শাহারুল ইসলাম ফারদিন
একদিকে প্রচণ্ড গরম, অন্যদিকে লোডশেডিং। এই দুই কারণে যশোরের ইলেকট্রিক পণ্যের দোকানগুলোয় বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। দুর্ভোগ ঘোচাতে সোলার কিংবা চার্জার ফ্যানের দিকে ঝুঁকছে লোকজন। সুযোগে দোকানিরা দাম বাড়িয়েছে প্রায় দিগুণ। তারা বলছেন, গতবছরের তুলনায় প্রতিটি চার্জার বা সোলার ফ্যানের দাম বেড়েছে সাতশো থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে ক্রেতারা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে বেশি দাম দিয়েও মিলছে না কাক্সিক্ষত ফ্যান। তাই অনেকে বাধ্য হয়েই পুরনো ফ্যান সচল করছেন। এছাড়াও ভিড় বাড়ছে চার্জার লাইট, চার্জার ফ্যান, আইপিএস, ইউপিএস, এসি ও এয়ারকুলারের দোকানে।
শহরের বিভিন্ন ইলেকট্রিক পণ্যের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হঠাৎ করেই চাহিদা ক্রেতা সমাগম বেড়েছে সোলার ও চার্জার ফ্যানের। তবে চাহিদা অনুযায়ী ফ্যান যোগানে হিমশিম খাচ্ছেন বিক্রেতারা। ফুরিয়ে গেছে বেশির ভাগ দোকানে স্টকে থাকা ফ্যান। সুযোগ বুঝে বাড়তি দামে ফ্যান বিক্রি করছেন অনেক ব্যবসায়ী। বাজারে ওয়ালটোন, ক্লিক, ভিশন, ডিফেন্ডার, মিডিয়া, কেনাডিসহ চায়না কোম্পানির চার্জার ফ্যান পাওয়া যাচ্ছে। এসব কোম্পানির ১২ ইঞ্চি একটি চার্জার ফ্যানের দাম রাখা হচ্ছে তিন হাজার ছয়শত থেকে চার হাজার দুইশত টাকা। ১৪ ইঞ্চি রাখা হচ্ছে পাঁচ হাজার পাঁচশত থেকে আটশত টাকা। ১৬ ইঞ্চি রাখা হচ্ছে সাত হাজার থেকে আট হাজার টাকা। প্রতিদিনই দাম বাড়ছে গত বৃহস্পতিবার ১২ ইঞ্চি একটি চার্জার ফ্যানের দাম ছিলো তিন হাজার ছয়শত টাকা। গত শনিবার দাম বাড়ে দুইশত টাকা। যা রোববার বেড়ে হয়েছে চার হাজার দুইশত টাকা। এছাড়াও গত একমাসের ব্যবধানে এসি, ফ্যান, চার্জার ফ্যান, এয়ারকুলার, আইপিএস ও ইউপিএসের বিক্রি হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ, যা গত কয়েক বছরেও হয়নি। আর বর্ধিত এ চাহিদার কারণে দামও বেড়েছে।
শহরের মাইকপট্টি এলাকায় চার্জার ফ্যান কিনতে আসা রামনগরের পুকুরকুল গ্রামের আব্দুর রহিম বলেন, দিনের অধিকাংশ সময়ই বিদ্যুৎ থাকছে না। তাই চার্জার ফ্যান কিনতে বাজারে আসছি। কিন্তু কয়েকটা দোকান খুঁজেও কাক্সিক্ষত ফ্যান পেলাম না। এসময় ফ্যানের খোঁজে বাজারে আসা রাহেলা বেগম বলেন, কয়েক দোকানে ফ্যান খুঁজেও পেলাম না। সবাই বলছে শেষ হয়ে গেছে। এদিকেও লোডশেডিংয়ে বাসায় থাকা দায়। ছোট বাচ্চা নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। তাই ফ্যান ছাড়া বাসাতেও যেতে পারছি না।
