নিজস্ব প্রতিবেদক
শুক্রবার চিত্রা নদীর তীরে বধ্যভূমিসংলগ্ন জেলা জজকোর্ট প্রাঙ্গণস্থ মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি-বিজড়িত বটবৃক্ষতলে বইপড়া ও উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবেশ অধ্যয়ন সপ্তাহে একটি বই পড়ি’র একটি নিয়মিত কার্যক্রম। সাধারণত একটি বই পাঠের পর স্থান, সময় এবং সংশ্লিষ্ট বইয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সে রকম উপযুক্ত স্থানে অনুষ্ঠিত হয় পাঠচক্রের প্রতিবেশ অধ্যয়ন। এবারের প্রসঙ্গ ছিল নড়াইল। এর ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার সপ্তাহে একটি বই পড়ি’র সাহিত্য পাঠচক্র ২০২৩ এর ১৭তম সাহিত্য আসর অনুষ্ঠিত হয় নড়াইলের চিত্রা রিসোর্টের সংলগ্ন চিত্রা নদীর তীরে। এদিন পাঠ্য ছিল বাংলা সাহিত্যের পঞ্চপা-বখ্যাত সাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসু রচিত কাব্যনাট্য ‘তপস্বী ও তরঙ্গিণী’।
এদিন সকালে যশোর শহর থেকে বাসযোগে পাঠচক্রের সদস্যরা এবং আলোক সহযাত্রীদের সমন্বয়ে একটি দল নড়াইল জজ কোর্ট প্রাঙ্গণে হাজির হন এবং পরিদর্শন করেন চিত্রা নদী ও জেলা জজকোর্ট সংলগ্ন ‘৭১ এর বধ্যভূমি। যেখানে মুক্তিযুদ্ধকালীন লঞ্চঘাটের পল্টুন ছিল। গণহত্যার পর লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হত, পাড়েও ফেলে রাখা হত অসংখ্য লাশ। জেলা জজ আদালতের ২৫ গজ দূরে ডাক অফিসের দ্বিতল বাড়ির পেছনে রয়েছে এই বধ্যভূমি যা পাকবাহিনী ও তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগী আলবদর-রাজাকারদের সৃষ্ট। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে অসংখ্য নারী-পুরুষকে ধরে এনে নির্যাতন চালাত পাকবাহিনী। নির্যাতন-ধর্ষণের পর হত্যা করে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হত তাদের, কারো কারো পেট ফেঁড়ে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হত। শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই সৌধ। পাশেই রয়েছে এখানে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বধ্যভূমি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া বটবৃক্ষ; জেলা আদালত এটি সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে চারপাশ বাঁধাইয়ের কাজ করছেন এবং দেয়াল জুড়ে গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধের টেরাকোটা স্থাপপনের উদ্যোগ নিচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সেই বটবৃক্ষ তলে হয় আলোচনা।
জেলা আদালতের কনফারেন্স কক্ষে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মুহম্মদ আকরাম হোসেনের সভাপতিত্বে এবং জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমাতুল মোর্শেদার পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে ফুটে উঠে নড়াইলের বিভিন্ন গণহত্যার চিত্র, পাকিস্তানী বাহিনী ও রাজাকাদের নির্মম নির্যাতন, ধর্ষণের তথ্যচিত্র। এসময় শিহরিত হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীসহ সকলেই। এসময় উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মামুনুর রশিদ কাঞ্চনের ছোটভাই।
মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক মুক্তিযুদ্ধের সময়কার লোমহর্ষক ঘটনা তুলে ধরেন এবং নিজের অভিজ্ঞতার কথা শোনান সকলকে। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন যুগ্ম জেলা ও দারয়া জজ মো. মোমিনুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক মোফাজ্জেল হোসেন এবং সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা শাহ্জাহান কবীর। সপ্তাহে একটি বই পড়ির সভাপতি মো: শাহ্জাহান কবীরের সভাপতিত্বে ও সমন্বয়ক কামরুজ্জামানের সঞ্চালনায় মূখ্য আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন যশোর সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোফাজ্জেল হোসেন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে শিক্ষার্থীদের বই পড়ায় উদ্বুদ্ধ করেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মুহম্মদ আকরাম হোসেন ও যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোমিনুল ইসলাম। আলোক সহযোগীদের মধ্যে আলোচনা করেন সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের রসায়নের সহকারী অধ্যাপক শাহাদাৎ হোসেন, ভূগোল বিভাগের প্রভাষক স্বরূপ কুমার দাস, জেলা সহকারী তথ্য কর্মকর্তা এলিন সাঈদুর রহমান, রুপালি ব্যাংক লিমিটেড দড়াটানা শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম, দৈনিক প্রথম আলোর যশোর জেলা প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম, জনতা ব্যাংক লিমিটেড জেস টাওয়ার শাখার সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার হুমায়ুন কবীর রাজু প্রমুখ।