আজ আমাদের সার্টিফিকেটের মূল্যায়ন করি বলে সৃজনশীলতা প্রচলন থাকলেও এটার সঠিক কোন ভিত্তি নেই। সার্টিফিকেট ভাল করার জন্য আমরা নৈতিক ও অনৈতিক পথ অবলম্বন করছি। প্রশ্ন ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে সামান্য বিষয়।
মাহমুদ হাসান সোহাগ: একটি শিক্ষাব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ প্রতিফলন ঘটে জাতির নীতি নৈতিকতা, মানুষের সামাজিক আচরণ, জাতীয় উন্নতিসহ সামগ্রিক অবস্থা। আমাদের স্বাধীনতার ৫১তম বছরে বাংলাদেশে স্বাক্ষরতা ও শিক্ষার হার দিন দিন বাড়ছে। সেই সাথে বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষার অবকাঠামোগত উন্নয়নও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার মান কতটা বাড়ছে? সমাজে কতটা প্রভাব পড়ছে সেটাই দেখার বিষয়। বিগত বছরগুলোতে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন গবেষণাগার স্থাপন করা হয়েছে। আমরা কি শুধু সার্টিফিকেট তৈরির জন্য এই উন্নতি করছি? আমরা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেখেছি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতিসহ বিভিন্ন কোন্দলে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীসহ শিক্ষকরা লাঞ্ছিত হচ্ছে এবং নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে হয়েছে অনৈতিক ছাত্রের হাতে। মেয়ে খুন করছে নিজের পিতা-মাতাকে।
আমাদের দেশের জনগণের সবচেয়ে বড় অংশের শিক্ষার চাহিদাই পূরণ করে সাধারণ শিক্ষা। এ শিক্ষা থেকেই অনেক মেধাবীরা বের হয়ে দেশে-বিদেশে সুনাম কুড়িয়ে আনছে সত্য। কিন্তু বেশ কিছু ত্রুটির কারণে জাতি সামগ্রিকভাবে শিক্ষার সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ত্রুটিগুলো আমাদের মেধা ও প্রতিভাগুলোকে কাজে লাগাতে দিচ্ছে না। এ জন্যই আমাদের অগ্রযাত্রার গতি এখনো ধীর হয়ে পড়েছে। সবকিছুর মূলে আছে আমাদের নৈতিক অবক্ষয়।
আমাদের এই পরিবর্তন কি শুধু পাঠ্যপুস্তকের দ্বারা পরিবর্তন সম্ভব? আমাদের পাঠ্যপুস্তকের সাথে নৈতিকতার চর্চা ও সৃজনশীলতার উপর গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
আমাদের মেধার মূল্য শুধু সার্টিফিকেট দিয়ে করা উচিত?
আজ আমাদের সার্টিফিকেটের মূল্যায়ন করি বলে সৃজনশীলতা প্রচলন থাকলেও এটার সঠিক কোন ভিত্তি নেই। সার্টিফিকেট ভাল করার জন্য আমরা নৈতিক ও অনৈতিক পথ অবলম্বন করছি। প্রশ্ন ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে সামান্য বিষয়।
আমাদের নীতি নৈতিকতা শেখা ও তার প্রয়োগ করার যায়গাটা খুবই সীমিত। এটাই হচ্ছে মানসম্পন্ন শিক্ষার বড় ত্রুটি।
আমরা যতই উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হই না কেন নীতি নৈতিকতা হারিয়ে কোন দিনই মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতে পারি না।
আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের আদর্শের সাথে পরিচিত করানো ও সে অনুযায়ী আত্মগঠনের দিকনির্দেশনা ও পরিবেশ সব কিছুর অভাব প্রকট।
সার্বিক শিক্ষার এবং তার ফলপ্রসুতার ব্যাপারে সামাজের কারো কোন পেরেশানির কমতি নেই।
কিন্তু কখনো এই ধারা পরিবর্তন হবে না, যদি আমরা আমাদের ভিতরের নৈতিকতা জাগ্রত না করি।
মানুষের সাথে কাজ না করলে আর তাদের সুখ দুঃখ না বুঝলে কখনো আমাদের এই পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। আসুন আমরা যারা যুব সমাজকে পুজি করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে তৎপর তারা সবকিছু ছেড়ে একটি সমৃদ্ধশীল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিজ্ঞা করি।
নৈতিক শিক্ষা বর্জিত এই শিক্ষাব্যবস্থা কেবলমাত্র আমাদের অজস্র ডিগ্রিধারী তথাকথিত স্কলার ও মেধাবী মানুষ উপহার দিচ্ছে কিন্তু কল্যাণের ধারায় সমাজ পরিবর্তনের কোন কারিগর দিচ্ছে না। যখন দেখা যায় কোন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষকরা অনৈতিক কর্মকান্ডের জন্য বরখাস্ত হচ্ছে অথবা কোন উচ্চশিক্ষিত মানুষকে যদি দেখি ঘুষ, সুদ, দুর্নীতির সাথে জড়িত তখন মনে প্রশ্ন জাগে তথাকথিত বস্তুবাদী শিক্ষা ব্যবস্থা কি আমাদের পূর্ণাঙ্গ মানুষ তৈরি করতে পেরেছে না কি উচ্চ শিক্ষিত প্রাণী বানিয়েছে।
আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের হাতিয়ার হোক বিবেক, বুদ্ধি ও নৈতিক জ্ঞান।
লেখক : ছাত্র ও প্রতিষ্ঠাতা ‘ঐক্য-বন্ধন’