শহরের মাইকপট্টি এলাকার মেসার্স রোকন ইলেকট্রনিক্সের মালিক সৈয়দ রাশেদ আলী রোকন বলেন, আমরা ফ্যান, চার্জার ফ্যান ও এয়ারকুলার সবচেয়ে বেশি বিক্রি করছি। প্রতিদিন এসব জিনিস ১৫-২০টির মতো বিক্রি হয়। তবে গতবারের তুলনায় দাম বেড়েছে সাতশো টাকা থেকে এক হাজার টাকা। তারপরও প্রতিদিন ৩০টির বেশি রিচার্জেবল ফ্যান বিক্রি করছি। এক সপ্তাহ ধরে ফ্যানের চাহিদা বেশি। তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন কোম্পানির ১২ ইঞ্চি একটি চার্জার ফ্যানের দাম রাখা হচ্ছে তিন হাজার ছয়শত থেকে চার হাজার দুইশত টাকা, ১৪ ইঞ্চি রাখা হচ্ছে পাঁচ হাজার পাঁচশত থেকে আটশত টাকা, ১৬ ইঞ্চি রাখা হচ্ছে সাত হাজার থেকে আট হাজার টাকা। প্রতিদিনই দাম বাড়ছে। গত বৃহস্পতিবার ১২ ইঞ্চি একটি চার্জার ফ্যানের দাম ছিলো তিন হাজার ছয়শত টাকা, গত শনিবার দাম বাড়ে দুইশত টাকা যা রোববার বেড়ে হয়েছে চার হাজার দুইশত টাকা।
একই মার্কেটের এসএস এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সাজ্জাদ হোসেন জানান, আমার দোকানে খুব বেশি চার্জার ফ্যান নেই। যে কয়টা আছে সেগুলোও বেশি দামি। প্রতিদিনই চার্জার ফ্যানের চাহিদা বাড়ছে সেই সাথে বাড়ছে দামও। কিন্তু সেই অনুযায়ী ডেলিভারি নেই। ঢাকায় যাদের কাছে অর্ডার করি, তাদের স্টকে খুব বেশি মাল নেই বলে জানাচ্ছে।
শহরের গাড়ীখানায় ওয়ালটন প্লাজার ম্যানেজার মিজানুর রহমান জোয়ার্দ্দার বলেন, গত তিন দিনে আড়াই শতাধিক চার্জার ফ্যান বিক্রি হয়েছে। তিনটি সাইজের পাঁচ মডেলের এসব চার্জার ফ্যান তিন হাজার ৯৯০ থেকে শুরু করে ছয় হাজার ৪৯০ টাকা পর্যন্ত দাম নেয়া হয়। তিনি বলেন, ওয়ালটনের দেড় টন ক্ষমতাসম্পন্ন এসির চাহিদা সবচেয়ে বেশি। গড়ে প্রতিদিন ২০টির বেশি এসি ও ফ্যান বিক্রি হচ্ছে। শহরের পালবাড়ি সিঙ্গার প্লাসের ম্যানেজার তরিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের শোরুমে এখন এসির সংকট আছে। প্রতিদিন ১৩-১৪টি বিক্রি হয়েছে। এক দিনে সর্বোচ্চ ২০টি বিক্রি হয়েছে। এখনও প্রচুর চাহিদা আছে।
শহরের মনিহার বাসস্ট্যান্ড ব্যাটারি মার্কেটের আজাদ ব্যাটারির স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম আজাদ বলেন, আইপিএস বিক্রি হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। প্রতিদিন বেশ কয়েকটি আইপিএস ও ইউপিএস বিক্রি করছি।
এদিকে লোডশেডিংকে ঘিরে চার্জার ফ্যান ও লাইটের দাম মনিটরিং করেছে জেলা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব। তিনি বলেন, গরমে চার্জার ফ্যানের চাহিদা বাড়ে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চার্জার ফ্যান বা চার্জার জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে পারে বলে তথ্য ছিল। সেই অনুযায়ী বিষয়টি তদারকি করেছি। এখনো তেমন অপরাধ চোখে পড়ে নি। তবে আমরা ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছি। তারা যাতে এসব পণ্যের দাম না বাড়িয়ে দেয়, সেজন্য সতর্ক করা হয়েছে। অযৌক্তিক ও অস্বাভাবিক মূল্যে বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ১০ দিন ধরে যশোরে ৩৮ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লোডশেডিং।