আব্দুল্লাহ সোহান, মণিরামপুর (যশোর): কৃষিতে পুরস্কারপ্রাপ্ত জাহাঙ্গীর আলম এবার চাষ করেছেন সূর্যমুখীর। জাহাঙ্গীর আলম মণিরামপুর উপজেলার হাজরাকাটি গ্রামের প্রান্তিক কৃষক। ২০ বছর ধরে কৃষি কাজ করে আসছেন তিনি। ইতোপূর্বে কৃষি মেলাসহ বিভিন্ন কৃষি সম্পর্কিত প্রদর্শনীতে কয়েকবার পুরস্কৃত হয়েছেন। একজন সফল কৃষক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে সবার নজর কেড়েছেন।
তিনি বলেন, প্রথম বারের মতো ১ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে তেল ফসল সূর্যমুখীর চাষ শুরু করেছি। কৃষি অফিস থেকে পেয়েছি বিনামূল্য বীজ। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে সূর্যমুখী চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান ও সফল হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। উদ্দেশ্য ছিল অর্থনৈতিক। কিন্তু সূর্যমুখী যে সৌন্দর্য বিলিয়ে মুগ্ধ করবে, তা আগে কল্পনাও করতে পারেন নি। ভালো ফলন পেলে আগামীবার বাকি জমিতেও চাষ করবো। সূর্যমুখী চাষ করতে এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। ইউরিয়াসহ প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগও করেছি। তবে কিছুদিন আগে আবহাওয়া খারাপ থাকায় বেশ বেগ পেতে হয়েছে। এলাকার অনেকেই আমার দেখাদেখি সূর্যমুখী চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। বিনামূল্যে পাওয়া বীজে ভালো ফলন হয়েছে। সফলতা পেলে প্রতিবেশীদের চাষ করতে উৎসাহিত করবো। এছাড়া শুনেছি সূর্যমুখীর বীজ থেকে যে তেল উৎপন্ন হয় তা স্বাস্থ্যসম্মত ও মানসম্পন্ন। ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণ করবে সূর্যমুখী তেল।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সূর্যমুখীর তেল কোলেস্টেরলমুক্ত প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় সূর্যমুখীর তেল শরীরের দুর্বলতা, কার্যক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে। যে কোন তেলের চাইতে সূর্যমুখীর তেল দশগুণ বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ।
হাজরাকাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে তাকালেই চোখে পড়বে অপরূপ সৌন্দর্যের উৎস হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সূর্যমুখী। গাছে গাছে ফুটেছে হলুদ রঙের ফুল। ফুলে ফুলে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌমাছি। প্রতিদিন বিকেলে আশপাশের এলাকা থেকে সৌন্দর্য পিপাসুরা আসেন সূর্যমুখীর প্রদর্শনী দেখতে। দৃষ্টিকাড়া ফুলের মধ্যেই দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন আগত শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ। আর আগতদের শরীরের স্পর্শে ঝরে পড়ছে পাপড়ি, ভেঙে যাচ্ছে গাছ। এতে অবশ্য সূর্যমুখী চাষীর কিছুটা ক্ষতিও হচ্ছে।
সূর্যমুখীর সৌন্দর্য অবলোকন করতে আসা দশম শ্রেণির ছাত্রী ঐশি ও শামিমা আক্তার রজনী বলেন, সূর্যমুখী ক্ষেতটি ছোট্ট হলেও দেখা মাত্র মন ভরে ওঠে। হলুদ ফুলে স্কুলের পিছনের মাঠটি যেন হাসছে।
দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র মিঠু সাইকেলে বন্ধু আব্দুর রহমানকে নিয়ে ফুল দেখতে এসেছে। তারা জানায়, আপনাগের মত আমরা একেনে ছবি তুলতি আইছি, প্রত্যেক দিন বিকেল হলি আমরা এই বাগানে আসি।
উপজেলা কৃষি অফিসার আবুল হাসান বলেন, উপজেলার ২৫-৩০ জন কৃষক এ বছর সূর্যমুখীর চাষ করছেন। কৃষকেরা সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হবেন বলে আশা করছি। এবছর মোট ৩ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হচ্ছে যা গতবারের তুলনায় অনেক বেশি। আগামীতে সূর্যমুখী চাষির সংখ্যা আরো বাড়বে।