নিজস্ব প্রতিবেদক
দ্য গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস দলটি একসময় ব্যাপক সুনাম অর্জন করে। নানা জায়গায় শো করে দলটি। অনেকদিন পর দলের ভেতর শুরু হয় কলহ। একদিন দলটি গ্রামে শো করতে যায়। সেখানে মৌলবাদের কালো থাবা এসে পড়ে। সার্কাস বন্ধ করার হুমকি আসে। সার্কাস দলে আগুন দেওয়া হয়। নিহতের ঘটনা ঘটে। বন্ধ হয়ে যায় সার্কাস। একটি সার্কাস দলকে কেন্দ্র করে এই ‘সার্কাস সার্কাস’ নাটকের দৃশ্যমানে চিত্তাকর্ষক সাবলীল অভিনয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এমন গল্প।
যশোর আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবের দশম দিন শনিবার সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে নাটকটি মঞ্চায়ন হয়। প্রাচ্যনাট প্রযোজিত নাটকটির নাট্যকার ও পরিচালক আজাদ আবুল কালাম। যশোরে মঞ্চায়নের মধ্যে সার্কাস সার্কাস নাটকটি ১০৬ তম মঞ্চায়ন হয়েছে। মূলত একটি সার্কাস দলকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে এই নাটক। এর মধ্যে দলের ভেতরে, বাইরে নানা সমস্যা দেখা যায়। অদক্ষ খেলোয়াড়, সদস্যদের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত দলটি। সমস্যা আরও ঘনীভূত হয় যখন স্থানীয় ধর্মীয় প্রভাবশালী নেতারা সার্কাস শো বন্ধ করার জন্য হুমকি দেয়। শুধু দলের বাইরে থেকে নয়, ভেতরেও কলহের সূত্রপাত হয়। ধর্মান্ধ মৌলবাদীরা ‘দ্য গ্রেট বেঙ্গল সার্কাস’-এ আগুন দেয়। লাশ পড়ে তিন খেলোয়াড়ের, ভস্মীভূত হয় সার্কাসের সব পশু। নাটকের শুরু থেকে শেষ অবধি একটি সার্কাস দলের জনপ্রিয়তা গড়ে উঠার সাথে ফুটে উঠে মৌলবাদের কালো থাবা বন্ধ হওয়ার নানা চিত্তাকর্ষক দৃশ্যও। সার্কাস সার্কাস নাটকের অভিনয় করেন, ‘আজাদ আবুল কালাম, শতাব্দী ওয়াদুদ, শাহেদ আলী, সানজিদা প্রীতি প্রমুখ।
নাট্যকার ও পরিচালক আজাদ আবুল কালাম বলেন, সার্কাস সার্কাস নাটকটি শততম পর্ব মঞ্চায়ন হয়েছে অনেক আগেই। নাটকটি আমাদের দলের একটি জনপ্রিয় নাটক। নাটকটি করে দর্শকের কাছে অনেক সাড়া পেয়েছি। মাঝে করোনার কারণে নাটকটি কিছুদিন মঞ্চায়ন হয়নি। দীর্ঘদিন পর সাংস্কৃতিক সংগঠনের জেলা মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্বাধীন জেলা যশোরে মঞ্চায়ন করতে পেরে অবশ্যই ভালো লাগছে।
মুরাদ হোসেন নামে একদর্শক জানান, আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব যশোরবাসীর জন্য অনেক বড় পাওয়া। যশোরে বসে এত সুন্দর মঞ্চ নাটক দেখতে পারা সুভাগ্যের। যে কথা আমরা বলতে পারি না; সেটা এসকল নাটকে উঠে আসছে।
আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব কমিটির সদস্য সচিব কামরুল হাসান বলেন, শিল্প-সংস্কৃতির রাজধানী হিসেবে যশোরকে তুলে ধরার লক্ষ্যে এই আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এই উৎসবে ঢাকার নয়টি এবং যশোর, মৌলভীবাজার ও ভারতের একটি করে মোট ১২টি নাট্যদল নাটক মঞ্চস্থ করবে। এরমধ্যে ১০টি নাটক ইতিমধ্যে মঞ্চস্থ হয়েছে। শুধু নাটক মঞ্চস্থই নয় নাটক বিষয় সেমিনারও করা হয়েছে। দেশের খ্যাতিমান ২৫ জন নাট্য অভিনেতা, নির্দেশক ও নাট্যকারকে সম্মাননা দেওয়া হবে।
গত ১২ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য প্রদীপ জ্বালিয়ে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী দিন থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় একটি করে প্রাঙ্গনেমোর ‘হাছন জানের রাজা’, পালাকার ‘উজানে মৃত্যু’ নাট্যম রেপার্টরী ‘কোথায় জলে মরাল চলে’, নাট্যকেন্দ্র ‘পুণ্যাহ’, স্টেইজ ওয়ান ‘শোধ’ মৌলভীবাজারের মনিপুরী থিয়েটার ‘কহে বীরাঙ্গনা’ যশোরের থিয়েটার ক্যানভাস ‘লালসালু’ মঞ্চায়ন হয়েছে। আজ রোববার সন্ধ্যায় ভারতের একমাত্র নাট্যদল শান্তিপুর সাংস্কৃতিক ‘অংশুপট উপাখ্যান’ ও সোমবার ‘জয়তুন বিবির পালা’ নাটকটি মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে ১২ দিনব্যাপী যশোর আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবের পর্দা নামবে।