নিজস্ব প্রতিবেদক
চার পক্ষে বিভক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নানা কর্মসূচিতে ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে যশোর জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বুধবার সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করেন। জেলায় সংগঠনটির এ অবস্থার জন্য কেউ কেউ জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের দলীয় কোন্দল আর ছাত্রলীগের বর্তমান জেলা নেতৃত্বকে দায়ী করেছেন।
আবার দায়িত্বশীলরা বলেছেন, গণ সংগঠনের নেতাদের সমন্বয় না থাকায়, সংগঠনে গ্রুপ এবং উপ-গ্রুপ হয়ে বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে সভাপতি-সম্পাদকের প্রকাশ্য এই গ্রুপিংয়ের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করার পরেও তাদের দাবি যশোর জেলা ছাত্রলীগ এখনো ঐক্যবদ্ধ।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, যশোর জেলা আওয়ামী লীগ কার্যত দুটি গ্রুপে বিভক্ত। একটির নেতৃত্বে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার অপরটি সদরের এমপি কাজী নাবিল আহমেদ। এর প্রভাব পড়েছে ছাত্রলীগেও। ফলে বুধবার সকালে শহরের খাড়িখানাস্থ আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি শুরু হয়।
সেখানে সংগঠনটির যশোরের সভাপতি ও সম্পাদক একসঙ্গে কর্মসূচি পালন করলেও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন, কেক কাটাসহ পৃথক ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে দেখা গেছে। বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাউদ্দিন কবির পিয়াসের নেতৃত্বে জেলা ছাত্রলীগের একাংশ (শাহীন চাকরাদার এমপির অনুসারি) শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এর পরে সদর, পৌর, সরকারি এম এম কলেজ ও সরকারি পলিটেকনিক কলেজ ছাত্রলীগ শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
এর পরেই জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুল আলমের নেতৃত্বে এবং বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশাদ পল্লবের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। দুপুর একটার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ইমরান হোসেনের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। দুপুরে দলীয় কার্যালয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাউদ্দিন কবির পিয়াসের নেতৃত্বে কেক কাটা হয়।
সম্পাদক পল্লবের নেতৃত্বে জেলা পরিষদের মিলনায়তনে এবং শহরের কাজী পাড়াস্থ কাজী শাহেদ সেন্টারে সহ সভাপতি ইমরান হোসেনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কেক কাটেন। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, জেলায় সংগঠনটির এ অবস্থার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের দলীয় কোন্দল আর ছাত্রলীগের বর্তমান জেলার সভাপতি-সম্পাদক দায়ী।
জেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ইমরান হোসেন বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক ২০ মাসেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে পারেনি। এমনকি কোন কার্যনির্বাহী কমিটির সভা করতে পারেনি। ২৩ সদস্যের কমিটিকে একসাথে করতে পারেনি এই সভাপতি-সম্পাদক। জেলার সঙ্গে উপজেলার কমিটি গুলোর অবস্থা আরো খারাপ। আজ পর্যন্ত কোন কমিটি দিতে পারেনি। তাদের সাংগঠনিক অক্ষমতায় ইতোমধ্যে অনেকগুলো উপগ্রুপে বিভক্ত হয়েছে।
পৌর ছাত্রলীগের সদস্য আলামিন হোসেন বলেন, জেলা ছাত্রলীগ দীর্ঘদিন ধরে বিশৃঙ্খলায় চলছে। ছাত্রলীগকে এগিয়ে নিতে হবে সেটার বিষয়ে আমাদের অভিভাবকরা ভাবছে কিনা বুঝতে পারছি না। পদ আছে মাঠে নাই, আমরা এমন নেতৃত্ব দেখতে চাই না। সরকারি এম এম কলেজ ছাত্রলীগ নেত্রী এলিন বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মানে এমন ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেখতে চাই। যে ছাত্রলীগের গ্রুপিং কোন্দল রয়েছে; সেই ছাত্রলীগকে চাই না।
এদিকে জেলা ছাত্রলীগের চারটি গ্রুপে পৃথক কর্মসূচি করার পরেও নিজেদের ঐক্যবদ্ধ দাবি করেছেন সংগঠনটির জেলার সভাপতি-সম্পাদক। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানজীব নওশাদ পল্লব বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগ ঐক্যবদ্ধ। এখানে কোন বিভেদ নেই। পৃথক যদি কোন কর্মসূচি হয়ে থাকে তাহলে কোন বড়ভাই অনুসারী বা ব্যক্তিস্বার্থে তারা করছেন।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সালাউদ্দিন কবির পিয়াস বলেন, নানা আয়োজনে ছাত্রলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। ‘সকালে দলীয় কার্যালয়ে পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। এছাড়া কেক কাটা, আনন্দ মিছিল শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। আলাদা কোন কর্মসূচি করা হয়নি। একসাথেই কর্মসূচি করা হয়েছে।