় তার ‘চলচ্চিত্রের ইতিহাস ও বাংলাদেশের চলচ্চিত্র’ বইটি অগ্রগণ্য এবং একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ও বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে আগ্রহ সব সময় গভীর।
এছাড়াও তার সব লেখায় রাজনীতি ও ইতিহাসের ঘনিষ্ঠ সন্নিবেশ দেখা যায়। তার লিখিত অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে ‘ভিয়েতনাম বিপ্লব’, ‘আঙ্কেল হো’, ‘সব গল্পের নায়ক ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন’, ‘লালমিয়া’, ‘রাজকুমারী ডায়না’, ‘ডেভিড ওয়ার্ক গ্রিফিথ’, ‘পাবলো পিকাসো’, ‘গৌতম বুদ্ধ’ তারই পরিচয় বহন করে। নিপাট সাহিত্য বলতে যা বোঝায় সেখানেও তার বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। কখনো কখনো গল্পও লিখেছেন তিনি। তার ছোট গল্পের বই ‘সত্যজিৎ রায় পুড়ছেন’- পাঠককে বিস্মিত করে। তার অনূদিত ‘আফ্রিকার কবিতা’, ‘লাতিন আমেরিকার কবিতা’, ‘স্পেনের কবিতা’ গ্রন্থের মাধ্যমে তার অনুবাদের দক্ষতাও প্রকাশ পেয়েছে।
বাবলু ভট্টাচার্য আপাদমস্তক চলচ্চিত্রের লোক। চলচ্চিত্র বিষয়ে পড়ালেখা করেছেন কলকাতা থেকে। প্রয়াত চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবিরের সহকারী হিসেবে তার চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে। টেলিভিশনের জন্যে নাটক রচনা এবং পরিচালনা করেছেন অনেক। এখন তিনি একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র তৈরিতে ব্যস্ত। ব্যস্ততম দিনেরও সিংহভাগ তার বই ও পত্র-পত্রিকা পঠন-পাঠনের মধ্যেই কাটে।
সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত যশোর জেলার মণিরামপুরের পাড়ালা গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন আজকের এই দিনে। পারিবারিক ঐশ্বর্য ও লেখালেখির মতো ব্যক্তিগতভাবেও তিনি আন্তরিক এবং নিত্যপ্রবণ মানুষ। ছেলেবেলার গভীর অন্বেষা থেকে তিনি পৃথিবীর অনেক দেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন। তত্ত্ব জ্ঞান, বহুমুখী দৃষ্টিভঙ্গি আর চলচ্চিত্রনিষ্ঠ এই মানুষের কাছে সমৃদ্ধ চলচ্চিত্র ও চলচ্চিত্র সাহিত্যের জন্য অপেক্ষা করা যায়। ২৪ এপ্রিলের আজকের দিনে চলচ্চিত্রকার ও লেখক বাবলু ভট্টাচার্যকে জানাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা।