জি.এম. হিরোন, (গৌরীঘোনা) কেশবপুর
কেশবপুরের বিভিন্ন সড়কের পাশে শত শত শিশু ও সিরিশ গাছ অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে মরে গেছে। আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে গাছগুলো মরে যাচ্ছে বলে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। প্রায় ১০ বছর ধরে এ গাছ মরতে থাকলেও মরা ও শুকনো গাছগুলো অপসারণে একমত হতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। এতে সরকার যেমন রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি মরা গাছের ডাল ভেঙে পড়ে বসতবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুতের তার, পথচারী ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এসব মরা গাছ একটু দমকা বাতাস এবং ঝড়-বৃষ্টিতে ভেঙে ও উপড়ে পড়ছে। মরা ও উপড়ে পড়া গাছ না কাটায় ঝুঁকির মধ্যে পথচারী ও যানবাহন চলাচল করে থাকে। মরা গাছগুলো অপসারণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
১৯৯৫ সালে গণসাহায্য সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি প্রকল্পের আওতায় কেশবপুর উপজেলার গৌরীঘোনা, সুফলাকাটি, মঙ্গলকোট, সাগরদাঁড়ি, ত্রিমোহিনী, বিদ্যানন্দকাটি, মজিদপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ সড়কের দুই পাশ দিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ রোড শিশু ও সিরিশ গাছের চারা রোপণ করে। এসব গাছ সড়কের দুই পাশে ছায়া ও সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি মাটির ক্ষয় রোধ করে সড়ক রক্ষা করে চলেছে। কিন্তু কালক্রমে সেই বড় আকৃতির বৃক্ষাদি নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মরে যাচ্ছে। পরিবেশ রক্ষাসহ সড়কের দুই পাশ টেকসই মজবুত রাখার ক্ষেত্রে এসব গাছ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হলেও শত শত গাছ বিভিন্ন রাস্তার পাশ থেকে এখন হারিয়ে গেছে। দমকা বাতাস-ঝড়-বৃষ্টিতে ভেঙে পড়ছে পথচারী-যানবাহনের উপর।
গাছ রোপণের সময় গণসাহায্য সংস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের ১৯৯৫ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এই সকল জায়গা ব্যবহারের চুক্তি হয়। গাছের উপকারভোগীদের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ ২৫ শতাংশ, সমিতির সদস্যবৃন্দ ৫০ শতাংশ এবং গণসাহায্য সংস্থা ২৫ শতাংশ ভোগ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গাছ রোপণের সময়ে রাস্তা কাচা থাকলেও ধীরে ধীরে সকল রাস্তা পাকা হওয়ায় গত পাঁচ বছর ধরে জেলা পরিষদ ওই গাছের মালিকানা দাবি করে আসছে। এ ঘটনায় গণসাহায্য সংস্থার তৎকালীন জেলা সমন্বয়কারী এসকেএম আব্দুল্লাহ যশোরের সহকারী জজ আদালতে ২০১২ সালে জেলা পরিষদের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। যেটা এখনও চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। যার ফলে ওই গাছগুলি কেউ মারতে পারছে না। চুকনগর খেকে কলাগাছি সড়কে চলাচলকারী ভ্যানচালক রাজু গোলদার জানান, মরা গাছগুলো ঝড়ে অথবা হালকা বাতাসেই ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকায় আতঙ্ক নিয়ে গাড়ি চালাই। দ্রুত এসব গাছ কেটে ফেলা উচিত। সন্ন্যাসগাছা গ্রামের আরিফ হোসেন বলেন, রাস্তার পাশে এসব মরা গাছ প্রায়ই পথচারীদের ওপর ভেঙে পড়ছে। প্রাণ হাতে নিয়ে এসব রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। উপজেলার গৌরীঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, রাস্তায় লাগানো মরা গাছগুলো অপসারণ করার জন্য আমি যশোর জেলা পরিষদ ও কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছি। তিনি আরো বলেন, গত ঈদুল ফিতরের দিন ভরত ভায়না গ্রামের আব্দুল রহিম মোড়ল সড়কের শুকানো গাছের ডাল ভেঙ্গে আহত হয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে হয়। কেশবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বিথি জানান, আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের কারণে ১০-১২ বছর বয়স হলেই এ অঞ্চলের রোড শিশু গাছের শেকড় পচে মারা যাচ্ছে।