নিজস্ব প্রতিবেদক
চিংড়ি চাষে ভাগ্য বদলেছে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার গোলাম কিবরিয়া রিপনের। শুধু নিজের ভাগ্যই বদলায়নি, তার দেখানো পথে হেঁটে ভাগ্য বদলেছে পাইকগাছার অসংখ্য চিংড়ী চাষির। নিজে সফল হওয়ার পাশাপাশি এলাকায় অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন রিপন। উপকূলীয় গ্রামীণ অর্থনীতিতে রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।
শুরুটা ২০০১ সালে চিংড়ি চাষের মাধ্যমে। তবে রিপনের গল্পটা সহজ ছিল না। লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে আর দশজনের মতো চাকরিতে না গিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। ২০০১ সালে পাইকগাছায় চিংড়ি পোনা ব্যবসার মাধ্যমে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন এ তরুণ। পোনা ব্যবসায়ে সফলতা পেয়ে ২০০৭ সালে ১৫০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে শুরু করেন বাগদা চিংড়ি চাষ। বহু চড়াই উতরাই পেরিয়ে সফলতার মুখ দেখেন। সফলতার স্বপ্নে বিভোর হয়ে সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে ঘেরের সংখ্যা ও চিংড়ি চাষের পরিধি বাড়াতে শুরু করেন। বর্তমানে তার পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলায় ১ হাজার ৮০০ বিঘার ৬টি চিংড়ি ঘের রয়েছে। পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন রয়্যাল ফিস ট্রেডিং ও রয়্যাল ফিস কালচার নামের দু’টি প্রতিষ্ঠান পোনা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। প্রতিবছর কমপক্ষে ৫০ কোটি চিংড়ি পোনা সরবরাহ করে তার প্রতিষ্ঠান। পোনা ব্যবসা এবং চিংড়ি উৎপাদন থেকে বছরে ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা আয় করেন রিপন।
এ ছাড়া উপকূলীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখায় রিপন ২০১৩, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে উপজেলা পর্যায়ে এবং ২০২৩ সালে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে মৎস্য অধিদফতর থেকে পুরস্কার হিসেবে সম্মাননা পান।
সফলতার গল্প জানতে চাইলে রিপন বলেন, ব্যবসায়িক জীবনে আমাকে কখনও পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে চিংড়ি চাষ খুব সহজ ছিল না। এখানে একদিকে যেমন রোগ বালাইয়ের প্রকোপ রয়েছে, তেমনি রয়েছে চিংড়ি চাষ বন্ধের নানা ষড়যন্ত্র। তবে আমি লেগে ছিলাম। শুরুতে পরিবার চেয়েছিল লেখাপড়া শেষে আমি চাকরিতে যাই। কিন্তু আমার ইচ্ছা আমি উদ্যোক্তা হব। আল্লাহ তায়ালা আমাকে সফলতা দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমার প্রজেক্টে এবং দু’টি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে ৪ থেকে ৫০০ লোক। আমার চিংড়ি চাষ পদ্ধতি দেখে এলাকার বহু চাষি এ পেশায় সফল হয়েছেন। এছাড়া সব সময় স্থানীয় উপজেলা মৎস্য অফিসের সহায়তা পেয়েছি।
কোন পদ্ধতিতে চাষ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সনাতনী পদ্ধতি পরিহার করে তিনি উন্নত সনাতন পদ্ধতি অনুসরণ করে মৎস্য সম্প্রসারণ অধিদফতরের সার্বিক পরামর্শে চিংড়ি চাষ করছেন। এতে উৎপাদন যথেষ্ট ভালো হচ্ছে।
রিপনের দেখানো পথে হেঁটে সফলতা পেয়েছেন আজিবর রহমান মোল্লা। তিনি জানান, আমরা শুরুতে প্রচলিত পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করতাম। রিপন ভাইয়ের সফলতা দেখে আমি তার শরণাপন্ন হই। তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে উন্নত সনাতন পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে সফলতা পেয়েছি।
পাইকগাছা উপজেলা সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সৈকত মল্লিক জানান, উপজেলায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হয়। প্রায় ৫ হাজার ছোট-বড় ঘের রয়েছে। এসব চিংড়ি চাষিদের মধ্যে গোলাম কিবরিয়া রিপন একজন সফল চিংড়ি চাষি। তাকে অনুসরণ করে এই অঞ্চলে বহু মানুষ চিংড়ি চাষে এগিয়ে এসেছে।